মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৯১২
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯১২। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, তবুকের যুদ্ধের সময় যখন লোকজন ভীষণ ক্ষুধার্ত হইয়া পড়িল, তখন ওমর (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ্। লোকজনের কাছে এখন যেই পরিমাণ অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য অবশিষ্ট আছে, সেইগুলি আনাইয়া নিন এবং উহার উপর আল্লাহর কাছে বরকতের জন্য দোআ করুন। তিনি বলিলেন: হ্যাঁ, তাহাই করা হইবে। তখন তিনি একখানা চামড়ার দস্তরখান আনাইলেন। উহা বিছান হইল। অতঃপর তিনি তাহাদের অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্যগুলি আনিতে বলিলেন। ইহাতে কোন ব্যক্তি আনিল এক মুষ্টি বুট, আর কেহ আনিল এক মুষ্টি খেজুর, আর কেহ আনিল কিছু রুটির টুকরা। অবশেষে সবকিছু মিলাইয়া দস্তরখানের উপর সামান্য পরিমাণ বস্তুই একত্রিত হইল। তখন রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহার মধ্যে বরকতের জন্য দোআ করিলেন। অতঃপর বলিলেন, তোমাদের (যার যাহা খুশী) নিজ নিজ পাত্রগুলিতে লইয়া লও। সুতরাং তাহারা আপন আপন পাত্রগুলিতে লইতে লাগিল। এমন কি সেনাদলের মধ্যে এমন কোন পাত্র রহিল না যাহা তাহারা ভর্তি করিয়া নিল না। আবু হোরায়রা বলেন, লোকেরা সকলে পরিতৃপ্ত হইয়া খাইল এবং কিছু খাদ্য অতিরিক্তও রহিয়া গেল। তখন রাসূলুল্লাহ্, ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই। আর নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল। আর যেই ব্যক্তি এই দুইটি কথার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখিয়া আল্লাহর সহিত মিলিত হইবে, (অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করিবে, ) কোন কিছুই তাহাকে বেহেশতে প্রবেশ হইতে বাধা দিতে পারিবে না। —মুসলিম
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ غزوةِ تَبُوك أصابَ النَّاس مجاعةٌ فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُهُمْ بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ ثُمَّ ادْعُ اللَّهَ لَهُمْ عَلَيْهًا بِالْبَرَكَةِ فَقَالَ: نعم قَالَ فَدَعَا بِنِطَعٍ فَبُسِطَ ثُمَّ دَعَا بِفَضْلِ أَزْوَادِهِمْ فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجِيءُ بِكَفِّ ذُرَةٍ وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكَفِّ تَمْرٍ وَيَجِيءُ الْآخَرُ بِكِسْرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى النِّطَعِ شَيْءٌ يَسِيرٌ فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَرَكَةِ ثُمَّ قَالَ خُذُوا فِي أوعيتكم فَأَخَذُوا فِي أَوْعِيَتِهِمْ حَتَّى مَا تَرَكُوا فِي الْعَسْكَر وعَاء إِلا ملؤوه قَالَ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا وَفَضَلَتْ فَضْلَةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ لَا يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرُ شاكٍّ فيحجبَ عَن الْجنَّة» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি মু'জিযা বর্ণিত হয়েছে। মু'জিযাটি প্রকাশ পেয়েছিল তাবুক যুদ্ধের সময়। এ যুদ্ধটি হয়েছিল হিজরী ৯ম সনে। তখন প্রচণ্ড অভাব-অনটন চলছিল। সাহাবায়ে কেরাম অনাহারে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উট জবাই করার অনুমতি চাইলেন, যাতে তার গোশত খেয়ে তারা ক্ষুধা নিবারণ করতে পারেন।
উট ছিল তাদের বাহন। সফরকালে বাহনের প্রয়োজন কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার এ সফর ছিলও অনেক দূরের। ক্ষুধা নিবারণের জন্য উট যবাহ করতে থাকলে কঠিন বাহন-সংকটে পড়ার আশঙ্কা ছিল। হযরত উমর রাযি. সে আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি পরামর্শ দিলেন, যার কাছে যে খাদ্য আছে তা সব একত্র করার হুকুম দেওয়া হোক। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করুন যাতে আল্লাহ তা'আলা সেই সামান্য খাদ্যে বরকত দান করেন। তাই হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আয় সে সামান্য খাদ্যে এত বরকত হল যে, বাহিনীর প্রত্যেকে আপন আপন পাত্র ভরে ফেলল এবং সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেল, তারপরও কিছু খাদ্য অবশিষ্ট থেকে গেল।
প্রকাশ থাকে যে, তাবুকের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ত্রিশ হাজার। একটি চামড়ার দস্তরখানে সাহাবায়ে কেরাম তাদের কাছে বেঁচে থাকা যে সামান্য খাদ্য জমা করেছিলেন, কেউ একমুঠো ভুট্টা, কেউ রুটির সামান্য টুকরা, তার সর্বমোট পরিমাণ কতটুকুই বা ছিল? অথচ আল্লাহু আকবার, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আর বরকতে ত্রিশ হাজার সদস্যের সেই বিশাল বাহিনীর সকলের ক্ষুধা নিবারণ হয়ে যায়। তারপরও কিছু খাবার অবশিষ্ট থেকে যায়। এটাই মু'জিযা- অলৌকিক ব্যাপার।
মু'জিযা দ্বারা নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের সত্যতা শুরু থেকেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই মু'জিযার প্রকাশ দ্বারা সে প্রমাণ তাজা করে তোলা হচ্ছিল। তাবুকের যুদ্ধকালীন এ মু'জিযা দ্বারা সকলের সামনে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি সত্যনবী, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই তিনি বলে ওঠেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই এবং আমি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল।
তারপর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শাহাদাত ও সাক্ষ্যের ফযীলত বর্ণনা করেন যে, কেউ যদি আন্তরিক বিশ্বাসসহ এ সাক্ষ্যদান করে, তারপর এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয় আর শাহাদাতের এ কালেমা নিয়ে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে সাক্ষাত করে, তবে জান্নাতে যেতে তার কোনও বাধা থাকবে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবীগণের মু'জিযা সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা ফরয।
খ. নিজের তুলনায় নিম্নস্তরের কোনও ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত পরামর্শ দিলে তা গ্রহণ করা চাই, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর রাযি.-এর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন।
গ. আন্তরিক বিশ্বাসে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠের সঙ্গে মৃত্যুবরণ দ্বারা জান্নাত লাভ নিশ্চিত হয়ে যায়। তাই এ কালেমাসহ যাতে মৃত্যু হয়, প্রত্যেকের সে আশা রাখা উচিত এবং জীবনভর এ কালেমা পাঠ করা ও এ কালেমার দাবি অনুযায়ী চলতে সচেষ্ট থাকা উচিত।
উট ছিল তাদের বাহন। সফরকালে বাহনের প্রয়োজন কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার এ সফর ছিলও অনেক দূরের। ক্ষুধা নিবারণের জন্য উট যবাহ করতে থাকলে কঠিন বাহন-সংকটে পড়ার আশঙ্কা ছিল। হযরত উমর রাযি. সে আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি পরামর্শ দিলেন, যার কাছে যে খাদ্য আছে তা সব একত্র করার হুকুম দেওয়া হোক। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করুন যাতে আল্লাহ তা'আলা সেই সামান্য খাদ্যে বরকত দান করেন। তাই হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আয় সে সামান্য খাদ্যে এত বরকত হল যে, বাহিনীর প্রত্যেকে আপন আপন পাত্র ভরে ফেলল এবং সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেল, তারপরও কিছু খাদ্য অবশিষ্ট থেকে গেল।
প্রকাশ থাকে যে, তাবুকের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ত্রিশ হাজার। একটি চামড়ার দস্তরখানে সাহাবায়ে কেরাম তাদের কাছে বেঁচে থাকা যে সামান্য খাদ্য জমা করেছিলেন, কেউ একমুঠো ভুট্টা, কেউ রুটির সামান্য টুকরা, তার সর্বমোট পরিমাণ কতটুকুই বা ছিল? অথচ আল্লাহু আকবার, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আর বরকতে ত্রিশ হাজার সদস্যের সেই বিশাল বাহিনীর সকলের ক্ষুধা নিবারণ হয়ে যায়। তারপরও কিছু খাবার অবশিষ্ট থেকে যায়। এটাই মু'জিযা- অলৌকিক ব্যাপার।
মু'জিযা দ্বারা নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের সত্যতা শুরু থেকেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই মু'জিযার প্রকাশ দ্বারা সে প্রমাণ তাজা করে তোলা হচ্ছিল। তাবুকের যুদ্ধকালীন এ মু'জিযা দ্বারা সকলের সামনে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি সত্যনবী, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই তিনি বলে ওঠেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই এবং আমি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল।
তারপর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শাহাদাত ও সাক্ষ্যের ফযীলত বর্ণনা করেন যে, কেউ যদি আন্তরিক বিশ্বাসসহ এ সাক্ষ্যদান করে, তারপর এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয় আর শাহাদাতের এ কালেমা নিয়ে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে সাক্ষাত করে, তবে জান্নাতে যেতে তার কোনও বাধা থাকবে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবীগণের মু'জিযা সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা ফরয।
খ. নিজের তুলনায় নিম্নস্তরের কোনও ব্যক্তি যুক্তিসঙ্গত পরামর্শ দিলে তা গ্রহণ করা চাই, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর রাযি.-এর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন।
গ. আন্তরিক বিশ্বাসে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠের সঙ্গে মৃত্যুবরণ দ্বারা জান্নাত লাভ নিশ্চিত হয়ে যায়। তাই এ কালেমাসহ যাতে মৃত্যু হয়, প্রত্যেকের সে আশা রাখা উচিত এবং জীবনভর এ কালেমা পাঠ করা ও এ কালেমার দাবি অনুযায়ী চলতে সচেষ্ট থাকা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)