মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

৫. কুরআন সুন্নাহ্‌কে আকড়ে ধরা

হাদীস নং: ১৯
আন্তর্জাতিক নং: ২২৮২২
কুরআন সুন্নাহ্‌কে আকড়ে ধরা
অনুচ্ছেদঃ নবী (ﷺ)-এর পর দীনি বিষয়ে পরিবর্তন বা নব-উদ্ভাবনের শাস্তি প্রসঙ্গে
(১৯) আবূ হাযিম (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (সাহাবী) সাহল ইবন সা'দ আস-সাঈদী (রা)-কে বলতে শুনেছি; আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, আমি তোমাদের অগ্রগামী হিসাবে (হাউযে কাউসারে) অপেক্ষা করব। যে ব্যক্তি হাউযে উপস্থিত হবে সে পান করবে। আর যে পান করবে সে এরপর আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। অনেক মানুষ (হাউযে) আমার নিকট আগমন করবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনবে। এরপর আমার ও তাদের মধ্যে আড়াল সৃষ্টি করে দেয়া হবে। আবু হাযিম বলেন, আমি যখন এই হাদীস বলছিলাম তখন নু'মান ইবন্ আবি আইয়াশ তা শুনতে পান। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেনঃ আপনি কি এভাবেই সাহল (রা)-কে বলতে শুনেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রা)-কে আরেকটু বেশী বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলবেন, এরা তো আমার উম্মত। তখন তাঁকে বলা হবে, আপনার পরে এরা কি কর্ম করেছিল তা আপনি জানেন না। তখন আমি বলব, দূর হয়ে যাক! দূর হয়ে যাক!! যারা আমার পরে (দীনে) পরিবর্তন করেছে।
كتاب الاعتصام بالكتاب والسنة
فصل منه في وعيد من بدل أو أحدث بعد النبي صلى الله عليه وآله وسلم
(19) عن يعقوب بن عبد الرحمن عن أبي حازم قال سمعت سهلا (يعني ابن سعد الساعدي رضي الله عنه) يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول أنا فرطكم (3) على الحوض من ورد شرب ومن شرب لم يظمأ بعده أبدا وليردن علي أقوام أعرفهم ويعرفونني ثم يحال بيني وبينهم، قال أبو حازم فسمع النعمان بن أبي عياش وأنا أحدثهم هذا الحديث فقال هكذا سمعت سهلا يقول؟ قال فقلت نعم، قال وأنا على أبي سعيد الخدري لسمعته
-
يزيد فيقول إنهم مني فيقال إنك لا تدري ما عملوا بعدك فأقول سحقا (1) سحقا لمن بدل بعدي.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পাক-পবিত্রতার ফযীলত
ক. ত্বহারাত ছাড়া ঈমানের আর যত শাখা-প্রশাখা আছে, যেমন নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকর তিলাওয়াত, দান-খয়রাত ইত্যাদি, তা মানুষের আত্মাকে পবিত্র করে। আর ত্বহারাত দ্বারা পবিত্র হয় মানুষের দেহ। দেহ ও আত্মার সমষ্টিই হল মানুষ । তাহলে দেখা যাচ্ছে মানুষের অর্ধাংশ পবিত্র হয় ত্বহারাত দ্বারা আর বাকি অর্ধেক অন্যান্য ইবাদত দ্বারা। এই হিসেবে ঈমান তথা ঈমানের কার্যাবলী দুই ভাগে বিভক্ত হল। একভাগ দ্বারা মানুষের জাহের পবিত্র হয়, অন্যভাগ দ্বারা পবিত্র হয় মানুষের বাতেন। তাই বলা হয়েছে 'ত্বহারাত ঈমানের অর্ধেক'।

খ. ঈমান দ্বারা নামায বোঝানো হয়েছে, যেমন সুরা বাকারার আয়াত-

وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيعَ إِيْمَانَكُمْ

*আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের ঈমান নিষ্ফল করে দেবেন। - এর ঈমান শব্দ দ্বারা নামায বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ কিবলা পরিবর্তনের আগে তোমর বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে যেসব নামায পড়েছ, আল্লাহ তা নিষ্ফল করবেন না তদ্রূপ এ হাদীছেও ঈমান দ্বারা নামায বোঝানো হয়েছে। অর্থ দাঁড়ায়- ত্বহারাত নামাযের অর্ধেক, যেহেতু ত্বহারাত ছাড়া নামায হয় না।

গ. এক হাদীছে আছে, যে-কোনও মুসলিম পরিপূর্ণ ত্বহারাতের সাথে পাঁচ ওয়া নামায পড়ে, তার ওইসকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়, যা এর ওয়াক্তসমূহের মাঝখানে হ যায়। দেখা যাচ্ছে গুনাহ মাফ হয় ত্বহারাত ও নামায- এ দুইয়ের সমষ্টি দ্বারা। সুতর গুনাহ হতে ক্ষমাপ্রাপ্তির দিক থেকে ত্বহারাত ঈমানের তথা নামাযের অর্ধেক।

ঘ. নামায বেহেশতের চাবি। আবার ওযু নামাযের চাবি। তাহলে ওষু ও নামায এ দুইয়ের সমষ্টি দ্বারা জান্নাতের দুয়ার খোলা হয়, যা কিনা ঈমানের লক্ষবস্ত্র। সেই হিসেবে ত্বহারাত ঈমানের অর্ধেক হল।

ঙ. ত্বহারাত তথা ওযু, গোসল ও তায়াম্মুম দ্বারা যে ছওয়াব লাভ হয়, সে ছওয়াব বৃদ্ধি পেতে পেতে ঈমান দ্বারা অর্জিত ছওয়াবের অর্ধেক বরাবর হয়ে যায়।

চ. পবিত্রতাকে ব্যাপক অর্থেও ধরা যেতে পারে। তার মানে জাহিরী ও বাহিনী উভয় প্রকার পবিত্রতা। জাহিরী পবিত্রতা অর্জিত হয় ওযু, গোসল ও তায়াম্মুম দ্বারা। আর বাতিনী তথা আত্মিক পবিত্রতা অর্জিত হয় শিরক ও পাপাচার পরিহার দ্বারা। এই উভয়বিধ পবিত্রতা দ্বারা মানুষের পূর্ণাঙ্গ পরিশুদ্ধি লাভ হয়। বাকি থাকল শোভা ও সৌন্দর্যবিধানের ব্যাপার। তা সম্পন্ন হয় নামায, রোযা, যিকর, তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা। এভাবে মানব-জীবনে ঈমানের পরিপূর্ণতা সাধিত হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।

ছ. আবার এমনও বলা যায়, মানুষের করণীয় কাজ দু'প্রকার। একটা অর্জনমূলক, আরেকটা বর্জনমূলক। এ দুইয়ের সমন্বিত রূপই ঈমান। আল্লাহ তা'আলা যা করার আদেশ করেছেন সেগুলো করাই হল অর্জনমূলক কাজ। আর আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু করতে নিষেধ করেছেন সেগুলো হতে বিরত থাকা হচ্ছে বর্জনমূলক কাজ। সেই বর্জনমূলক কাজসমূহ দ্বারা মানুষের শরীর ও মন পবিত্র হয়। এই হিসেবেই বলা হয়েছে, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।

জ. ত্বহারাত দ্বারা ইখলাসও বোঝানো যেতে পারে। অর্থাৎ ঈমানের এক হল। মৌখিক স্বীকৃতি- নিজেকে মু'মিন ও মুসলিমরূপে প্রকাশ করা। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে একজন ব্যক্তি মু'মিনরূপে বিবেচিত হয়, তাতে তার অন্তরে বিশ্বাস থাকুক বা নাই থাকুক। কিন্তু আল্লাহর কাছে মু'মিন সাব্যস্ত হওয়ার জন্যে ইখলাস ও মনের বিশ্বাস ও জরুরি। অন্যথায় সে আখিরাতে মুক্তি পাবে না। তাহলে পরিপূর্ণ ঈমান অর্থাৎ যেই ঈমান দ্বারা আখিরাতে মুক্তিলাভ হবে, তার অর্ধেক হচ্ছে ইখলাস, যাকে 'ত্বহারাত' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ত্বহারাত শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে এ কথা বোঝানোর জন্য যে, তার মুখের স্বীকারোক্তি মুখের কথামাত্র নয়; বরং তার প্রকৃত ঈমান, যা লোকদেখানোর মনোভাব ও মুনাফিকীর আবিলতা থেকে পবিত্র।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান