আশ-শামাঈলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ- ইমাম তিরমিযী রহঃ

শামাইলে নববীর পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ১৪৮
শামাইলে নববীর পরিচ্ছেদসমূহ
রাসূলুল্লাহ্ -এর রুটির বিবরণ
১৪৮।আহমদ ইবন মানী’ (রাহঃ)... মাসরূক (রাহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ’আয়িশা (রাযিঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে আহারের জন্য ডাকলেন এবং বললেন : আমি কখনো তৃপ্তি সহকারে আহার করিনি। তিনি বলেন, আমি বললাম, কেন আপনি কাঁদেন? তিনি বললেন : তখন আমার মনে পড়ে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর ঐ অবস্থার কথা যে অবস্থায় তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন। আল্লাহ্র কসম! তিনি কোন দিনই দুইবার তৃপ্তি সহকারে রুটি-গোশত আহার করেননি।
أبواب الشمائل المحمدية والخصائل المصطفوية
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ قَالَ : حَدَّثَنَا عَبَّادُ بْنُ عَبَّادٍ الْمُهَلَّبِيُّ ، عَنْ مُجَالِدٍ ، عَنِ الشَّعْبِيِّ ، عَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ : دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ ، فَدَعَتْ لِي بِطَعَامٍ وَقَالَتْ : مَا أَشْبَعُ مِنْ طَعَامٍ فَأَشَاءُ أَنْ أَبْكِيَ إِلَّا بَكِيتُ . قَالَ : قُلْتُ لِمَ ؟ قَالَتْ : أَذْكُرُ الْحَالَ الَّتِي فَارَقَ عَلَيْهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدُّنْيَا ، وَاللَّهِ مَا شَبِعَ مِنْ خُبْزٍ وَلَحْمٍ مَرَّتَيْنِ فِي يَوْمٍ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির সঙ্গে অপর একটি বর্ণনাকে সাংঘর্ষিক মনে হয়। তাতে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারবর্গকে এক বছরের খাবার একসঙ্গে দিয়ে দিতেন। সে হিসেবে তো তাদের উপোস থাকার কথা নয়। অথচ এ হাদীছে বলা হয়েছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত পর্যন্ত কখনও পরপর দু'দিন যবের রুটিও পেট ভরে খেতে পাননি?

প্রকৃতপক্ষে উভয়ের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। কেননা বনূ নাযীর ও খায়বারের সম্পত্তি হাতে আসার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারবর্গের এক বছরের খাবার দিয়ে দিতেন বটে, কিন্তু তা যে এক বছর জমা থাকত এমন নয়। কেননা যখনই কোনও মেহমান আসত কিংবা অন্য কোনও জরুরত দেখা দিত, তখন তা থেকেই খরচ করতেন। আর মেহমান তো নিয়মিতই তাঁর কাছে আসত। বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধিবর্গ দলে দলেই তাঁর কাছে আসতে থাকত। তাদেরকে খাওয়ানো ছাড়াও বিদায়কালে তাদের পাথেয়ও দিয়ে দিতেন। তাতে দেখা যেত এক বছরের খাবার অল্প দিনেই শেষ হয়ে যেত। আর সে কারণেই তাদেরকে প্রায়ই অনাহারে দিন কাটাতে হতো।

বস্তুত তাঁর এ কৃচ্ছতা ছিল ইচ্ছাজনিত। আল্লাহ তা'আলা তো তাঁকে এই এখতিয়ার দিয়েওছিলেন যে, তিনি চাইলে মক্কার পাহাড়গুলোকে তাঁর জন্য সোনায় পরিণত করে দেওয়া হবে এবং তিনি যখন যেখানে যাবেন তা তার সঙ্গে চলতে থাকবে। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। দারিদ্র্যকেই বেছে নিয়েছেন। তারপরও যখন যা হাতে আসত তাতে অন্যদের প্রাধান্য দিতেন।

তাঁর এ কর্মপন্থার মূল কারণ ছিল দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তি। তাঁর চোখে দুনিয়া ছিল অতি তুচ্ছ। দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় আসবাব-উপকরণ তাঁর কাছে এমনকিছু মূল্যবান ছিল না, যার আকাঙ্ক্ষা করা যেতে পারে। এ জীবনপদ্ধতি দ্বারা তিনি উম্মতকেও দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত থাকার উৎসাহ যুগিয়েছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. অভাব-অনটনে কাতর হতে নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো অভাবের জীবনই বেছে নিয়েছিলেন।

খ. আমরা যে নিয়মিত দু'বেলা খাবার পাচ্ছি, সেজন্য প্রাণভরে শোকর আদায় করা উচিত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গ অনাহারের কত কষ্টই না সহ্য করেছেন!
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)