আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২৩. অধ্যায়ঃ তাওবা ও যুহদ

হাদীস নং: ৪৭৮৪
অধ্যায়ঃ তাওবা ও যুহদ
অধ্যায়: তাওবা ও যুহদ।
তাওবা করা, তাওবার প্রতি ধাবিত হওয়া এবং মন্দকাজের পর ভালকাজ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান
৪৭৮৪. হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, (নিজ গুণাহর জন্য) লজ্জিত ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের অপেক্ষায় থাকে এবং (নিজ আমলের জন্য) গর্ব বোধকারী ব্যক্তি (আল্লাহর) অসন্তুষ্টির অপেক্ষায় থাকে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা জেনে রাখ যে, প্রত্যেক কর্মশীল ব্যক্তি অচিরেই নিজ কর্মফলের সম্মুখীন হবে এবং নিজ কর্মের শুভফল ও অশুভফল দেখেই দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করবে। নিশ্চয় আমলসমূহ তাদের পরিসমাপ্তির উপর নির্ভলশীল। রাত্রিও দিবস দু'টো বাহন জন্তু। অতএব তোমরা পরকালের পথে এ দু'টো বাহন জন্তুতে সুন্দরভাবে আরোহণ কর এবং তোমরা (তাওবা ও সৎকাজে) গড়িমসি থেকে বেঁচে থাক। কেননা, মৃত্যু অতর্কিত এসে পড়বে। তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ্ তা'আলার ধৈর্যের কারণে ধোঁকা না খায়। কেননা, জান্নাত ও জাহান্নাম তোমাদের প্রত্যেকের কাছে তার জুতোর ফিতা থেকে ও অধিক নিকটবর্তী। অতঃপর রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন: فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ () وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ "কেউ অনু পরিমাণ সৎকাজ করলে তা সে দেখবে এবং কেউ অনুপরিমাণ অসৎ কাজ করলে তাও সে দেখবে।" (৯৯৪৮)
(ইস্পাহানী (র) হাদীসটি প্রখ্যাত আবিদ সাবিত ইব্‌ন মুহাম্মদ কূফী-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।)
كتاب التوبة والزهد
كتاب التَّوْبَة والزهد
التَّرْغِيب فِي التَّوْبَة والمبادرة بهَا وإتباع السَّيئَة الْحَسَنَة
4784- وَعَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم النادم ينْتَظر من الله الرَّحْمَة والمعجب ينْتَظر المقت وَاعْلَمُوا عباد الله أَن كل عَامل سيقدم على عمله وَلَا يخرج من الدُّنْيَا حَتَّى يرى حسن عمله وَسُوء عمله وَإِنَّمَا الْأَعْمَال بخواتيمها وَاللَّيْل وَالنَّهَار مطيتان فَأحْسنُوا السّير عَلَيْهِمَا إِلَى الْآخِرَة واحذروا التسويف فَإِن الْمَوْت يَأْتِي بَغْتَة وَلَا يغترن أحدكُم بحلم الله عز وَجل فَإِن الْجنَّة وَالنَّار أقرب إِلَى أحدكُم من شِرَاك نَعله ثمَّ قَرَأَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَمن يعْمل مِثْقَال ذرة خيرا يره وَمن يعْمل مِثْقَال ذرة شرا يره الزلزلة 7 8

رَوَاهُ الْأَصْبَهَانِيّ من رِوَايَة ثَابت بن مُحَمَّد الْكُوفِي العابد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

জান্নাত-জাহান্নাম অতি নিকটবর্তী হওয়ার অর্থ- অতি অল্প আমলই তাতে যাওয়ার কারণ হতে পারে। অর্থাৎ একজন লোক অল্প ‘ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা জান্নাতে পৌঁছে যেতে পারে। অনুরূপ কোনও ব্যক্তির অল্প নাফরমানীও জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে। ইবন বাত্তাল রহ. এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, 'ইবাদত-বন্দেগী মানুষকে জান্নাতে পৌঁছায় আর পাপকর্ম মানুষকে জাহান্নামের নিকটবর্তী করে দেয়। আর উভয় ক্ষেত্রেই কখনও কখনও অল্প আমলও যথেষ্ট হয়ে যায়। যেমন, এক হাদীছে আছে-

إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يُلْقِي لَهَا بَالاً يَهْوِي بِهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ. وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يُلْقِي لَهَا بَالاً يَرْفَعُهُ اللهُ بِهَا فِي الْجَنَّةِ

“কোনও কোনও লোক এমন এমন কথা বলে ফেলে, যাকে সে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। অথচ সে এর ফলে জাহান্নামের তলদেশে নিক্ষিপ্ত হয়। এমনিভাবে কোনও কোনও লোক এমন এমন কথা বলে ফেলে, যাকে সে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। অথচ সে কারণে আল্লাহ তাকে জান্নাতে তুলে নেন।মুআত্তা মালিক, হাদীছ নং ৩৬১২

এছাড়া আরও বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা সহজ সহজ আমলের বিনিময়ে জান্নাত লাভ আবার তুচ্ছ তুচ্ছ আমলের কারণে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার কথা জানা যায়। যেমন, পূর্বের যমানার জনৈক পাপী ব্যক্তি কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে জান্নাত লাভের উপযুক্ত হয়েছিল। আবার জনৈকা মহিলা একটি বিড়ালকে বেধে রেখে না খাইয়ে মারার কারণে জাহান্নামী হয়েছিল। কারও জানা নেই আল্লাহর কাছে কখন কোন নেক আমল কবুল হয়ে যায়। আবার এটাও জানা নেই কোন্ পাপ আল্লাহর এমন ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদীছে সতর্ক করেছেন, কেউ যেন কোনও নেক আমলকে তুচ্ছ মনে না করে এবং কোনও পাপকর্মকে অবহেলা না করে।

ইবনুল জাওযী রহ. বলেন, জান্নাতলাভ অতি সহজ, যদি সহীহ নিয়তের সঙ্গে নেক আমল করা যায়। অনুরূপ জাহান্নামে যাওয়াটাও অতি সহজ, যদি খেয়ালখুশিমত চলা হয় ও নাফরমানী করা হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মূলত এ হাদীছেও মুজাহাদার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় নফস নেক আমল করতে প্রস্তুত হয় না। তখন যদি নফসের সঙ্গে লড়াই করে নেক আমল করা যায়, তবে হতে পারে সে আমলটি আল্লাহর কাছে এমন কবুল হবে, যদ্দরুন আল্লাহ নিজ রহমতে তাকে জান্নাত দান করবেন।
অনুরূপ অনেক সময় নফস গুনাহের দিকে ধাবিত হয়। তখন কর্তব্য নফসের সঙ্গে লড়াই করে সে গুনাহ থেকে বিরত থাকা। অন্যথায় হতে পারে সেই গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ তা'আলা নারাজ হবেন, পরিণামে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে। তাই প্রত্যেকের কর্তব্য, নেক আমলে লিপ্ত হওয়া ও বদ আমল থেকে বাঁচার জন্য নফসের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক জিহাদে লিপ্ত থাকা।

খ. এ হাদীছ দ্বারা নেক আমলের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়। কেননা জান্নাত যখন অতি কাছে, অর্থাৎ অতি সহজ আমল দ্বারাই তা লাভ করা যায়, যদি তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়, তখন কেন আমরা নেক আমলে পিছিয়ে থাকব?

গ. অনুরূপ এর দ্বারা যে-কোনও পাপকর্ম সম্পর্কে সচেতন থাকার শিক্ষা লাভ হয়, যেহেতু জাহান্নাম অতি কাছে, অর্থাৎ যে-কোনও পাপকর্মই তাতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ হয়ে যেতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান