রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং:
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৪। ওযরের কারণে আমল করতে না পারলেও নিয়তের কারণে আমলের ছওয়াব লাভ হয়:

হযরত জাবির ইবন আব্দুল্লাহ আনসারী রাযি. বলেন, আমরা এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে ছিলাম। এসময় তিনি ইরশাদ করেন, মদীনায় একদল লোক রয়ে গেছে। তোমরা যেকোনও পথেই চল এবং যেকোনও উপত্যকাই অতিক্রম কর, তাতে তারা তোমাদের সংগে আছে। রোগ তাদেরকে আটকে রেখেছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, প্রতিদানে তারা তোমাদের অংশীদার হবে - মুসলিম। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৯১১)
এ হাদীছটি ইমাম বুখারী হযরত আনাস রাযিঃ-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে, তিনি বলেন, আমরা তাবুক যুদ্ধ থেকে নবী (ﷺ)-এর সংগে ফিরছিলাম। তখন তিনি ইরশাদ করেন, মদীনায় একদল লোক আমাদের পেছনে রয়ে গেছে। আমরা যে-কোনও পাহাড়ী পথ ও উপত্যকা অতিক্রম করি না কেন, তাতে তারা আমাদের সংগে আছে। ওযর তাদেরকে আটকে রেখেছে। (বুখারী হাদীস নং ২৮৩৮)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
4 - وعن أبي عبدِ اللهِ جابر بن عبدِ اللهِ الأنصاريِّ رَضي اللهُ عنهما، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - في غَزَاةٍ، فَقالَ: «إِنَّ بالمدِينَةِ لَرِجَالًا ما سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِيًا، إلاَّ كَانُوا مَعَكمْ حَبَسَهُمُ الْمَرَضُ». وَفي روَايَة: «إلاَّ شَرَكُوكُمْ في الأجْرِ». رواهُ مسلمٌ. (1)
ورواهُ البخاريُّ عن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: رَجَعْنَا مِنْ غَزْوَةِ تَبُوكَ مَعَ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فقال: «إنَّ أقْوامًا خَلْفَنَا بالْمَدِينَةِ مَا سَلَكْنَا شِعْبًا (2) وَلاَ وَاديًا، إلاّ وَهُمْ مَعَنَا؛ حَبَسَهُمُ العُذْرُ».

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিও সহীহ নিয়তের ফযীলত ও মাহাত্ম্য ব্যক্ত করে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছটি বলেছিলেন তাবুকের যুদ্ধ থেকে ফেরার সময়। এ যুদ্ধের সফর ছিল অত্যন্ত কঠিন। একে তো পথের দূরত্ব, তদুপরি প্রচণ্ড গরম। শারীরিক এই কষ্টের সাথে ছিল প্রচণ্ড মানসিক ত্যাগও। কেননা যুদ্ধটি হয়েছিল খেজুর পাকার মৌসুমে। সারা বছরের খাদ্যের ব্যবস্থা ও অন্যান্য ব্যয়নির্বাহ সাধারণত খেজুর দ্বারাই হত। গাছের সেই পাকা খেজুর রেখে যুদ্ধাভিযানে যাওয়াটা কত বড়ই না ত্যাগের ব্যাপার ছিল! যুদ্ধও ছিল রোমানদের বিরুদ্ধে, যারা ছিল সেকালের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি। এরকম শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়া প্রাণ নিয়ে খেলার নামান্তর। এর জন্য অনেক বড় হিম্মতের দরকার। কিন্তু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উৎসর্গিতপ্রাণ সাহাবীগণ সবকিছু উপেক্ষা করে সেই যুদ্ধে রওয়ানা হয়ে গিয়েছিলেন। এটা যে কতবড় ছওয়াব ও পুণ্যের সফর ছিল তা বলাই বাহুল্য। যারা এ সফরে শরীক ছিলেন, হাদীছের বর্ণনামতে তারা তো সে ছওয়াবের অধিকারী ছিলেনই, কিন্তু যারা ওযরবশত তাতে শরীক হতে পারেননি, তারা কি সেই ছওয়াব থেকে বঞ্চিত থাকবেন? হাদীছ জানাচ্ছে, না, তারা বঞ্চিত থাকবেন না; বরং নিয়তের কারণে তারাও যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মত ছওয়াবের অধিকারী হবেন।
হাদীছের সারকথা এই যে, মানুষ যদি কোনও সৎকর্মের নিয়ত করে কিন্তু কোনও ওযরের কারণে তা সম্পন্ন করতে সক্ষম না হয়, তবে নিয়তের কারণে সেই সৎকর্ম করার ছওয়াব সে পেয়ে যাবে। যেমন কারও মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায পড়ার নিয়ত আছে, কিন্তু অসুস্থতা বা অন্য কোনও ওযরবশত সে যেতে পারল না, এ অবস্থায় একাকী নামায পড়া সত্ত্বেও সে জামাতে নামায পড়ার ছওয়াব পাবে। এক হাদীছে এর দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে এভাবে যে, এক ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা অর্থ- সম্পদ দিয়েছেন। সে তার অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে। অপর এক ব্যক্তি গরীব। সে মনে মনে বলে, আমার যদি অর্থ-সম্পদ থাকত তবে অমুক ব্যক্তি যা-কিছু করে আমিও তাই করতাম। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। সুতরাং তারা উভয়ে প্রতিদানে সমান গণ্য হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. প্রত্যেকের উচিত সর্বাবস্থায় সৎকাজের নিয়ত রাখা।
খ. যদি কখনও কোনও সৎকাজের সময় উপস্থিত হয় বা কোনও নেককাজের মৌসুম দেখা দেয়, আর তখন কোনও ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে বা তার কোনও দেয়, তখন তার এই ভেবে হতাশ হওয়া উচিত নয় যে, আহা! আমি ওই কাজ করতে পারলাম না, ফলে আমি ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। বরং মনে মনে এই নিয়ত রাখা উচিত যে, ওযর না থাকলে আমি এই আমল অবশ্যই করতাম। এবং এখনও যদি আমার এই ওযর দূর হয়ে যায়, তবে অবিলম্বেই আমি এই নেককাজ করব। ব্যস এই নিয়তের দ্বারা সে সেই কাজের ছওয়াব পেয়ে যাবে।
গ. ছওয়াবের জন্য নিয়ত জরুরি। সুতরাং অসুস্থতাকালে আমলের ভাবনামুক্ত ও নিয়তবিহীন অবস্থায় কাটানো উচিত নয়। আমল করার নিয়ত থাকলেই তা করার লাভ হবে, যদিও অসুস্থতার কারণে তা করতে সক্ষম না হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)