মনে শিরকি চিন্তা আসলে করণীয়
প্রশ্নঃ ৩৫৪৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার কিছুদিন ধরে একটা সমস্যা হচ্ছে। সেটা হলো - মাঝে মাঝেই হঠাৎ হঠাৎ শিরকীয় চিন্তা/কথা মাথায় চলে।অথচ এগুলো আমি মনে- প্রাণে বিশ্বাস করি না আর এগুলো মনে আনতেও চাই না। এখন আমার প্রশ্ন হলঃ আমার কি শিরকের সমান গুনাহ হবে? এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি? এ ধরনের কথা মাথায় আসলে আমার প্রচুর খারাপ লাগে,অনেক অনুতাপ হয়। আমি কি করার মাধ্যমে এর প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মনে মনে কুফরি শিরকি চিন্তা আসলে এই চিন্তাকে সামনে অগ্রসর হতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। যখনই এ ধরনের কল্পনা আসবে, সঙ্গে সঙ্গে ইস্তেগফার করে আল্লাহ তায়ালার জিকির, কোরআনে কারিমের তিলাওয়াত অথবা অন্য কোনো ভালো কাজে লেগে যাওয়া উচিত।
কুফরি শিরকি চিন্তাধারা মনে আসার পর তা মুখে উচ্চারণ না করলে গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ্।
مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ عَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَوْفٰى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِه„ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ
قَالَ قَتَادَةُ إِذَا طَلَّقَ فِي نَفْسِه„ فَلَيْسَ بِشَيْءٍ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতের হৃদয়ে যে খেয়াল জাগ্রত হয় তা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সে তা কার্যে পরিণত করে বা মুখে উচ্চারণ করে।
ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেনঃ মনে মনে ত্বলাক্ব দিলে তাতে কিছুই (ত্বলাক্ব) হবে না।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৬৯
সাথে সাথে বেশী বেশী ওলামায়ে কেরামের মজলিসে যাতায়াত করা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৪৭৭৯৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার বয়স ১৮,, আমি একটা চাকরি করি,,তবে মানসিক শান্তি নাই আমার ভিতর,চাকরিতে শুধু জরিমানা করতেই চলেছি,,বেতন এর থেকে জরিমানা বেশি,কাজে কোনো মনো যোগী হতে পারছিনা,, তাছাড়া একটা হারাম রিলেশনে ছিলাম,,সেখানে ব্যার্থ হয়ে জীবনে মনে হচ্ছে অবেক কষ্ট পাইছি,,তাকে ভুলতেও পারছিনা,,সব কিছু বাদ দিয়ে হারাম থেকে হালাল পথে আসতে চাই,,।আমি কিভাবে এখন মানসিক শান্তি পাবো,,এই মুহুর্তে আমার মানসিক শান্তির খুব দরকার।নামাজের সময় আজান দিলেও আমার মন অনেক নষ্ট হয়ে গেছে,,মসজিদে যেতে মন চাই না,,একসময় ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম,,কিভাবে না জানি খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে গেছি,,,আমি কুরআন পড়াও ভুলে গেছে,,সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চাই,,আমার জীবনের সমস্ত গুনাহ কে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে চাই।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কবুল করুন। পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন এবং হেদায়াতের ওপর অটল-অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
হেদায়াত লাভের প্রথম উপায় হলো, আল্লাহ তায়ালার কাছে হেদায়াত চাইতে হবে। কুরআনুল কারিমের প্রথম সুরা (সুরাতুল ফাতিহায়) আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন,
اِہۡدِنَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের সরল পথে পরিচালিত করুন। এছাড়াও কুতরআন
হজরত আবু যর আল গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর কাছে থেকে বর্ণনা করেন-
يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إلَّا مَنْ هَدَيْته، فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ
‘হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে পথহারা, আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। (মুসলিম-৬৩৩৮)
দ্বিতীয়ত সমস্ত গুনাহ বর্জন করে আল্লাহ তায়ালার বিধিবিধান অনুসারে চলতে হবে। আর তার সঠিক রাস্তা হলো, কোনো আল্লাহ ওয়ালাকে নিজের জীবনের রাহবার বানিয়ে নেওয়া। এবং তার দেখানো পথে কুরআন সুন্নাহ আনুযায়ী আমল করা।
কেননা আত্মশুদ্ধি (রুহের চিকিৎসা) ছাড়া মানুষের জীবনে সফলতা এবং প্রকৃত হেদায়াত আসতে পারে না। এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصّٰدِقِيْنَ ( التوبة: ١١٩ )
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।
আলহামদুলিল্লাহ ঢাকায় অনেক আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ আলেম (রূহানি চিকিৎসক) আছেন। আপনি অবশ্যই তাঁদের কারো সাথে সম্পর্ক করুন। তাদের মজলিসে যাতায়াত করুন। ইনশাআল্লাহ এই রোগ ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
এর জন্য আপনি শায়েখ মাহমুদুল হাসান হাফি. (যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসা), ঢালকা নগরের শায়খ আব্দুল মতিন বিন হুসাইন সাহেব, মুফতি জাফর আহমাদ সাহেব (গেন্ডারিয়া) মাওলানা তৈয়ব আশরাফ হাফি. (যাত্রাবাড়ী) মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন হাফি. (আকবর কমপ্লেক্স মিরপুর-১) মুফতি মুশতাকুন্নবী. (কুমিল্লা) মুফতি আবু সাঈদ (ফরিদাবাদ) মুফতি মানসুরুল হক সাহেব (মোহাম্মাদপুর) এবং উত্তরায় আছেন প্রফেসর হামিদুর রহমান সাহেবসহ যে কোনো একজনকে বেছে নিতে পারেন
মুফতি মুশতাকুন্নবী কাসেমী হাফিজাহুল্লাহ-এর বয়ানগুলো শোনুন। নিরবে নিবৃতে হযরতের বয়ানগুলো শোনুন। দিল দিয়ে শোনুন। ইনশাআল্লাহ আপনার জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এজাতীয় ওয়াসওয়াসা দূর হবে। সম্ভব হলে একদিন হুজুরের সাথে সাক্ষাত করুন। প্রতি ইংরেজি মাসের শেষ শনিবার তার মাদরাসায় ইসলাহী মাহফিল হয়। সারা দেশ থেকে আল্লাহ প্রেমিকগণ হাজির হন। আপনিও শরীক হতে চেষ্টা করুন। তার লিখিত ইসলাহী বইগুলো পড়ুন। রকমারীতে বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে।
মুফতি মুশতাকুন্নবী কাসেমী সাহেবের মাদরাসা ঠিকানা: দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড নেমে অটো রিক্সায় বা লোকাল মাইক্রোতে করে সুধন্যপুর মাদরাসা। ঢাকা হয়ে যেতে চাইলে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের আগে বেলতলী নেমে রাস্তা পার হয়ে রিক্সা/সি এন জিতে সুধন্যপুর মাদরাসা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন