মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৯১১
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯১১। হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সম্মুখে ভাষণ দিতে গিয়া বলিলেন: তোমরা আজ সন্ধ্যা এবং রাত্রিতে (লাগাতার) চলিতে থাকিবে। আর আল্লাহ্ চাহেন তো আগামীকাল পানির কাছে পৌঁছিয়া যাইবে। অতঃপর লোকেরা এমনভাবে চলিতে থাকিল যে, কেহ কাহারও প্রতি ফিরিয়া চাহিত না। (অর্থাৎ, সকলে দ্রুত পথ চলিতে লাগিল।) আবু কাতাদাহ্ বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যারাত হইতে চলিতে চলিতে রাত্রি যখন মধ্যাহ্নে পৌঁছিল, তখন তিনি রাস্তা হইতে একদিকে সরিয়া পড়িলেন এবং বিশ্রাম গ্রহণ করিলেন। অতঃপর বলিলেন, তোমরা (ফজর) নামাযের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখিবে। (ইহার পর সকলে ঘুমাইয়া পড়িলেন এবং সকলের আগে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই জাগ্রত হইলেন, অথচ তখন সূর্যের তাপ আসিয়া তাহার পৃষ্ঠে পড়িতেছিল।অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমরা নিজ নিজ সওয়ারীতে আরোহণ কর। সুতরাং আমরা আরোহণ করিলাম এবং সূর্য খুব উপরে উঠা পর্যন্ত সফর করিয়া তিনি এক জায়গায় অবতরণ করিলেন। অতঃপর তিনি ওযুর জন্য পানির পাত্র চাহিলেন, যাহা আমার সাথে ছিল। উহাতে পানিও ছিল খুব সামান্য পরিমাণ। তিনি উহা হইতে একান্ত হালকাভাবে ওযু করিলেন।
আবু কাতাদাহ্ বলেন, তাঁহার ওযূর পরও পাত্রে সামান্য পরিমাণ পানি অবশিষ্ট রহিয়া গেল। ইহার পর তিনি বলিলেন, তোমার পাত্রের পানিগুলি আমাদের জন্য ভালভাবে সংরক্ষণ করিয়া রাখ। কেননা, অচিরেই ইহা হইতে একটি বড় ধরনের ঘটনা প্রকাশ পাইবে। অতঃপর হযরত বেলাল নামাযের জন্য আযান দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকআত (সুন্নত) আদায় করিলেন, তারপর ফজরের (ফরয) নামায আদায় করিলেন এবং নিজেও সওয়ারীতে আরোহণ করিলেন, আর আমরাও তাঁহার সাথে রওয়ানা হইলাম। অবশেষে সূর্য যখন অনেক উপরে উঠিল এবং প্রতিটি জিনিস সূর্যের প্রচণ্ড তাপে অত্যধিক গরম হইয়া গেল, তখন আমরা ঐ কাফেলার লোকদের নিকট আসিয়া পৌঁছিলাম (যাহারা আমাদের পূর্বেই রওয়ানা হইয়া আসিয়াছে)। তাহারা বলিয়া উঠিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। প্রচণ্ড গরমে এবং পিপাসার তাড়নায় আমরা ধ্বংস হইয়া যাইতেছি। তিনি বলিলেন, তোমাদের উপর ধ্বংস আসিবে না। এই বলিয়া তিনি পানির পাত্রটি আনাইলেন এবং পানি ঢালিতে লাগিলেন, আর আবু কাতাদাহ লোকদিগকে পানি পান করাইতেছিলেন। লোকেরা যখন পারে পানি দেখিতে পাইল, তখন তাহারা আর দেরী না করিয়া একসাথে সকলে পানির জন্য ভীড় জমাইয়া ফেলিল। তাহাদের অবস্থা দেখিয়া রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তোমরা উত্তম ব্যবহার কর।(অর্থাৎ, ভীড় জমাইয়া একে অন্যকে কষ্ট দিও না।) তোমরা সকলেই এই পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত হইবে। আবু কাতাদাহ্ বলেন, তাহারা অনুরূপ করিল। (অর্থাৎ, সুশৃংখল হইয়া গেল।) রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি ঢালিতে রহিলেন, আর আমি পান করাইতে লাগিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ও রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত পানি পান করা হইতে কেহই বাকী রহিল না। অতঃপর তিনি পানি ঢালিয়া আমাকে বলিলেন, এইবার তুমি পান কর। আমি বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি পান না করা পর্যন্ত আমি পান করিব না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলিলেন, লোকদেরকে যে পানীয় পান করায়, সে হয় সর্বশেষে। আবু কাতাদাহ্ বলেন, সুতরাং আমি পান করিলাম। পরে তিনি পান করিলেন। আবু কাতাদাহ বলেন, অতঃপর লোকেরা তৃপ্তি সহকারে আরামের সহিত পানির স্থানে আসিয়া পৌঁছিল। — মুসলিম। সহীহ মুসলিমে অনুরূপই রহিয়াছে এবং হুমায়দীর গ্রন্থে ও জামেউল উসুলেও এইরূপই রহিয়াছে। মাসাবীহ গ্রন্থে اخرهم শব্দের পর شربا শব্দটি বর্ধিত রহিয়াছে। (অর্থাৎ, সর্বশেষ পানকারী।)
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَن أبي قتادةَ قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّكُمْ تَسِيرُونَ عَشِّيَتَكُمْ وَلَيْلَتَكُمْ وَتَأْتُونَ الْمَاءَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ غَدًا فَانْطَلَقَ النَّاسُ لَا يَلْوِي أَحَدٌ عَلَى أَحَدٍ قَالَ أَبُو قَتَادَةَ فَبَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسِيرُ حَتَّى ابْهَارَّ اللَّيْلُ فَمَالَ عَنِ الطَّرِيقِ فَوَضَعَ رَأْسَهُ ثُمَّ قَالَ احْفَظُوا عَلَيْنَا صَلَاتَنَا فَكَانَ أَوَّلَ مَنِ اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالشَّمْسُ فِي ظَهْرِهِ ثُمَّ قَالَ ارْكَبُوا فَرَكِبْنَا فَسِرْنَا حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَتِ الشَّمْسُ نَزَلَ ثُمَّ دَعَا بِمِيضَأَةٍ كَانَتْ معي فِيهَا شيءٌ من مَاء قَالَ فَتَوَضَّأَ مِنْهَا وُضُوءًا دُونَ وُضُوءٍ قَالَ وَبَقِيَ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ مَاءٍ ثُمَّ قَالَ احْفَظْ عَلَيْنَا مِيضَأَتَكَ فَسَيَكُونُ لَهَا نَبَأٌ ثُمَّ أَذَّنَ بِلَالٌ بِالصَّلَاةِ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ صَلَّى الْغَدَاةَ وَرَكِبَ وَرَكِبْنَا مَعَهُ فَانْتَهَيْنَا إِلَى النَّاسِ حِينَ امْتَدَّ النَّهَارُ وَحَمِيَ كُلُّ شَيْءٌ وَهُمْ يَقُولُونَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْنَا وَعَطِشْنَا فَقَالَ لَا هُلْكَ عَلَيْكُمْ وَدَعَا بِالْمِيضَأَةِ فَجَعَلَ يَصُبُّ وَأَبُو قَتَادَةَ يَسْقِيهِمْ فَلَمْ يَعْدُ أَنْ رَأَى النَّاسُ مَاءً فِي الْمِيضَأَةِ تَكَابُّوا عَلَيْهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسِنُوا الْمَلَأَ كُلُّكُمْ سَيُرْوَى قَالَ فَفَعَلُوا فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُبُّ وَأَسْقِيهِمْ حَتَّى مَا بَقِيَ غَيْرِي وَغَيْرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ صَبَّ فَقَالَ لِيَ اشْرَبْ فَقُلْتُ لَا أَشْرَبُ حَتَّى تَشْرَبَ يَا رَسُولَ الله قَالَ إِن ساقي الْقَوْم آخِرهم شربا قَالَ فَشَرِبْتُ وَشَرِبَ قَالَ فَأَتَى النَّاسُ الْمَاءَ جَامِّينَ رِوَاءً. رَوَاهُ مُسْلِمٌ هَكَذَا فِي صَحِيحِهِ وَكَذَا فِي كتاب الْحميدِي وجامع الْأُصُولِ وَزَادَ فِي الْمَصَابِيحِ بَعْدَ قَوْلِهِ آخِرُهُمْ لَفْظَة شربا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটা একটা ইসলামী আদব যে, যে ব্যক্তি পানি, শরবত, দুধ, চা ইত্যাদি পরিবেশন করবে, সে নিজে পান করবে সকলের শেষে। এমনিভাবে খাদ্যদ্রব্য, ফল-ফলাদি বিতরণেও এ আদব অনুসরণীয়। অর্থাৎ বিতরণকারী নিজে খাবে সবার পরে। ইবনু রাসলান রহ. বলেন, এ হাদীছ দ্বারা ইশারা পাওয়া যায়, যে ব্যক্তি উম্মতের কোনও বিষয়ে দায়িত্বশীল হবে, তার কর্তব্য হবে আগে মানুষের উপকার-অপকারের দিকে লক্ষ রাখা। অর্থাৎ কিসে তাদের উপকার হয় এবং কীভাবে তাদের অনিষ্ট দূর করা যায়, সেটাই হবে তার প্রথম লক্ষ্যবস্তু। সে নিজ স্বার্থের উপর অন্যের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে। নিজ সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করবে তাদের পরে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মজলিসে যে ব্যক্তি পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন করবে, সে নিজে পান করবে সকলের পর।

খ. যে-কোনও বিষয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রথমে অন্যদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে। নিজ স্বার্থ চিন্তা করবে সবার পরে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান