আশ-শামাঈলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ- ইমাম তিরমিযী রহঃ

শামাইলে নববীর পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ১৪৬
শামাইলে নববীর পরিচ্ছেদসমূহ
রাসূলুল্লাহ্ -এর রুটির বিবরণ
১৪৬।আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান(রাহঃ).... সাহল ইবনে সা’দ (রাযিঃ) হতে বণী্ত।তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাসূলুল্লাহ্ কি ’আন্-নাকী’ অর্থাৎ ময়দার রুটি আহার করতেন? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁর ওফাত পর্যন্ত ময়দা দেখেননি। তারপর তাঁকে বলা হলো, রাসূলুল্লাহ্ -এর যমানায় আপনাদের কি চালুনি ছিল? তিনি বললেন : আমাদের কোন চালুনি ছিল না। তখন তাঁকে (আবার) জিজ্ঞাসা করা হল, তবে আপনারা যবের রুটি কিভাবে ব্যবহার করতেন? তিনি বললেনঃ আমরা তাতে ফুঁ দিতাম, যাতে অখাদ্য কিছু থাকলে যেন উড়ে যায়। এরপর আমরা খামির করে নিতাম।
أبواب الشمائل المحمدية والخصائل المصطفوية
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ : حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الْمَجِيدِ الْحَنَفِيُّ ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو حَازِمٍ ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ، أَنَّهُ قِيلَ لَهُ : أَكَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّقِيَّ ؟ - يَعْنِي الْحُوَّارَى - فَقَالَ سَهْلٌ : مَا رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّقِيَّ حَتَّى لَقِيَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ تَعَالَى ، فَقِيلَ لَهُ : هَلْ كَانَتْ لَكُمْ مَنَاخِلُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ قَالَ : مَا كَانَتْ لَنَا مَنَاخِلُ. قِيلَ : كَيْفَ كُنْتُمْ تَصْنَعُونَ بِالشَّعِيرِ ؟ قَالَ : كُنَّا نَنْفُخُهُ فَيَطِيرُ مِنْهُ مَا طَارَ ثُمَّ نَعْجِنُهُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে হযরত সাহল ইবন সা'দ রাযি. আমাদের জানাচ্ছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত লাভের পর থেকে ওফাত পর্যন্ত কখনও মিহি আটার রুটি দেখেননি। নবুওয়াত লাভের আগে হয়তো দেখে থাকবেন। কেননা তখন তিনি একাধিকবার শাম এলাকায় সফর করেছেন। তখন শাম ছিল রোমানদের অধীন। তারা মিহি আটার রুটি খাওয়াতে অভ্যস্ত ছিল। কাজেই ওই এলাকায় যখন তিনি একাধিকবার গিয়েছেন, তখন ওখানে প্রচলিত খাবার-দাবারও তাঁর চোখে পড়ারই কথা।

হযরত সাহল রাযি. আরও বলছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত লাভের পর থেকে কখনও চালনি দেখেননি। তার মানে তিনি যে আটার রুটি খেতেন তা কখনও চালা হতো না। সাধারণত যবের রুটিই খেতেন। যব ভাঙানোর পর তার দানা গমের আটার মতো মিহি হয় না। সঙ্গে মোটা মোটা ভূসি থেকে যায়। ভুসিসহ সে আটা খাওয়া অনেক কঠিন। তাই প্রশ্ন জাগে, যদি না-ই চালা হয় তবে ভুসিসহ যবের আটা কিভাবে খাওয়া সম্ভব হতো? হযরত সাহল রাযি.-কে সে প্রশ্ন করাও হল। তিনি উত্তরে বললেন-
(আমরা তা পিষতাম, তারপর ফুঁ দিতাম। তাতে যা উড়ে যাওয়ার তা উড়ে যেত। তারপর যা বাকি থাকত তা পানিতে মিশিয়ে খেতাম)। বোঝাই যাচ্ছে চালনি দ্বারা চাললে যেমন সবটা ভূসি আলাদা হয়ে যায়, ফুঁ দেওয়ার দ্বারা তা কখনওই হতো না। আটার সঙ্গে অনেক ভুসি থেকেই যেত। সেই ভুসিযুক্ত যবের আটাই তাঁরা খেতেন। আজ কেউ তা খাবে না। খেলে তা হজমও হবে না। কিন্তু তাঁদের হজম হতো। তাঁরা কষ্টসহিষ্ণুতায় অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁদের পক্ষে এসব সম্ভব ছিল। সম্ভব ছিল বলেই যে-কোনও পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারতেন। অতি অল্প সময়ের ভেতর রোম, পারস্য, আফ্রিকা, স্পেন জয় করে ফেলার পেছনে সন্দেহ নেই এ কষ্টসহিষ্ণুতারও একটা ভূমিকা ছিল। আজ যে আমাদের দ্বারা তেমন কিছুই হয় না, বিলাসপ্রিয়তাও তার একটা কারণ বৈকি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

পানাহারে কষ্টসহিষ্ণুতা ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের শান। আমাদেরও তা রপ্ত করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান