মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
কর্মে নিয়্যত ও ইখলাস প্রসংগ অধ্যায়
হাদীস নং: ৪
কর্মে নিয়্যত ও ইখলাস প্রসংগ অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: নিয়্যতের গুরুত্ব
৪. উবাই ইবনে কা'ব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি (অন্য বর্ণনায়) আমার চাচাত ভাই। আমার জানা মতে মদীনায় মসজিদ থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে ছিল তার ঘর, তবুও সে সর্বদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সকল সালাতে কিবলার দিকে নামায পড়ার জন্য উপস্থিত হতো। একদা আমি তাকে বললাম, তুমি যদি একটি গাধা ক্রয় করে নিতে, তাহলে অতি গরমে ও অন্ধকার রাতে তাতে চড়ে মসজিদে আসতে পারতে (অন্য বর্ণনায় অতিরিক্ত শব্দ এসেছে যে,) দুষ্ট ব্যক্তি বা প্রাণী থেকে তুমি রক্ষা পেতে। সে বলল: আমার ঘরটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মসজিদ সংলগ্ন হোক, তা আমি পছন্দ করি না। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, আমার ঘরটি মুহাম্মদ (ﷺ)-এর ঘরের পাশে হোক তাতে আমি আনন্দিত হবো না। কা'ব (রা) বলেন, আমি এর চেয়ে অপছন্দনীয় কথা আর কখনও শুনিনি। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এ সংবাদ দিলে তিনি তার নিকট এসব জানতে চান। তখন সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। আমি এ কাজ এজন্য করেছি যাতে আমার পরিবারে ফিরে যাওয়া ও মসজিদে গমনের পদ চিহ্ন আমার আমলনামায় লিখা হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে এ নিয়তের সকল পুরস্কার প্রদান করবেন। অন্য শব্দে, তোমার প্রত্যেকটি পদ চিহ্নে মর্যাদা রয়েছে। অন্য বর্ণনায়, তিনি বলেন, তুমি যা নিয়াত কর তার, অথবা তুমি যা করেছ তার পুরস্কার পাবে।
كتاب النية والاخلاص في العمل
باب ما جاء في النية
وعن أبي بن كعب قال كان رجل (وفي رواية أخرى) كان ابن عم لي) ما أعلم من الناس من انسان من أهل المدينة ممن يصلي إلى القبلة أبعد بيتا من المسجد منه قال فكان يحضر الصلوات كلهن من النبي صلى الله عليه وسلم فقلت له لو اشتريت حمارا تركبه في الرمضاء (10) والظلماء (زاد في رواية ويقيك من هوام الأرض) قال والله ما احب أن بيتي يلزق بمسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم (وفي رواية فقال ما يسرني أن بيتي مطنب (11) ببيت محمد صلى الله عليه وسلم قال فما سمعت كلمة أكره إلى منها قال فأخبرت رسول الله صلى الله عليه وسلم فسأله عن ذلك فقال يانبي الله لكيما يكتب أثري ورجوعي إلى أهلي وإقبالي إليه قال أنطاك (1) الله ذلك كله (وفي لفظ) إن له بكل خطوة درجة (وفي رواية فقال لك ما نويت أو قال لك أجر ما نويت)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে যে সাহাবীর কথা বলা হয়েছে যে, তাঁর বাড়ি মসজিদে নববী থেকে অনেক দূরে ছিল এবং অতদূর থেকে তিনি হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাতায়াত করতেন, তার পরিচয় জানা যায় না। তবে তাঁর যে জযবার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তা ছিল সাহাবায়ে কিরামের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সকলেই ছিলেন আখিরাতমুখী এবং দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ। কিভাবে কত বেশি ছাওয়াব অর্জন করা যায় তা-ই ছিল তাঁদের ধ্যানজ্ঞান।
তাঁরা জানতেন নামায সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। মসজিদ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। যে নামায মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা হয় তার ফযীলত অনেক বেশি। এত বড় ফযীলতের কাজে আসা-যাওয়া করাও অনেক বড় নেক কাজ। সে আসা-যাওয়া যত বেশি আদবের সঙ্গে করা যায় ততই ভালো। বলাবাহুল্য, কোনও কিছুতে সওয়ার হয়ে যাতায়াত করা অপেক্ষা হেঁটে হেঁটে আসা-যাওয়া করাতেই আদব বেশি। তাই এ সাহাবী পাঁচ ওয়াক্ত নামায অতদূর থেকে মসজিদে নববীতে এসেই পড়তেন এবং হেঁটে হেঁটেই আসা-যাওয়া করতেন। তাঁর এ কষ্ট দেখে অপর এক সাহাবীর, হয়তো উবাঈ ইবন কা'ব নিজেরই, মায়া লাগল। কেননা রাতের অন্ধকারে অতদূর থেকে পায়ে হেঁটে আসা- যাওয়া করা তো অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। এমনিভাবে দিনের বেলা রোদের খরতাপে যখন মরুভূমির বালু উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন তার উপর দিয়ে হাঁটা তো আরও কঠিন। তাই তিনি পরামর্শ দিলেন যে, ভাই তুমি তো একটা গাধা কিনে নিলে পার। গাধায় চড়ে আসা-যাওয়া করলে এ কষ্ট তোমার হয় না।
কিন্তু এ সাহাবীর মনে তো অন্য জোশ। মনের সে জোশের সামনে শরীরের কষ্ট কিছুই নয়। আখিরাতের সফলতা নির্ভর করে বেশি নেকীর উপর। যত বেশি হাঁটা যাবে, সে নেকী তত বেশি কামাই হবে। সওয়ারীর পিঠে চড়ে আসলে তো তা হবে না। শরীরের আরাম হবে বটে, তবে সে আরাম আরও বেশি হয় মসজিদের পাশে বাড়ি হলে। কিন্তু তিনি শরীরের আরাম চান না, চান রূহের শান্তি। তা হয় বেশি পুণ্য দিয়ে। তাই বললেন, আমি তো এটাও পসন্দ করি না যে, আমার বাড়ি মসজিদের পাশে হোক। মসজিদে হেঁটে আসতে যে ছাওয়াব হবে এবং হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরলে যে ছাওয়াব হবে, আমি চাই তা আমার আমলনামায় লেখা হোক।
তাঁর এ কথা কোনওভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে পৌঁছে গেল। তাঁর প্রথম কথাটি আপাতদৃষ্টিতে আপত্তিকর মনে হয়। কেননা মসজিদের পাশে বাড়ি হওয়া তো অনেক ভালো। এর দ্বারা মসজিদের কল্যাণ অনেক বেশি অর্জন করা যায়। কিন্তু তিনি তা পসন্দ করছেন না। পসন্দ না করাটা কি সঠিক হয়েছে? এ ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেন? তাঁর মতামত জানার কৌতূহলেই হয়তো কেউ এ খবর তাঁকে জানিয়েছিল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার আবেগের মূল্য দিলেন এবং যে উদ্দেশ্যে মসজিদের কাছে বাড়ি না হওয়া পসন্দ করেছেন তাকে প্রশংসার চোখে দেখলেন। সুতরাং তাকে আশ্বাসবাণী শোনালেন যে, তুমি আসা-যাওয়ার পথে কদমে কদমে যে নেকীর আশা করেছ, আল্লাহ তা'আলা তোমার সে আশা পূরণ করেছেন। তোমার আমলনামায় সে নেকী লেখা হচ্ছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ছাওয়াব অর্জনের প্রতি সাহাবায়ে কিরামের কেমন জযবা ছিল তা জানা যায়। আমাদের উচিত তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া।
খ. মসজিদের কাছে বাড়ি হওয়া যেমন বরকতের, তেমনি দূরে হওয়াও ছাওয়াব অর্জনে সহায়ক। কাজেই প্রত্যেকের কর্তব্য আপন আপন বাড়ির অবস্থানকে কল্যাণকর মনে করা এবং অবস্থান অনুযায়ী তা থেকে কল্যাণ হাসিল করে নেওয়া।
গ. অন্যের কষ্ট দেখে সহানুভূতিশীল হওয়া সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ।
ঘ. শারীরিক কষ্টের উপর রূহের শান্তি তথা ছাওয়াব হাসিল করাকে প্রাধান্য দেওয়া সাহাবায়ে কিরামের নীতি।
ঙ. অন্যের দীনী ভাবাবেগকে অবজ্ঞা করতে নেই; বরং তার মূল্যায়ন করা উচিত।
তাঁরা জানতেন নামায সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। মসজিদ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। যে নামায মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা হয় তার ফযীলত অনেক বেশি। এত বড় ফযীলতের কাজে আসা-যাওয়া করাও অনেক বড় নেক কাজ। সে আসা-যাওয়া যত বেশি আদবের সঙ্গে করা যায় ততই ভালো। বলাবাহুল্য, কোনও কিছুতে সওয়ার হয়ে যাতায়াত করা অপেক্ষা হেঁটে হেঁটে আসা-যাওয়া করাতেই আদব বেশি। তাই এ সাহাবী পাঁচ ওয়াক্ত নামায অতদূর থেকে মসজিদে নববীতে এসেই পড়তেন এবং হেঁটে হেঁটেই আসা-যাওয়া করতেন। তাঁর এ কষ্ট দেখে অপর এক সাহাবীর, হয়তো উবাঈ ইবন কা'ব নিজেরই, মায়া লাগল। কেননা রাতের অন্ধকারে অতদূর থেকে পায়ে হেঁটে আসা- যাওয়া করা তো অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। এমনিভাবে দিনের বেলা রোদের খরতাপে যখন মরুভূমির বালু উত্তপ্ত হয়ে যায়, তখন তার উপর দিয়ে হাঁটা তো আরও কঠিন। তাই তিনি পরামর্শ দিলেন যে, ভাই তুমি তো একটা গাধা কিনে নিলে পার। গাধায় চড়ে আসা-যাওয়া করলে এ কষ্ট তোমার হয় না।
কিন্তু এ সাহাবীর মনে তো অন্য জোশ। মনের সে জোশের সামনে শরীরের কষ্ট কিছুই নয়। আখিরাতের সফলতা নির্ভর করে বেশি নেকীর উপর। যত বেশি হাঁটা যাবে, সে নেকী তত বেশি কামাই হবে। সওয়ারীর পিঠে চড়ে আসলে তো তা হবে না। শরীরের আরাম হবে বটে, তবে সে আরাম আরও বেশি হয় মসজিদের পাশে বাড়ি হলে। কিন্তু তিনি শরীরের আরাম চান না, চান রূহের শান্তি। তা হয় বেশি পুণ্য দিয়ে। তাই বললেন, আমি তো এটাও পসন্দ করি না যে, আমার বাড়ি মসজিদের পাশে হোক। মসজিদে হেঁটে আসতে যে ছাওয়াব হবে এবং হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরলে যে ছাওয়াব হবে, আমি চাই তা আমার আমলনামায় লেখা হোক।
তাঁর এ কথা কোনওভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে পৌঁছে গেল। তাঁর প্রথম কথাটি আপাতদৃষ্টিতে আপত্তিকর মনে হয়। কেননা মসজিদের পাশে বাড়ি হওয়া তো অনেক ভালো। এর দ্বারা মসজিদের কল্যাণ অনেক বেশি অর্জন করা যায়। কিন্তু তিনি তা পসন্দ করছেন না। পসন্দ না করাটা কি সঠিক হয়েছে? এ ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেন? তাঁর মতামত জানার কৌতূহলেই হয়তো কেউ এ খবর তাঁকে জানিয়েছিল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার আবেগের মূল্য দিলেন এবং যে উদ্দেশ্যে মসজিদের কাছে বাড়ি না হওয়া পসন্দ করেছেন তাকে প্রশংসার চোখে দেখলেন। সুতরাং তাকে আশ্বাসবাণী শোনালেন যে, তুমি আসা-যাওয়ার পথে কদমে কদমে যে নেকীর আশা করেছ, আল্লাহ তা'আলা তোমার সে আশা পূরণ করেছেন। তোমার আমলনামায় সে নেকী লেখা হচ্ছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ছাওয়াব অর্জনের প্রতি সাহাবায়ে কিরামের কেমন জযবা ছিল তা জানা যায়। আমাদের উচিত তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া।
খ. মসজিদের কাছে বাড়ি হওয়া যেমন বরকতের, তেমনি দূরে হওয়াও ছাওয়াব অর্জনে সহায়ক। কাজেই প্রত্যেকের কর্তব্য আপন আপন বাড়ির অবস্থানকে কল্যাণকর মনে করা এবং অবস্থান অনুযায়ী তা থেকে কল্যাণ হাসিল করে নেওয়া।
গ. অন্যের কষ্ট দেখে সহানুভূতিশীল হওয়া সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ।
ঘ. শারীরিক কষ্টের উপর রূহের শান্তি তথা ছাওয়াব হাসিল করাকে প্রাধান্য দেওয়া সাহাবায়ে কিরামের নীতি।
ঙ. অন্যের দীনী ভাবাবেগকে অবজ্ঞা করতে নেই; বরং তার মূল্যায়ন করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)