পড়াশোনায় অমনোযোগী হলে রুকাইয়া
সমস্যা পড়াশোনায় খুব খেয়ালি এবং মেধাবী কেউ হঠাৎ করেই অমনোযোগী হয়ে পড়ে, পড়াশোনা থেকে দূরে সরে আসে বা পড়াশোনা ভাল লাগে না। লক্ষণ পরীক্ষার আগে অসুস্থ হওয়া, আগের মত পড়া মুখস্থ না হওয়া, ভুলে যাওয়া, আনমনা থাকা, অধৈর্য হওয়া, নিজের ব্যাপারে উদাসীন থাকা, অপরিছন্ন থাকা, ঘুম ঠিকমত না হওয়া ইত্যাদি। রুকইয়াহ ১. প্রথমে বদনজরের রুকইয়াহ করাবে ২. সুস্থ না হলে জাদুর রুকইয়াহ করাবে।
১নং পরামর্শ: পড়ালেখা করতে ইচ্ছা করে না কেন? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। অন্যান্য ব্যস্ততা কিংবা দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা। যদি প্রথম কারণ হয় তাহলে সেসব অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। পড়ালেখার জন্য একনিষ্ঠতা অপরিহার্য। অন্য সকল ব্যস্ততা পরিহার করলে ইনশাআল্লাহ মন বসতে থাকবে। আর যদি দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনার কারণে পড়ালেখার প্রতি মনোনিবেশ করতে না পারো তাহলে তার চিকিৎসা এই যে, আল্লাহর কাছে দোয়া কর।। নিজেকে ও নিজের সকল বিষয়কে আল্লাহ তাআলার কাছে সোপর্দ করে ভারমুক্ত হও এবং পড়াশোনায় মগ্ন হয়ে যাও। নিম্নের দোয়াটি মুখস্থ করে মাঝে মাঝে পড়বে– اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।” হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া পড়তেন। (বুখারী ২৮৯৩) মনে রাখবে, মন বসে না বলে বসে থাকা রোগবৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। মন বসে না-এই ওয়াসওয়াসাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। মন বসালেই বসবে, জোর করে কাজে লেগে গেলেই মন বসবে। এজন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে লেগে যাও। দুই- আর মুখস্থশক্তি বৃদ্ধির জন্য তোমার প্রতি পরামর্শ হল- ১। গুনাহ থেকে দূরে থাকবে। কারণ গুনাহর কারণে মুখস্থশক্তিতে দুর্বলতা আসে। খতীব আল-জামে নামক গ্রন্থে (২/৩৮৭) ইয়াইয়া বিন ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক মালেক বিন আনাসকে বললেন: হে আবু আব্দুল্লাহ! মুখস্তশক্তি বাড়ানোর কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন: যদি কোন কিছু থাকে তাহলে সেটা হল: গুনাহ পরিত্যাগ করা। যখন কোন মানুষ গুনাহ করে তখন এ গুনাহটি তাকে ঘিরে রাখে এবং গুনাহর ফলে তাকে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে। সে গুনাহর কারণে তার চিন্তাধারা মশগুল হয়ে থাকে। এভাবে এ দুশ্চিন্তা তার অনুভূতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং তাকে অনেক কল্যাণকর কাজ থেকে দূরে রাখে। এর মধ্যে মুখস্থশক্তি অন্যতম। গুনাহ ত্যাগ করার কৌশল জানতে হলে পড়ে নাও–জিজ্ঞাসা নং–১২৪ ২। অধিক হারে আল্লাহর যিকির করবে। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: واذكر ربك إذا نسيت“যখন ভুলে যান তখন আল্লাহর যিকির করুন”। (সূরা কাহাফ: ২৪) ৩। কোন কোন আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিসমিস খাওয়া। ইমাম যুহরী বলেন: তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল। তিনি আরও বলেন: যে হাদিস মুখস্ত করতে চায় সে যেন কিসমিস খায়। (খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ ২/৩৯৪) আলেমগণ আরও বলেন: অম্লজাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তির জড়তা ও মুখস্থশক্তির দুর্বলতা বাড়ায়। ৫। মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধে আরও যে জিনিসটি সাহায্য করে সেটি হচ্ছে- মাথায় শিংগা লাগানো। এটি পরীক্ষিত। (আরও বিস্তারিত জানতে ইবনুল কাইয়্যেম এর ‘আততিব্ব আন-নাবাবি’ পড়)। ২নং পরামর্শ: পড়াশোনায় ও ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগ নিবদ্ধ করার জন্য সর্বপ্রথম পরামর্শ হলো, যে বিষয়টি অর্জন করতে চাচ্ছেন তার প্রতি একনিষ্ঠ হোন। বিভিন্নমুখী চিন্তা, কার্যক্রম, পদক্ষেপ, মন-মানসিকতা ও জেহেনকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। তাই পড়াশুনায় মনোযোগ আনতে চাইলে পড়াশোনার প্রতি আত্মনিয়োগ করুন। যাবতীয় গুনাহ পরিত্যাগ করুন। বিশেষ করে চোখের গুনাহ থেকে অবশ্যই নিজেকে পরিপূর্ণ হেফাজত করুন। প্রতিদিন কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করুন। বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পড়ুন। আরো পড়ুন- ربي يسر ولا تعسر وتمم علينا بالخير وبك نستعين يا مستعان. উচ্চারণঃ রব্বি ইয়াসসির ওয়া লা তুআসসির ওয়া তাম্মিম আলাইনা বিল খাইর, ওয়া বিকা নাস্তাঈনু য়া মুস্তাআন।
দু'আর বিষয়সমূহ
38টি বিষয় পাওয়া গেছে