মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৩
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের দায়িত্ব পালন না করলে প্রত্যেক জাতি ধ্বংস হবে
৫৩. ইসমাঈল ইবন আবু খালিদ (র) কায়েস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, একদা আবু বকর (রা) দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও তারিক করে বললেন, হে লোক সকল। তোমরা এ আয়াত পাঠ করে থাক। যার অর্থ, 'হে ঈমানদারগণ। তোমরা নিজেদের কোন ক্ষতি হবে না, যদি তোমরা নিজেরা সঠিক পথে থাক।" (সূরা মায়েদা: ১০৫) আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি: লোকেরা যখন দেখবে, জালিম যুলুম করছে, কিন্তু তারা তার প্রতিরোধ করবে না। এরূপ লোকদের উপর আল্লাহ অবশ্যই শান্তি পাঠাবেন।
كتاب الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر
باب هلاك كل أمة لم تقم بهذا الواجب
عن اسماعيل بن أبي خالد عن قيس قال قام أبو بكر فحمد الله وأثنى عليه ثم قال يا أيها الناس إنكم تقرءون هذه الآية (يا أيها الذين آمنوا عليكم أنفسكم لا يضركم من ضل إذا اهتديتم) وإنا سمعنا رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان الناس اذا رأوا المنكر فلم يغيروه أوشك أن يعمهم الله بعقابه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ বর্ণনায় হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. যে আয়াত উল্লেখ করেছেন, বাহ্যদৃষ্টিতে তা দ্বারা বোঝা যায়- কেউ যদি নিজে শরী'আতের আদেশ-নিষেধ মেনে চলে তবে তার মুক্তির জন্য সেটাই যথেষ্ট, অন্যে কী করল না করল তা দেখার প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ এ আয়াতটি দ্বারা সে অর্থই বুঝেছিল। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি, তাদের সে ধারণা ভুল সাব্যস্ত করেন এবং হাদীছ দ্বারা এ আয়াতটির প্রকৃত অর্থ তাদেরকে বুঝিয়ে দেন।

তিনি যে হাদীছ উল্লেখ করেছেন তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছে- জালেমকে তার জুলুমের কাজে বাধা না দেওয়া হলে যারা জুলুম করে এবং যারা জুলুম করে না আল্লাহ তা'আলা তাদের সকলকেই শাস্তিদান করবেন। জালেমকে শাস্তিদান করবেন তার জুলুমের কারণে আর অন্যদেরকে শাস্তিদান করবেন জুলুমে বাধা না দিয়ে নীরবদর্শক হয়ে থাকার কারণে। বোঝা গেল জুলুমে বাধা দান করা ফরয ও অবশ্যকর্তব্য। এর আগে যতগুলো হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলোতেই সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করাকে জরুরি সাব্যস্ত করা হয়েছে।

হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি, হাদীছটির উল্লেখ দ্বারা বোঝাতে চাচ্ছেন যে, তোমরা আসলে আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করছ। এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাদেরকে এ কথাও বলেছিলেন যে-

وَتَضَعُونَهَا غَيْرَ مَوْضِعِهَا

এবং তোমরা একে ভুল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছ। মুসনাদে আহমান, হাদীছ নং ১৬
বস্তুত সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজে নিষেধ করা অবশ্যই জরুরি এবং সাধ্যমত এটা করতেই হবে। আয়াতটির বক্তব্য এর পরিপন্থী নয়। আয়াতে বোঝানো হচ্ছে যে, তোমরা নিজেরা সৎকর্মে প্রতিষ্ঠিত ও অসৎকর্ম হতে বিরত থেকে যারা সৎকর্ম করে না তাদেরকে যদি সৎকর্ম করতে বল এবং যারা অসৎকর্ম করে তাদেরকে সাধ্যমত বাধাদান কর আর তা সত্ত্বেও তারা তা থেকে ফিরে না আসে, তবে তাদের এ বিপথগামিতা দ্বারা তোমাদের কোনও ক্ষতি হবে না, যেহেতু তোমরা তোমাদের কর্তব্য পালন করেছ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও অন্যায়-অসৎকাজে বাধা দেওয়ার আবশ্যিকতা বোঝা যায়।

খ. এর দ্বারা জানা যায় যে, হাদীছ কুরআন মাজীদের ব্যাখ্যা। কুরআন মাজীদের কোনও আয়াতে কোনও বিষয় অস্পষ্ট থাকলে হাদীছে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাই কুরআন বোঝার জন্য হাদীছের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি।

গ. যারা কুরআন ও হাদীছের যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না তাদের উচিত নয় নিজে নিজে কোনও আয়াত বা হাদীছের ব্যাখ্যা করতে যাওয়া বা তাদের নিজেদের যা বুঝে আসে তা নিয়ে বসে থাকা। তাদের কর্তব্য আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের বুঝ সঠিক না ভুল—তা তাদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া।

ঘ. এটা উলামায়ে কিরামের দায়িত্ব যে, তারা যদি কাউকে কুরআন-হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা করতে দেখেন, তবে সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করবেন এবং মানুষের মধ্যে তা প্রচার হয়ে গেলে মানুষকেও সে ব্যাপারে সাবধান করে দেবেন। সে ক্ষেত্রে মানুষের কর্তব্য তাদের সমালোচনা না করে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করে নেওয়া, যেহেতু তারা তাদের ওপর অর্পিত যিম্মাদারীই পালন করেছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান