মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৮৬৪
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা
৫৮৬৪। ইবনে শিহাব (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু যর (রাঃ) বর্ণনা করিতেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: আমি মক্কায় থাকাকালীন এক রাত্রে আমার ঘরের ছাদ বিদীর্ণ করা হইল এবং জিবরাঈল (আঃ) অবতরণ করিলেন, ইহার পর আমার বক্ষ বিদীর্ণ করিলেন। তারপর উহাকে যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করিলেন। অতঃপর জ্ঞান ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণ-পাত্র আনিয়া উহাকে বক্ষের মধ্যে ঢালিয়া দিলেন। তারপর উহাকে বন্ধ করিয়া দিলেন। অতঃপর তিনি (জিবরাঈল) আমার হাত ধরিয়া আমাকে আকাশের দিকে লইয়া গেলেন। যখন আমি নিকটবর্তী আকাশে উপনীত হইলাম, তখন জিবরাঈল আসমানের দ্বাররক্ষীকে বলিলেন, দরজা খোল। সে বলিল, (আপনি) কে? তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। সে বলিল, আপনার সঙ্গে আর কেহ আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সে বলিল, তাহাকে কি ডাকা হইয়াছে ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তারপর যখন সে দরজা খুলিল, তখন আমরা নিকটবর্তী আসমানে আরোহণ করিয়া দেখিলাম, তথায় এক ব্যক্তি বসিয়া আছেন, তাঁহার ডান পার্শ্বে বহু মানবাকৃতি এবং তাঁহার বাম পার্শ্বেও অনেক মানবাকৃতি। তিনি ডান দিকে তাকাইলে হাসেন এবং যখন বাম দিকে তাকান, তখন কাঁদেন। তিনি বলিলেন, খোশ আমদেদ, হে নেককার নবী। হে পুণ্যবান সন্তান। আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ইনি কে? বলিলেন, ইনি হযরত আদম (আঃ)। ডানে ও বামে এইগুলি তাঁহার সন্তানের রূহসমূহ। ডান দিকের এইগুলি বেহেশতী এবং বাম দিকের এইগুলি দোযখী। এই জন্য তিনি যখন ডান দিকে তাকান, তখন হাসেন এবং যখন বাম দিকে তাকান, তখন কাদেন। অতঃপর তিনি আমাকে লইয়া দ্বিতীয় আসমানের দিকে উঠিলেন এবং দ্বাররক্ষীকে বলিলেন, দরজা খোল। তখন সে প্রথন দ্বাররক্ষীর ন্যায় জিজ্ঞাসা করিল (তারপর দরজা খুলিল)। হযরত আনাস বলেন, বর্ণনাকারী হযরত আবু যর (রাঃ) বলিয়াছেন, নবী (ছাঃ) আসমানসমূহে হযরত আদম, ইদ্রীস, মুসা, ঈসা এবং ইবরাহীম (আঃ)-কে পাইয়াছেন কিন্তু তিনি (আবু যর) তাহাদের অবস্থানের কথা নির্দিষ্টভাবে বলেন নাই। শুধু এইটুকু বর্ণনা করিয়াছেন যে, নবী (ছাঃ) হযরত আদম (আঃ)-কে নিকটবর্তী আকাশে এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে ষষ্ঠ আসমানে পাইয়াছেন। ইবনে শিহাব বলেন, ইবনে হাযম আমাকে বলিয়াছেন যে, ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বাহ আনসারী—তাহারা উভয়ে বলিতেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, অতঃপর আমাকে উর্ধ্বলোকে লইয়া যাওয়া হইল এবং আমি এক সমতল স্থানে পৌঁছিলাম। তথায় আমি কলমের লেখার শব্দ শুনিতে পাইলাম। ইবনে হাযম ও আনাস (রাঃ) বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, তখন মহান আল্লাহ্ আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিলেন। আমি উহা লইয়া প্রত্যাবর্তন করিলাম। যখন মুসা (আঃ)-এর নিকট পৌঁছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ্ তা'আলা কি ফরয করিয়াছেন। আমি বলিলাম, পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, আপনার রবের নিকট ফিরিয়া যান। কেননা, আপনার উম্মত (এত নামায আদায় করিতে) সক্ষম হইবে না। অতঃপর মুসা (আঃ) আমাকে ফেরৎ পাঠাইলেন। (সুতরাং আমি আমার রবের কাছে গেলাম।) ফলে আল্লাহ্ কিছু অংশ কম করিয়া দিলেন। অতঃপর আমি পুনরায় মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলাম এবং বলিলাম, কিছু নামায কম করিয়া দিয়াছেন। তিনি পুনরায় বলিলেন, আবারও যান। কেননা, আপনার উম্মত ইহাও আদায় করিতে সক্ষম হইবে না। সুতরাং আমি আবারও আমার রবের কাছে ফিরিয়া গেলাম। আল্লাহ্ আবারও কিছু নামায মাফ করিয়া দিলেন। আমি পুনরায় মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলে তিনি বলিলেন, আবার যান। আরও কিছু নামায হ্রাস করাইয়া আনেন। কেননা, আপনার উম্মত ইহাও আদায় করিতে সক্ষম হইবে না। সুতরাং আমি পুনরায় আমার রবের কাছে গেলাম। এইবার আল্লাহ্ বলিলেন এই পাঁচ নামাযই ফরয, আর ইহা (মূলত সওয়াবের দিক দিয়া) পঞ্চাশ নামাযের সমান। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলাম। তিনি বলিলেন, আবারও আপনি আপনার রবের কাছে যান। এইবার আমি বলিলাম, পুনরায় আমার রবের কাছে যাইতে আমি লজ্জাবোধ করিতেছি। অতঃপর জিবরাঈল আমাকে লইয়া রওয়ানা হইলেন এবং "সিদরাতুল মুনতাহায়" পৌঁছাইলেন। উক্ত বৃক্ষটিকে বিভিন্ন রংয়ে ঢাকিয়া ফেলিল। প্রকৃতপক্ষে উহা কি, তাহা আমি জানি না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান হইল। দেখিতে পাইলাম উহাতে মুক্তার গুম্বজসমূহ এবং উহার মাটি মেশকের। মোত্তাঃ
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَن ابْن شهَاب عَن أنسٍ قَالَ: كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فُرِجَ عني سقفُ بَيْتِي وَأَنا بِمَكَّة فَنزل جِبْرِيل فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٌ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهُ فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بيَدي فعرج بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا. قَالَ جِبْرِيلُ لِخَازِنِ السَّمَاءِ: افْتَحْ. قَالَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ جِبْرِيلُ. قَالَ: هَل مَعَك أحد؟ قَالَ: نعم معي مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ فَلَمَّا فَتَحَ عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا إِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ وَعَلَى يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ إِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شَمَالِهِ بَكَى فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ. قُلْتُ لِجِبْرِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا آدَمُ وَهَذِهِ الْأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ نَسَمُ بَنِيهِ فَأَهْلُ الْيَمين مِنْهُم أهل الْجنَّة والأسودة عَن شِمَاله أهلُ النَّار فَإِذا نظر عَن يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شَمَالِهِ بَكَى حَتَّى عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فَقَالَ لِخَازِنِهَا: افْتَحْ فَقَالَ لَهُ خَازِنُهَا مِثْلَ مَا قَالَ الْأَوَّلُ قَالَ أَنَسٌ: فَذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ فِي السَّمَاوَاتِ آدَمَ وَإِدْرِيسَ وَمُوسَى وَعِيسَى وَإِبْرَاهِيمَ وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ آدَمَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ. قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: فَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ وَأَبَا حَبَّةَ الْأَنْصَارِيَّ كَانَا يَقُولَانِ. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «ثمَّ عرج بِي حَتَّى وصلت لِمُسْتَوًى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الْأَقْلَامِ» وَقَالَ ابْنُ حَزْمٍ وَأَنَسٌ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَفَرَضَ اللَّهُ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلَاةً فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى. فَقَالَ: مَا فَرْضُ اللَّهِ لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: فَرَضَ خَمْسِينَ صَلَاةً. قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِن أُمَّتكَ لَا تطِيق فراجعت فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ: وَضَعَ شَطْرَهَا فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَجَعْتُ فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَاجَعْتُهُ فَقَالَ: هِيَ خَمْسٌ وَهِيَ خَمْسُونَ لَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ. فَقُلْتُ: اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي ثُمَّ انْطُلِقَ بِي حَتَّى انْتُهِيَ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لَا أَدْرِي مَا هِيَ؟ ثُمَّ أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا فِيهَا جَنَابِذُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ