প্রাইভেট মাদরাসায় জুমার জামাত
প্রশ্নঃ ৮৮১৬৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ভাড়ায় চালিত কোন মাদ্রাসায় জুমার নামাজের হুকুম কি? কুরআন হাদিস ও ফিকার কিতাবের রেফারেন্স সহ জানতে চাই
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
শরিয়তে ইসলামীতে জুমার নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। একারণেই জুমার জন্য কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে সেখানে জুমার নামাজ আদায় করা জুমার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়।পক্ষান্তরে মসজিদে বা বড় জায়গায় জুমা আদায় করলে মুসলমানদের শান-শওকত ও ঐতিহ্য প্রকাশ পায়। তাছাড়া শর্ত পাওয়া না গেলে জুমার নামাজ সহিহ হবে না।
সুতরাং মাদরাসা ভাড়ায় চালিত হোক আর স্থায়ী জায়গায় হোক উভয়টির হুকুম একই হবে। (জুমার শর্তসমূহ জানতে নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন।) কাজেই অতি নিকটে জুমার মসজিদ থাকার পরও মসজিদ ছাড়া কোনো স্থানে জুমার নামাজ আদায় করা উচিত হবে না।
একান্তুই যদি ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখে এমনটি করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে আমাদের পরামর্শ হলো, নাবালেগ ছাত্রদের মাদরাসায় রেখে বালেগ ছাত্রদের নিয়ে দায়িত্বশীল উস্তাদ মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করবেন। যেহেতু নাবালকের ওপর জুমা নেই তাই তাদের দায়বদ্ধতাও নেই। কিন্তু যদি শুধু নাবালেগদের রেখা যাওয়াও সম্ভব না হয় কিংবা অনিরাপদ মনে হয় তাহলে উস্তাদদে তত্ত্বাবধানে সকলেই মসজিদে গিয় জুমা পড়বে।
প্রয়োজন মসজিদের সন্নিকটের কোনো ভবনে মাদরাসা স্থানান্তর করে নিবে। তবুও যত্রতত্র জুমা কায়েম করবে না।
وفي الحلبی الكبیر
"وفي الفتاوی الغیاثیة: لوصلی الجمعة في قریة بغیر مسجد جامع والقریة کبیرة لها قری وفیها وال وحاکم جازت الجمعة بنوا المسجد أو لم یبنوا … والمسجد الجامع لیس بشرط، ولهذا أجمعوا علی جوازها بالمصلی في فناء المصر". (ص؛551، فصل فی صلاۃ الجمعۃ، ط؛ سہیل اکیڈمی)
জুমার শর্তসমূহ জানতে নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন। এভাবে জুমার নামাজ আদায় করা বৈধ হবে না। যদি ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয় সামনে রেখে এমনটি করা হয়ে থাকে তাহলে নাবালেগ ছাত্রদের মাদরাসায় রেখে বালেগ ছাত্রদের নিয়ে দায়িত্বশীল উস্তাদ মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করতে পারেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৩০২৬০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, জুমার সালাত জুমার মসজিদ বাদে অন্য কোনো খোলা মাঠে কি পড়া যাবে?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যদি জুমার নামাজের সকল শর্ত পাওয়া যায় তাহলে খোলা মাঠেও জুমার নামাজ পড়া জায়েজ আছে। জুমার শর্তসমূহ-
১. শহর বা উপশহর হতে হবে। গ্রামে বা জনমানবহীন বিয়াবানে জুমআর নামায শুদ্ধ হবে না।
২. জামাআত হতে হবে। ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লী হতে হবে। অর্থাৎ মোট
চারজন ছাড়া জুমআর নামায আদায় করা যাবে না।
৩. যোহরের সময় হতে হবে।
৪. সকলের জন্য আম অনুমতি থাকতে হবে।
৫. খুতবা দিতে হবে। [দ্রষ্টব্য-হেদায়া-১/১১৪-১১৬, শরহে নুকায়া-১/১২৩-১২৫, কাবীরী-৫৪-৫৫১]
গ্রাম বলতে এমন এলাকাকে বুঝায়, যেখানে রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিনিধি, মানুষের নিত্তপ্রয়োজনীয় আসবাব সহজলভ্য নয়। এমন সুবিধাবঞ্চিত এলাকাকে মূলত গ্রাম বলা হয়।
সুতরাং আমাদের বাংলাদেশের প্রচলিত গ্রাম যেখানে রাষ্ট্র প্রতিনিধিসহ আবশ্যকীয় সুবিধা বিদ্যমান, সেটাকে গ্রাম বলা যাবে না। বরং তা উপশহরের স্থলাভিষিক্ত হবে।
তবে খাগড়াছড়ি, বান্দরবনের গহীন জঙ্গলে বসবাসকারীগণ গ্রামের বাসিন্দা। তাদের উপর জুমআ আবশ্যক নয়।
সেই হিসেবে জনবহুল এলাকা থেকে দূরের মরু বিয়াবানেও জুমআর নামায পড়া যাবে না। যেমন সেনাবাহিনীর কোন ক্যাম্প যা গহীন পাহাড়ে স্থাপন করা হল। কিংবা মরু অঞ্চলের কোন বিয়াবনে ট্রেনিং এর জন্য সেনা ক্যাম্প করা হল। এসব স্থানে জুমআ পড়া যাবে না। যোহরের নামায আদায় করবে। কারণ, তা শহর বা উপশহর নয়।
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: «لَا جُمُعَةَ وَلَا تَشْرِيقَ إِلَّا فِي مِصْرٍ جَامِعٍ»
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, শহর ছাড়া জুমআ ও ঈদের নামায নেই। [মুসনাদে ইবনুল জা’দ, হাদীস নং-২৯৯০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১১৫৪, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫১৭৫, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদীস নং-৬৩৩০, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৬১৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫০৬৪]
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: «لَيْسَ عَلَى أَهْلِ الْقُرَى جُمُعَةٌ، إِنَّمَا الْجُمَعُ عَلَى أَهْلِ الْأَمْصَارِ، مِثْلِ الْمَدَائِنِ»
হযরত হুযাইফা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গ্রামে জুমআর নামায নেই। জুমআ হবে শহরে। যেমন মাদায়েন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫০৬০]
ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ বলেনঃ
وَقد تلقت الْأمة تلقيا معنويا من غير تلقي لفظ أَنه يشْتَرط فِي الْجُمُعَة الْجَمَاعَة وَنَوع من التمدن، وَكَانَ النبى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وخلفاؤه رَضِي الله عَنْهُم. وَالْأَئِمَّة المجتهدون رَحِمهم الله تَعَالَى يجمعُونَ فِي الْبلدَانِ، وَلَا يؤاخذون أهل البدو، بل وَلَا يُقَام فِي عَهدهم فِي البدو، ففهموا من ذَلِك قرنا بعد قرن وعصرا بعد عصر أَنه يشْتَرط لَهَا الْجَمَاعَة والتمدن
উম্মত শাব্দিকভাবে না হলেও মৌনভাবে এ বিষয়টি নির্ধারণ করেছে যে, জুমআর জন্য জামাআত এবং এক প্রকার সভ্যতা [শহর]থাকা শর্ত। আর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খুলাফায়ে রাশেদীন এবং আইয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন শহরেই জুমআ কায়েম করতেন। আর গ্রামের অধিবাসীদের এ বিষয়ে কোন দোষারোপ করতেন না। [না পড়ার কারণে] শুধু তাই নয়; তাদের জমানায় গ্রামে জুমআর নামায আদায় করা হতো না।
সুতরাং এর মাধ্যমেই যুগের পর যুগ, কালের পর কাল ধরে তারা বুঝে নিলেন যে, জুমআর নামায শুদ্ধ হবার জন্য শর্ত হল জামাআত ও সভ্যতা থাকা। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা-২/৩০,রশীদীয়া, বাইরুত ছাপা-২/৪৭]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩
মুমিনগণ,জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ( সুরা জুমা আয়াত ৯ )
আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য। (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)
শায়েখ মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
