রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
رياض الصالحين من كلام سيد المرسلين
ভূমিকা অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ২০ টি
হাদীস নং: ১
ভূমিকা অধ্যায়
ইমাম নববী রাহঃ-এর ভূমিকাঃ 
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। তিনি এক, মহা শক্তিশালী, প্রবল পরাক্রান্ত, মহা ক্ষমাশীল। তিনি হৃদয়বান ও চিন্তাশীল লোকদের উপদেশদান এবং জ্ঞানী ও শিক্ষাগ্রহণকারী লোকদের অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচনের জন্য রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান। তিনি তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে যাকে চান সজাগ করেন। তিনি তাদেরকে ইহজগতের ব্যাপারে নির্মোহ করে। তোলেন এবং তাদেরকে মশগুল করে দেন তাঁর ধ্যানে, সার্বক্ষণিক ফিকিরে এবং উপদেশ ও শিক্ষাগ্রহণে। তিনি তাদেরকে তাঁর আনুগত্যে অভ্যস্ত হওয়ার তাওফীক দান করেন এবং অনন্ত নিবাসের জান্নাতলাভের জন্য প্রস্তুতিগ্রহণে সাহায্য করেন। তিনি তাদেরকে সতর্ক রাখেন যাতে এমন কোনও কাজ না করে, যা তাঁর অসন্তুষ্টির কারণ হয় এবং তাদের জন্য ধ্বংসের নিবাস জাহান্নাম অবধারিত করে। সেইসংগে অবস্থা ও পরিবেশ- পরিস্থিতির আবর্তন-বিবর্তনে তাদেরকে সঠিক পথে অবিচল থাকারও তাওফীক দেন।
আমি তাঁর প্রশংসা করছি চূড়ান্ত প্রশংসা। আমি তাঁর প্রশংসা করছি বিশুদ্ধতম ও পরিপূর্ণ প্রশংসা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই। তিনি পুণ্যময় ও মহানুভব। তিনি দয়ার্দ্র, পরমদয়ালু। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তাঁর হাবীব ও খলীল। তিনি সরল সঠিক পথের দিশারী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত দীনের আহ্বায়ক। আল্লাহর রহমত ও তাঁর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর প্রতি ও সমস্ত নবী-রাসূলগনের প্রতি এবং প্রত্যেক নবীর পরিবারবর্গ ও সমস্ত নেককার বান্দার প্রতি।
তারপর বক্তব্য এই যে, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ
"আমি জিন্ন ও ইনসানকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে রিযক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিক।"
এর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তাদেরকে কেবল ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং যে উদ্দেশ্যে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, তাদের অবশ্যকর্তব্য তার প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং নির্মোহ জীবনযাপনের মাধ্যমে দুনিয়ার ভোগবিলাস পরিহার করে চলা। কেননা এটা নশ্বর জগত। চিরদিন থাকার জায়গা নয়। এটা (পরকালীন গন্তব্যস্থলে) পৌঁছার বাহন, ফুর্তির জায়গা নয়। এবং এটা বিচ্ছিন্নতার ঘাঁটি, স্থায়ী ঠিকানা নয়। সুতরাং ইবাদতকারী বান্দাগণই এর সচেতন বাসিন্দা এবং নির্মোহ জীবন-যাপনকারীগণই এর সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান লোক।
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّى إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَنْ لَمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
“পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো কিছুটা এ রকম, যেমন আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, যদ্দরুন ভূমিজ সেইসব উদ্ভিদ নিবিড় ঘন হয়ে জন্মাল, যা মানুষ ও গবাদি পশু খেয়ে থাকে । অবশেষে ভূমি যখন নিজ শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকগণ মনে করে এখন তা সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন, তখন কোনও এক দিনে বা রাতে তাতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে (এই মর্মে যে, তার উপর কোনও দুর্যোগ আপতিত হোক) এবং আমি তাকে কর্তিত ফসলের এমন শূন্য ভূমিতে পরিণত করি, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। যে সকল লোক চিন্তা করে তাদের জন্য এভাবেই নিদর্শনাবলি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করি।”
এ বিষয়ে বহু আয়াত আছে। জনৈক কবি বড় সুন্দর বলেছেন-
إِنَّ لِلَّهِ عِبَادًا فطنا + طلقوا الدنيا وخافوا الفتنا
نظروا فيها فلما علموا + انها ليست لحي وطنا
جعلواها لجة واتخذوا + صالِحَ الْأَعْمَالِ فِيهَا سُفنا
 
“আল্লাহর কিছু বান্দা আছে, যারা ত্যাগ করেছে দুনিয়া, ভয় করেছে ফিতনার।
তারা দৃষ্টি দিল দুনিয়ার প্রতি। যখন জানতে পারল, নয় এটা কোনও জীবিতের স্থায়ী ঠিকানা,
তখন একে গণ্য করেছে সাগর, আর করেছে অবলম্বন নেক আমলসমূহকে এ সাগর উতরানোর জাহাজরূপে।'
তো এই যে বললাম দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর আমাদেরকে এখানে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত করার জন্য, তখন আমাদের কর্তব্য নেককারদের পথ অবলম্বন করা এবং বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীজনদের পথে চলা। ইঙ্গিত করে এসেছি যে, প্রকৃত বুদ্ধিমানেরা দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ থেকে ইবাদত-বন্দেগীতে মগ্ন থাকতেন। আমাদের কর্তব্য তাদের অনুরূপ কাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণের প্রতি যত্নবান হওয়া। এ ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ পন্থা ও সরল সঠিক তরীকা হল নবী কারীম (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত শিক্ষামালা ও আদব-শিষ্টাচার অবলম্বন করা। তিনি পূর্বাপর সমস্ত মানুষের নেতা। আগের ও পরের সকল মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশী মর্যাদাবান। তাঁর ও সমস্ত নবীর প্রতি বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও শান্তি।
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
'তোমরা নেককাজ ও তাকওয়ায় একে অন্যকে সাহায্য কর।'
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধসূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইরশাদ করেন-
والله في عون العبد ما كان العبد في عون أخيه
“বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে লেগে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তা'আলাও তার সাহায্য করতে থাকেন।”
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
منْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرٍ فَاعِلِهِ.
“যে ব্যক্তি কোনও নেক কাজের পথ দেখায়, তার জন্য রয়েছে ওই নেক কাজের কর্তার অনুরূপ ছওয়াব।"
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
من دعا إلى هدى كان له من الأجر مثل أجور من تبعده لا ينقص ذلك من أجورهم شيئا
যে ব্যক্তি কোনও সৎকর্মের দিকে ডাকে, তার জন্য রয়েছে ওই সৎকর্মের অনুসরণকারীদের সমান ছওয়ার। তাতে তাদের ছওয়াব একটুও কমে না।”
নবী কারীম (ﷺ) হযরত আলী রাযিঃ-কে উপদেশ দেন-
فو الله لأن يَهْدِي الله بك رَجُلًا واحدًا خير لك من حمر النعم.
"আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তা'আলা তোমার দ্বারা একজন লোককেও হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য একপাল লাল উট অপেক্ষাও উত্তম। (লাল উটের কথা বলা হয়েছে সেকালের দিকে লক্ষ করে। সেকালে এটাই ছিল সর্বাপেক্ষা দামী সম্পদ। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- কারও হিদায়াতের জন্য মেহনত করা আল্লাহর কাছে দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা দামী সম্পদ অপেক্ষাও মূল্যবান।)
সুতরাং আমি চিন্তা করলাম সহীহ হাদীছের একটি সংক্ষিপ্ত সংকলন তৈরী করব। তাতে এমনসব হাদীছ থাকবে, যা হবে এর পাঠকের জন্য আখিরাতের দিকে চলার পথস্বরূপ। পাঠক তা দ্বারা জাহেরী ও বাতেনী আদব-কায়দা শিখতে পারবে। তাতে প্রেরণাদায়ী ও সতর্ককারী- এ উভয়রকম হাদীছ থাকবে। এমনিভাবে তাতে থাকবে আল্লাহর পথের পথিকদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় শিক্ষাসংক্রান্ত হাদীছ। যথা- যুহদ (দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তি) সম্পর্কিত হাদীছ, আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র গঠনমূলক হাদীছ, কলবের পবিত্রতা ও আত্মিক রোগ নিরাময় সংক্রান্ত হাদীছ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজত ও তার বক্রতা নিরসনমূলক হাদীছ। এমনিভাবে আল্লাহর মা'রিফাত ও তত্ত্বজ্ঞানসম্পন্ন লোকদের কাঙ্ক্ষিত অন্যান্য বিষয় সম্বলিত হাদীছসমূহও তাতে থাকবে।
এ সংকলনে আমার নীতি হবে কেবল বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট অর্থবোধক হাদীছসমূহই উল্লেখ করা। প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থসমূহের বরাতও উল্লেখ করে দেব। প্রতিটি অধ্যায় শুরু করব কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা। কোনও শব্দের উচ্চারণ নিরূপণ করে দেওয়ার প্রয়োজন হলে তাও করে দেব। অস্পষ্ট অর্থেরও ব্যাখ্যা করে দেব। সেইসংগে উৎকৃষ্ট কোনও জ্ঞাতব্য বিষয় থাকলে তা উল্লেখ করব। কোনও হাদীছের শেষে যদি লিখি, متفق عليه তবে তার অর্থ এ হাদীছটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উভয়ই উল্লেখ করেছেন।
যদি এ গ্রন্থখানি সংকলনের কাজ শেষ হতে পারে, তবে আমি আশা করি এটি মনোযোগী পাঠককে কল্যাণের পথে টেনে নেবে এবং তাকে সবরকম মন্দ ও ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত রাখবে।
যে-কোনও ভাই এর দ্বারা কিছুমাত্র উপকৃত হবেন তার কাছে আমার নিবেদন- তিনি যেন আমার জন্য, আমার মা-বাবার জন্য, আমার উস্তাযগণের জন্য, আমার সকল বন্ধু-বান্ধবের জন্য এবং সমস্ত মুসলিম নর-নারীর জন্য দু'আ করেন।
মহান আল্লাহর প্রতি আমার ভরসা। তাঁর উপরই আমি নিজেকে ও আমার যাবতীয় বিষয় ন্যস্ত করি । আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময় আল্লাহ ছাড়া কারও কোনও ভালো কাজ করার শক্তি নেই এবং নেই কোনও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষমতা।
বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীমঃ
অধ্যায়: ১
সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
এ অধ্যায়ে ইখলাস ও সহীহ নিয়ত সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে।
নিয়ত : নিয়ত অর্থ কোনও কাজে মনের ইচ্ছা যোগ করা। এই ইচ্ছা দু'রকম হতে পারে-
এক. এমন ইচ্ছা, যা দ্বারা কাজ নির্দিষ্ট করা হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন রকম কাজ ও ইবাদতের ভেতর আমি কোনটা করতে চাই, মনে মনে তা নির্দিষ্ট করে নেওয়া। নামায ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল বিভিন্ন রকম হতে পারে। তাছাড়া আছে ওয়াক্তিয়া নামায ও কাযা নামায। কাযাও বিভিন্ন ওয়াক্তের হতে পারে। অনুরূপ রোযাও বিভিন্ন রকম আছে। রমযানের কাযা রোযা, মানতের রোযা, কাফফারার রোযা, নফল রোযা ইত্যাদি। তো আমি যখন নামায পড়ব বা রোযা রাখব, তখন এই বিভিন্ন রকম নামায ও রোযার ভেতর কোনটা আদায় করতে যাচ্ছি মনে মনে তা ঠিক করে নেওয়া, যেমন আমি ফজরের দু' রাক'আত সুন্নত পড়ছি বা দু' রাকাআত ফরয পড়ছি, আমি রমযানের ছুটে যাওয়া রোযার কাযা করছি, মানতের রোযা রাখছি কিংবা নফল রোযা রাখছি ইত্যাদি। যেকোনও ইবাদত শুরুর আগে তা নির্দিষ্ট করার জন্য এরূপ নিয়ত করা জরুরী, অন্যথায় সে ইবাদত সহীহ হয় না।
দুই. এমন ইচ্ছা, যা দ্বারা কাজের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করা হয়। অর্থাৎ আমি যে কাজটি করছি তা কী উদ্দেশ্যে করছি? আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য, না পার্থিব কোনও স্বার্থ হাসিলের জন্য? আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকলে তাকে বলা হবে সহীহ নিয়ত। আর যদি মানুষকে খুশি করার জন্য করা হয় বা সুনাম-সুখ্যাতি লাভের উদ্দেশ্য থাকে, তবে তা হবে ফাসিদ নিয়ত। ফাসিদ নিয়তে ইবাদত-বন্দেগী করলে তা আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয় না, বাহ্যদৃষ্টিতে তা যতই সুন্দর ও বিশুদ্ধ মনে হোক না কেন। আল্লাহ তা'আলার কাছে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত সহীহ থাকা শর্ত। সহীহ নিয়তেরই অপর নাম ইখলাস।
ইখলাস : ইখলাস মানে খালেস ও মুক্ত করা। ইবাদত-বন্দেগীতে ইখলাস হল- তাকে ভ্রান্ত উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত রেখে কেবল আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য সম্পন্ন করা। অর্থাৎ নামায, রোযা ইত্যাদি আদায় করা হবে কেবলই আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার জন্য, দুনিয়ার কোনও কিছু পাওয়ার জন্য নয়। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاء وَلَا شُكُورا-
অর্থ : (এবং তাদেরকে বলে,) আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।
প্রকাশ থাকে যে, ইসলামে ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। বলা যায় এটা গোটা দীনের অর্ধাংশ। কেননা যেকোনও কাজ আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার জন্য বা দীনী কাজ সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দু'টি শর্ত। (ক) কাজটি সঠিক হওয়া এবং (খ) তা খালেস হওয়া। যদি কোনও কাজ সঠিক হয় কিন্তু খালেস না হয়, তা আল্লাহ কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। অনুরূপ যদি খালেস হয় কিন্তু সঠিক না হয়, তাও গৃহীত হয় না। গৃহীত হওয়ার জন্য সঠিক হওয়া ও খালেস হওয়া উভয়ই জরুরি। বলা বাহুল্য, কাজ সঠিক হয় সুন্নত মোতাবেক হওয়ার দ্বারা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন, সেই মোতাবেক হওয়ার দ্বারা। এককথায় শরীআতসম্মত কাজই সঠিক কাজ। শরী'আতে যে কাজের অনুমোদন নেই তা ভ্রান্ত কাজ। এরূপ কাজে সহীহ নিয়তের প্রশ্নই আসে না। এরূপ কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে করলে ছওয়াব তো পাওয়াই যাবে না; বরং দ্বিগুণ গুনাহ হবে। যেমন কেউ চুরি-ডাকাতি করে বা সুদ-ঘুষ খেয়ে সেই অর্থ গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করল এবং আশা রাখল যে, এটা অনেক বড় দীনী কাজ হল আর আল্লাহ তা'আলা এতে খুশি হবেন। তার আশা দুরাশা মাত্র, বরং এটা আল্লাহ তা'আলার সংগে একরকম পরিহাস। না'উযুবিল্লাহি মিন যালিক।
সমস্ত বিদআতী কাজও এর পর্যায়ভুক্ত। নিজের পক্ষ থেকে কোনও কাজকে দ্বীনের অংশ সাব্যস্ত করাকে বিদআত বলে। এটা শরীআতে সংযোজন করার নামান্তর, যেমন চল্লিশা করা, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বিতরণ করা, মাজারে শিরনী দেওয়া, মৃত ব্যক্তির ঘরে তিন দিন চুলা জ্বালানো দুষনীয় মনে করা ইত্যাদি। বিদআত করা কঠিন গুনাহ।
সুতরাং কেউ যদি ইখলাসের সাথে এরূপ কাজ করে অর্থাৎ এরূপ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের আশা রাখে, তবে তাতে সন্তুষ্টিলাভ তো হাসিল হবেই না, উল্টো গুনাহ হবে। কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ কেবল শরী'আতসম্মত কাজের দ্বারাই সম্ভব।
আর কাজ খালেস হয় সহীহ নিয়ত ও ইখলাসের দ্বারা। অর্থাৎ শরীআতসম্মত কাজটি যদি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয়, তবেই সে কাজ আল্লাহ তা'আলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এরূপ কাজে যদি ইখলাস না থাকে, তবে তাতে কোনও ছওয়াব লাভ হয় না, উল্টো গুনাহ হয়। যেমন কেউ যদি 'লোকে হাজী সাহেব বলবে' এই উদ্দেশ্যে হজ্জ করে, তবে সেই হজ্জ দ্বারা আখিরাতে তার কোনও কিছুই লাভ হবে না। ইবাদতে এরূপ উদ্দেশ্য থাকলে তাকে "রিয়া" বলে। রিয়াকে বলে গুপ্ত শিরক, যেহেতু আল্লাহর জন্য ইবাদত করার পাশাপাশি গায়রুল্লাহকে খুশি করা ও গায়রুল্লাহর কাছে সুনাম ও সুখ্যাতি লাভেরও ইচ্ছা থাকে। এরূপ শিরকের নিষেধাজ্ঞায় কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
فمن كان يَرْجُوا لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَ لَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبَّه أَحَدا-
অর্থ : সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।
অর্থাৎ তাঁর যেহেতু কোনও শরীক নেই, তাই ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। তাতে স্থূল তো নয়ই, সূক্ষ্ম শিরকও পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ নিয়ত থাকবে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করা। রিয়া বা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে তাও এক ধরনের শিরক, তাতে ইবাদতের ভেতর সূক্ষ্মভাবে মানুষকে শরীক করা হয়।
এক হাদীছ দ্বারা জানা যায়, সুনাম-সুখ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে যারা ইবাদত-বন্দেগী করে, তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ এক হাদীছে একজন শহীদ, একজন আলেম ও একজন দানশীল লোকের কথা বলা হয়েছে, যাদের উদ্দেশ্য আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন ছিল না, বরং উদ্দেশ্য ছিল কেবলই মানুষের মাঝে সুনাম অর্জন করা, আপন-আপন স্থানে অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে হুকুম হবে- এদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। এর কারণ কেবল এই যে, তাদের অন্তরে ইখলাস ছিল না।
এর দ্বারা ইখলাস যে কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইখলাসের এ গুরুত্ব কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আছে বহু হাদীছও। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে প্রথমে এ রকম কিছু আয়াত, তারপর কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। নিচে আমরা এসব আয়াত ও হাদীছের অর্থ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তাআলাই তাওফীকদাতা।
ইখলাস সম্পর্কে কতিপয় আয়াত:
এক নং আয়াত -
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ} [البينة: 5]
অর্থঃ তাদেরকে কেবল এই আদেশই করা হয়েছিল যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, আনুগত্যকে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই জন্য খালেস রেখে এবং নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে আর এটাই সরল সঠিক উম্মতের দ্বীন।
ব্যাখ্যা:
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা জানাচ্ছেন, আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টান জাতির প্রতি নির্দেশ ছিল, তারা যেন ইখলাস ও বিশুদ্ধ নিয়তের সাথে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে। অর্থাৎ ইবাদতের উদ্দেশ্য যেন আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভই হয়, অন্য কোনও উদ্দেশ্য না থাকে। নামায, রোযা ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদতে লক্ষ থাকবে কেবলই তাঁর সন্তুষ্টি। বলাবাহুল্য, এ আদেশ তাদেরকে তাদের আসমানী কিতাবেই দেয়া হয়েছিল; তাওরাত ও ইনজীলে। সেই নির্দেশ কুরআন মাজীদে উল্লেখ দ্বারা প্রমাণ হয়, এটা সমস্ত জাতির প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক সাধারণ হুকুম। আগের জাতিসমূহকে যেমন ইখলাসের সাথে ইবাদত-বন্দেগীর হুকুম দেওয়া হয়েছিল, তেমনি এ জাতির প্রতিও সেই হুকুম বলবৎ আছে। ইখলাসবিহীন ইবাদত যেমন পূর্বকালে গ্রহণযোগ্য ছিল না, তেমনি একালেও তা গ্রহণযোগ্য নয় ।
আয়াতে ইখলাসের সংগে ইবাদত-বন্দেগী করাকে সরল সঠিক দ্বীন সাব্যস্ত করা হয়েছে। তার মানে বান্দার কর্তব্য নিয়মিত ইবাদত-বন্দেগী করা এবং আল্লাহর যাবতীয় হুকুম মেনে চলা, সেইসংগে ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর হুকুম পালনে ইখলাসের পরিচয় দেওয়া। ইখলাসের সংগে আল্লাহর হুকুম পালন করা না হলে বান্দা যা কিছুই করুক না কেন, তা দ্বীনরূপে গণ্য হবে না। এর দ্বারা ইখলাসের গুরুত্ব পরিস্ফুট। সুতরাং আমাদের কর্তব্য এ গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং সমস্ত আমলে ইখলাস ও বিশুদ্ধ নিয়তের প্রতি যত্নবান থাকা ।
দুই নং আয়াত:
وَقالَ تَعَالَى: {لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلاَ دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ} [الحج: 37]
অর্থ : আল্লাহর কাছে তাদের গোশত (অর্থাৎ কুরবানীর পশু) পৌঁছে না আর তাদের রক্তও না, বরং তাঁর কাছে তো তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে।
ব্যাখ্যা:
এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, জাহিলী যুগের মানুষ কুরবানীর পশুর রক্ত বায়তুল্লাহ শরীফে মাখিয়ে দিত। তার অনুকরণে মুসলিমগণও চাইল তাদের কুরবানীর পশুর রক্ত কাবা ঘরে মাখিয়ে দেবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন। এর দ্বারা জানানো হয়, কাবা ঘরে রক্ত মাখানো একটি অহেতুক কাজ। কুরবানীর পশুর রক্ত ও তার গোশত কোনোকিছুই তো আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। রক্ত মাটিতে মিশে যায় আর গোশত কুরবানীদাতা নিজেই খেয়ে থাকে। পশুর অন্যান্য অংশও তার উপকারে আসে। এর কোনোকিছুই আল্লাহর কোনও কাজে আসে না। তিনি কেবল দেখেন তোমাদের মনের অবস্থা। অর্থাৎ তোমরা কুরবানী করছ তাঁর সন্তষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, না সুনাম- সুখ্যাতি লাভ বা অন্য কোনও দুনিয়াবী লক্ষ্যে। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী করে থাক, তবে তোমাদের এই ইখলাস ও সদিচ্ছার বিষয়টা তাঁর কাছে পৌঁছে। অর্থাৎ এরকম কুরবানী তিনি কবুল করে নেন এবং এর বিনিময়ে বান্দাকে প্রভূত ছওয়াব দান করেন। এ আয়াত দ্বারাও সহীহ নিয়ত ও ইখলাসের গুরুত্ব বোঝা গেল।
তিন নং আয়াত:
وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ} [آل عمران: 29]
অর্থ: (হে রাসূল! মানুষকে বলে দাও, তোমাদের অন্তরে যা-কিছু আছে, তোমরা তা গোপন রাখ বা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন ।
ব্যাখ্যা:
অর্থাৎ তোমরা এ কথা মনে করো না যে, ইখলাস তো মনের বিষয়। আমি কোন কাজ কী নিয়তে করছি তা তো কেউ জানে না। বাহ্যিকভাবে কাজ সঠিক হলেই হল। মনে কি আছে না আছে, তা কে দেখে? এরূপ মনে করা নিতান্তই ভুল। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্য ও গুপ্ত সবকিছুই দেখেন ও জানেন। কার মনে কি আছে তারও খবর তিনি রাখেন। তিনি অন্তর্জামী। তিনি মনের অবস্থা অনুযায়ী কাজের ফলাফল দান করবেন। তিনি যেমন তোমাদের দেহের স্রষ্টা, তেমনি মনেরও। ফলে দেহ ও মনের কোনোকিছুই তাঁর অগোচরে থাকতে পারে না। তিনি ইরশাদ করেন-
الا يعلم من خلق وَهُوَ اللطيف الخبير -
"যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি জানবেন না? অথচ তিনি সূক্ষদর্শী, সম্যক জ্ঞাত।”
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। তিনি এক, মহা শক্তিশালী, প্রবল পরাক্রান্ত, মহা ক্ষমাশীল। তিনি হৃদয়বান ও চিন্তাশীল লোকদের উপদেশদান এবং জ্ঞানী ও শিক্ষাগ্রহণকারী লোকদের অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচনের জন্য রাত ও দিনের আবর্তন ঘটান। তিনি তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে যাকে চান সজাগ করেন। তিনি তাদেরকে ইহজগতের ব্যাপারে নির্মোহ করে। তোলেন এবং তাদেরকে মশগুল করে দেন তাঁর ধ্যানে, সার্বক্ষণিক ফিকিরে এবং উপদেশ ও শিক্ষাগ্রহণে। তিনি তাদেরকে তাঁর আনুগত্যে অভ্যস্ত হওয়ার তাওফীক দান করেন এবং অনন্ত নিবাসের জান্নাতলাভের জন্য প্রস্তুতিগ্রহণে সাহায্য করেন। তিনি তাদেরকে সতর্ক রাখেন যাতে এমন কোনও কাজ না করে, যা তাঁর অসন্তুষ্টির কারণ হয় এবং তাদের জন্য ধ্বংসের নিবাস জাহান্নাম অবধারিত করে। সেইসংগে অবস্থা ও পরিবেশ- পরিস্থিতির আবর্তন-বিবর্তনে তাদেরকে সঠিক পথে অবিচল থাকারও তাওফীক দেন।
আমি তাঁর প্রশংসা করছি চূড়ান্ত প্রশংসা। আমি তাঁর প্রশংসা করছি বিশুদ্ধতম ও পরিপূর্ণ প্রশংসা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই। তিনি পুণ্যময় ও মহানুভব। তিনি দয়ার্দ্র, পরমদয়ালু। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তাঁর হাবীব ও খলীল। তিনি সরল সঠিক পথের দিশারী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত দীনের আহ্বায়ক। আল্লাহর রহমত ও তাঁর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর প্রতি ও সমস্ত নবী-রাসূলগনের প্রতি এবং প্রত্যেক নবীর পরিবারবর্গ ও সমস্ত নেককার বান্দার প্রতি।
তারপর বক্তব্য এই যে, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ
"আমি জিন্ন ও ইনসানকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে রিযক চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিক।"
এর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তাদেরকে কেবল ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং যে উদ্দেশ্যে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, তাদের অবশ্যকর্তব্য তার প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং নির্মোহ জীবনযাপনের মাধ্যমে দুনিয়ার ভোগবিলাস পরিহার করে চলা। কেননা এটা নশ্বর জগত। চিরদিন থাকার জায়গা নয়। এটা (পরকালীন গন্তব্যস্থলে) পৌঁছার বাহন, ফুর্তির জায়গা নয়। এবং এটা বিচ্ছিন্নতার ঘাঁটি, স্থায়ী ঠিকানা নয়। সুতরাং ইবাদতকারী বান্দাগণই এর সচেতন বাসিন্দা এবং নির্মোহ জীবন-যাপনকারীগণই এর সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান লোক।
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّى إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَنْ لَمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
“পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো কিছুটা এ রকম, যেমন আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, যদ্দরুন ভূমিজ সেইসব উদ্ভিদ নিবিড় ঘন হয়ে জন্মাল, যা মানুষ ও গবাদি পশু খেয়ে থাকে । অবশেষে ভূমি যখন নিজ শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকগণ মনে করে এখন তা সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন, তখন কোনও এক দিনে বা রাতে তাতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে (এই মর্মে যে, তার উপর কোনও দুর্যোগ আপতিত হোক) এবং আমি তাকে কর্তিত ফসলের এমন শূন্য ভূমিতে পরিণত করি, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। যে সকল লোক চিন্তা করে তাদের জন্য এভাবেই নিদর্শনাবলি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করি।”
এ বিষয়ে বহু আয়াত আছে। জনৈক কবি বড় সুন্দর বলেছেন-
إِنَّ لِلَّهِ عِبَادًا فطنا + طلقوا الدنيا وخافوا الفتنا
نظروا فيها فلما علموا + انها ليست لحي وطنا
جعلواها لجة واتخذوا + صالِحَ الْأَعْمَالِ فِيهَا سُفنا
“আল্লাহর কিছু বান্দা আছে, যারা ত্যাগ করেছে দুনিয়া, ভয় করেছে ফিতনার।
তারা দৃষ্টি দিল দুনিয়ার প্রতি। যখন জানতে পারল, নয় এটা কোনও জীবিতের স্থায়ী ঠিকানা,
তখন একে গণ্য করেছে সাগর, আর করেছে অবলম্বন নেক আমলসমূহকে এ সাগর উতরানোর জাহাজরূপে।'
তো এই যে বললাম দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর আমাদেরকে এখানে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত করার জন্য, তখন আমাদের কর্তব্য নেককারদের পথ অবলম্বন করা এবং বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীজনদের পথে চলা। ইঙ্গিত করে এসেছি যে, প্রকৃত বুদ্ধিমানেরা দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ থেকে ইবাদত-বন্দেগীতে মগ্ন থাকতেন। আমাদের কর্তব্য তাদের অনুরূপ কাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণের প্রতি যত্নবান হওয়া। এ ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ পন্থা ও সরল সঠিক তরীকা হল নবী কারীম (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত শিক্ষামালা ও আদব-শিষ্টাচার অবলম্বন করা। তিনি পূর্বাপর সমস্ত মানুষের নেতা। আগের ও পরের সকল মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশী মর্যাদাবান। তাঁর ও সমস্ত নবীর প্রতি বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও শান্তি।
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
'তোমরা নেককাজ ও তাকওয়ায় একে অন্যকে সাহায্য কর।'
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধসূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইরশাদ করেন-
والله في عون العبد ما كان العبد في عون أخيه
“বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে লেগে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তা'আলাও তার সাহায্য করতে থাকেন।”
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
منْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرٍ فَاعِلِهِ.
“যে ব্যক্তি কোনও নেক কাজের পথ দেখায়, তার জন্য রয়েছে ওই নেক কাজের কর্তার অনুরূপ ছওয়াব।"
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
من دعا إلى هدى كان له من الأجر مثل أجور من تبعده لا ينقص ذلك من أجورهم شيئا
যে ব্যক্তি কোনও সৎকর্মের দিকে ডাকে, তার জন্য রয়েছে ওই সৎকর্মের অনুসরণকারীদের সমান ছওয়ার। তাতে তাদের ছওয়াব একটুও কমে না।”
নবী কারীম (ﷺ) হযরত আলী রাযিঃ-কে উপদেশ দেন-
فو الله لأن يَهْدِي الله بك رَجُلًا واحدًا خير لك من حمر النعم.
"আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তা'আলা তোমার দ্বারা একজন লোককেও হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য একপাল লাল উট অপেক্ষাও উত্তম। (লাল উটের কথা বলা হয়েছে সেকালের দিকে লক্ষ করে। সেকালে এটাই ছিল সর্বাপেক্ষা দামী সম্পদ। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- কারও হিদায়াতের জন্য মেহনত করা আল্লাহর কাছে দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা দামী সম্পদ অপেক্ষাও মূল্যবান।)
সুতরাং আমি চিন্তা করলাম সহীহ হাদীছের একটি সংক্ষিপ্ত সংকলন তৈরী করব। তাতে এমনসব হাদীছ থাকবে, যা হবে এর পাঠকের জন্য আখিরাতের দিকে চলার পথস্বরূপ। পাঠক তা দ্বারা জাহেরী ও বাতেনী আদব-কায়দা শিখতে পারবে। তাতে প্রেরণাদায়ী ও সতর্ককারী- এ উভয়রকম হাদীছ থাকবে। এমনিভাবে তাতে থাকবে আল্লাহর পথের পথিকদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় শিক্ষাসংক্রান্ত হাদীছ। যথা- যুহদ (দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তি) সম্পর্কিত হাদীছ, আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র গঠনমূলক হাদীছ, কলবের পবিত্রতা ও আত্মিক রোগ নিরাময় সংক্রান্ত হাদীছ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজত ও তার বক্রতা নিরসনমূলক হাদীছ। এমনিভাবে আল্লাহর মা'রিফাত ও তত্ত্বজ্ঞানসম্পন্ন লোকদের কাঙ্ক্ষিত অন্যান্য বিষয় সম্বলিত হাদীছসমূহও তাতে থাকবে।
এ সংকলনে আমার নীতি হবে কেবল বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট অর্থবোধক হাদীছসমূহই উল্লেখ করা। প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থসমূহের বরাতও উল্লেখ করে দেব। প্রতিটি অধ্যায় শুরু করব কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা। কোনও শব্দের উচ্চারণ নিরূপণ করে দেওয়ার প্রয়োজন হলে তাও করে দেব। অস্পষ্ট অর্থেরও ব্যাখ্যা করে দেব। সেইসংগে উৎকৃষ্ট কোনও জ্ঞাতব্য বিষয় থাকলে তা উল্লেখ করব। কোনও হাদীছের শেষে যদি লিখি, متفق عليه তবে তার অর্থ এ হাদীছটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উভয়ই উল্লেখ করেছেন।
যদি এ গ্রন্থখানি সংকলনের কাজ শেষ হতে পারে, তবে আমি আশা করি এটি মনোযোগী পাঠককে কল্যাণের পথে টেনে নেবে এবং তাকে সবরকম মন্দ ও ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত রাখবে।
যে-কোনও ভাই এর দ্বারা কিছুমাত্র উপকৃত হবেন তার কাছে আমার নিবেদন- তিনি যেন আমার জন্য, আমার মা-বাবার জন্য, আমার উস্তাযগণের জন্য, আমার সকল বন্ধু-বান্ধবের জন্য এবং সমস্ত মুসলিম নর-নারীর জন্য দু'আ করেন।
মহান আল্লাহর প্রতি আমার ভরসা। তাঁর উপরই আমি নিজেকে ও আমার যাবতীয় বিষয় ন্যস্ত করি । আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময় আল্লাহ ছাড়া কারও কোনও ভালো কাজ করার শক্তি নেই এবং নেই কোনও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষমতা।
বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীমঃ
অধ্যায়: ১
সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
এ অধ্যায়ে ইখলাস ও সহীহ নিয়ত সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে।
নিয়ত : নিয়ত অর্থ কোনও কাজে মনের ইচ্ছা যোগ করা। এই ইচ্ছা দু'রকম হতে পারে-
এক. এমন ইচ্ছা, যা দ্বারা কাজ নির্দিষ্ট করা হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন রকম কাজ ও ইবাদতের ভেতর আমি কোনটা করতে চাই, মনে মনে তা নির্দিষ্ট করে নেওয়া। নামায ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল বিভিন্ন রকম হতে পারে। তাছাড়া আছে ওয়াক্তিয়া নামায ও কাযা নামায। কাযাও বিভিন্ন ওয়াক্তের হতে পারে। অনুরূপ রোযাও বিভিন্ন রকম আছে। রমযানের কাযা রোযা, মানতের রোযা, কাফফারার রোযা, নফল রোযা ইত্যাদি। তো আমি যখন নামায পড়ব বা রোযা রাখব, তখন এই বিভিন্ন রকম নামায ও রোযার ভেতর কোনটা আদায় করতে যাচ্ছি মনে মনে তা ঠিক করে নেওয়া, যেমন আমি ফজরের দু' রাক'আত সুন্নত পড়ছি বা দু' রাকাআত ফরয পড়ছি, আমি রমযানের ছুটে যাওয়া রোযার কাযা করছি, মানতের রোযা রাখছি কিংবা নফল রোযা রাখছি ইত্যাদি। যেকোনও ইবাদত শুরুর আগে তা নির্দিষ্ট করার জন্য এরূপ নিয়ত করা জরুরী, অন্যথায় সে ইবাদত সহীহ হয় না।
দুই. এমন ইচ্ছা, যা দ্বারা কাজের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করা হয়। অর্থাৎ আমি যে কাজটি করছি তা কী উদ্দেশ্যে করছি? আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য, না পার্থিব কোনও স্বার্থ হাসিলের জন্য? আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকলে তাকে বলা হবে সহীহ নিয়ত। আর যদি মানুষকে খুশি করার জন্য করা হয় বা সুনাম-সুখ্যাতি লাভের উদ্দেশ্য থাকে, তবে তা হবে ফাসিদ নিয়ত। ফাসিদ নিয়তে ইবাদত-বন্দেগী করলে তা আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয় না, বাহ্যদৃষ্টিতে তা যতই সুন্দর ও বিশুদ্ধ মনে হোক না কেন। আল্লাহ তা'আলার কাছে ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত সহীহ থাকা শর্ত। সহীহ নিয়তেরই অপর নাম ইখলাস।
ইখলাস : ইখলাস মানে খালেস ও মুক্ত করা। ইবাদত-বন্দেগীতে ইখলাস হল- তাকে ভ্রান্ত উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত রেখে কেবল আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য সম্পন্ন করা। অর্থাৎ নামায, রোযা ইত্যাদি আদায় করা হবে কেবলই আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার জন্য, দুনিয়ার কোনও কিছু পাওয়ার জন্য নয়। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاء وَلَا شُكُورا-
অর্থ : (এবং তাদেরকে বলে,) আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।
প্রকাশ থাকে যে, ইসলামে ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। বলা যায় এটা গোটা দীনের অর্ধাংশ। কেননা যেকোনও কাজ আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার জন্য বা দীনী কাজ সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দু'টি শর্ত। (ক) কাজটি সঠিক হওয়া এবং (খ) তা খালেস হওয়া। যদি কোনও কাজ সঠিক হয় কিন্তু খালেস না হয়, তা আল্লাহ কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। অনুরূপ যদি খালেস হয় কিন্তু সঠিক না হয়, তাও গৃহীত হয় না। গৃহীত হওয়ার জন্য সঠিক হওয়া ও খালেস হওয়া উভয়ই জরুরি। বলা বাহুল্য, কাজ সঠিক হয় সুন্নত মোতাবেক হওয়ার দ্বারা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন, সেই মোতাবেক হওয়ার দ্বারা। এককথায় শরীআতসম্মত কাজই সঠিক কাজ। শরী'আতে যে কাজের অনুমোদন নেই তা ভ্রান্ত কাজ। এরূপ কাজে সহীহ নিয়তের প্রশ্নই আসে না। এরূপ কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে করলে ছওয়াব তো পাওয়াই যাবে না; বরং দ্বিগুণ গুনাহ হবে। যেমন কেউ চুরি-ডাকাতি করে বা সুদ-ঘুষ খেয়ে সেই অর্থ গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করল এবং আশা রাখল যে, এটা অনেক বড় দীনী কাজ হল আর আল্লাহ তা'আলা এতে খুশি হবেন। তার আশা দুরাশা মাত্র, বরং এটা আল্লাহ তা'আলার সংগে একরকম পরিহাস। না'উযুবিল্লাহি মিন যালিক।
সমস্ত বিদআতী কাজও এর পর্যায়ভুক্ত। নিজের পক্ষ থেকে কোনও কাজকে দ্বীনের অংশ সাব্যস্ত করাকে বিদআত বলে। এটা শরীআতে সংযোজন করার নামান্তর, যেমন চল্লিশা করা, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বিতরণ করা, মাজারে শিরনী দেওয়া, মৃত ব্যক্তির ঘরে তিন দিন চুলা জ্বালানো দুষনীয় মনে করা ইত্যাদি। বিদআত করা কঠিন গুনাহ।
সুতরাং কেউ যদি ইখলাসের সাথে এরূপ কাজ করে অর্থাৎ এরূপ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের আশা রাখে, তবে তাতে সন্তুষ্টিলাভ তো হাসিল হবেই না, উল্টো গুনাহ হবে। কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ কেবল শরী'আতসম্মত কাজের দ্বারাই সম্ভব।
আর কাজ খালেস হয় সহীহ নিয়ত ও ইখলাসের দ্বারা। অর্থাৎ শরীআতসম্মত কাজটি যদি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয়, তবেই সে কাজ আল্লাহ তা'আলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এরূপ কাজে যদি ইখলাস না থাকে, তবে তাতে কোনও ছওয়াব লাভ হয় না, উল্টো গুনাহ হয়। যেমন কেউ যদি 'লোকে হাজী সাহেব বলবে' এই উদ্দেশ্যে হজ্জ করে, তবে সেই হজ্জ দ্বারা আখিরাতে তার কোনও কিছুই লাভ হবে না। ইবাদতে এরূপ উদ্দেশ্য থাকলে তাকে "রিয়া" বলে। রিয়াকে বলে গুপ্ত শিরক, যেহেতু আল্লাহর জন্য ইবাদত করার পাশাপাশি গায়রুল্লাহকে খুশি করা ও গায়রুল্লাহর কাছে সুনাম ও সুখ্যাতি লাভেরও ইচ্ছা থাকে। এরূপ শিরকের নিষেধাজ্ঞায় কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
فمن كان يَرْجُوا لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَ لَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبَّه أَحَدا-
অর্থ : সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।
অর্থাৎ তাঁর যেহেতু কোনও শরীক নেই, তাই ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। তাতে স্থূল তো নয়ই, সূক্ষ্ম শিরকও পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ নিয়ত থাকবে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করা। রিয়া বা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে তাও এক ধরনের শিরক, তাতে ইবাদতের ভেতর সূক্ষ্মভাবে মানুষকে শরীক করা হয়।
এক হাদীছ দ্বারা জানা যায়, সুনাম-সুখ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে যারা ইবাদত-বন্দেগী করে, তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ এক হাদীছে একজন শহীদ, একজন আলেম ও একজন দানশীল লোকের কথা বলা হয়েছে, যাদের উদ্দেশ্য আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন ছিল না, বরং উদ্দেশ্য ছিল কেবলই মানুষের মাঝে সুনাম অর্জন করা, আপন-আপন স্থানে অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে হুকুম হবে- এদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। এর কারণ কেবল এই যে, তাদের অন্তরে ইখলাস ছিল না।
এর দ্বারা ইখলাস যে কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইখলাসের এ গুরুত্ব কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আছে বহু হাদীছও। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে প্রথমে এ রকম কিছু আয়াত, তারপর কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। নিচে আমরা এসব আয়াত ও হাদীছের অর্থ ও ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তাআলাই তাওফীকদাতা।
ইখলাস সম্পর্কে কতিপয় আয়াত:
এক নং আয়াত -
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ} [البينة: 5]
অর্থঃ তাদেরকে কেবল এই আদেশই করা হয়েছিল যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, আনুগত্যকে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই জন্য খালেস রেখে এবং নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে আর এটাই সরল সঠিক উম্মতের দ্বীন।
ব্যাখ্যা:
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা জানাচ্ছেন, আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টান জাতির প্রতি নির্দেশ ছিল, তারা যেন ইখলাস ও বিশুদ্ধ নিয়তের সাথে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে। অর্থাৎ ইবাদতের উদ্দেশ্য যেন আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভই হয়, অন্য কোনও উদ্দেশ্য না থাকে। নামায, রোযা ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদতে লক্ষ থাকবে কেবলই তাঁর সন্তুষ্টি। বলাবাহুল্য, এ আদেশ তাদেরকে তাদের আসমানী কিতাবেই দেয়া হয়েছিল; তাওরাত ও ইনজীলে। সেই নির্দেশ কুরআন মাজীদে উল্লেখ দ্বারা প্রমাণ হয়, এটা সমস্ত জাতির প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক সাধারণ হুকুম। আগের জাতিসমূহকে যেমন ইখলাসের সাথে ইবাদত-বন্দেগীর হুকুম দেওয়া হয়েছিল, তেমনি এ জাতির প্রতিও সেই হুকুম বলবৎ আছে। ইখলাসবিহীন ইবাদত যেমন পূর্বকালে গ্রহণযোগ্য ছিল না, তেমনি একালেও তা গ্রহণযোগ্য নয় ।
আয়াতে ইখলাসের সংগে ইবাদত-বন্দেগী করাকে সরল সঠিক দ্বীন সাব্যস্ত করা হয়েছে। তার মানে বান্দার কর্তব্য নিয়মিত ইবাদত-বন্দেগী করা এবং আল্লাহর যাবতীয় হুকুম মেনে চলা, সেইসংগে ইবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহর হুকুম পালনে ইখলাসের পরিচয় দেওয়া। ইখলাসের সংগে আল্লাহর হুকুম পালন করা না হলে বান্দা যা কিছুই করুক না কেন, তা দ্বীনরূপে গণ্য হবে না। এর দ্বারা ইখলাসের গুরুত্ব পরিস্ফুট। সুতরাং আমাদের কর্তব্য এ গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং সমস্ত আমলে ইখলাস ও বিশুদ্ধ নিয়তের প্রতি যত্নবান থাকা ।
দুই নং আয়াত:
وَقالَ تَعَالَى: {لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلاَ دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ} [الحج: 37]
অর্থ : আল্লাহর কাছে তাদের গোশত (অর্থাৎ কুরবানীর পশু) পৌঁছে না আর তাদের রক্তও না, বরং তাঁর কাছে তো তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে।
ব্যাখ্যা:
এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, জাহিলী যুগের মানুষ কুরবানীর পশুর রক্ত বায়তুল্লাহ শরীফে মাখিয়ে দিত। তার অনুকরণে মুসলিমগণও চাইল তাদের কুরবানীর পশুর রক্ত কাবা ঘরে মাখিয়ে দেবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন। এর দ্বারা জানানো হয়, কাবা ঘরে রক্ত মাখানো একটি অহেতুক কাজ। কুরবানীর পশুর রক্ত ও তার গোশত কোনোকিছুই তো আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। রক্ত মাটিতে মিশে যায় আর গোশত কুরবানীদাতা নিজেই খেয়ে থাকে। পশুর অন্যান্য অংশও তার উপকারে আসে। এর কোনোকিছুই আল্লাহর কোনও কাজে আসে না। তিনি কেবল দেখেন তোমাদের মনের অবস্থা। অর্থাৎ তোমরা কুরবানী করছ তাঁর সন্তষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, না সুনাম- সুখ্যাতি লাভ বা অন্য কোনও দুনিয়াবী লক্ষ্যে। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানী করে থাক, তবে তোমাদের এই ইখলাস ও সদিচ্ছার বিষয়টা তাঁর কাছে পৌঁছে। অর্থাৎ এরকম কুরবানী তিনি কবুল করে নেন এবং এর বিনিময়ে বান্দাকে প্রভূত ছওয়াব দান করেন। এ আয়াত দ্বারাও সহীহ নিয়ত ও ইখলাসের গুরুত্ব বোঝা গেল।
তিন নং আয়াত:
وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ} [آل عمران: 29]
অর্থ: (হে রাসূল! মানুষকে বলে দাও, তোমাদের অন্তরে যা-কিছু আছে, তোমরা তা গোপন রাখ বা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন ।
ব্যাখ্যা:
অর্থাৎ তোমরা এ কথা মনে করো না যে, ইখলাস তো মনের বিষয়। আমি কোন কাজ কী নিয়তে করছি তা তো কেউ জানে না। বাহ্যিকভাবে কাজ সঠিক হলেই হল। মনে কি আছে না আছে, তা কে দেখে? এরূপ মনে করা নিতান্তই ভুল। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্য ও গুপ্ত সবকিছুই দেখেন ও জানেন। কার মনে কি আছে তারও খবর তিনি রাখেন। তিনি অন্তর্জামী। তিনি মনের অবস্থা অনুযায়ী কাজের ফলাফল দান করবেন। তিনি যেমন তোমাদের দেহের স্রষ্টা, তেমনি মনেরও। ফলে দেহ ও মনের কোনোকিছুই তাঁর অগোচরে থাকতে পারে না। তিনি ইরশাদ করেন-
الا يعلم من خلق وَهُوَ اللطيف الخبير -
"যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি জানবেন না? অথচ তিনি সূক্ষদর্শী, সম্যক জ্ঞাত।”
১। ইখলাস সম্পর্কিত হাদীছ—
সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল:
হাদীছ নং : ১
অর্থ : আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (ইবন নুফায়ল ইবন আব্দুল উযযা ইবন রিয়াহ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন কুরত ইবন রাযাহ ইবন 'আদী ইবন কা'ব ইবন লুআঈ ইবন গালিব কুরাশী আদাভী) রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সমস্ত আমল নিয়তের সংগে সম্পর্কযুক্ত। প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং যার হিজরত হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে (অর্থাৎ তাঁর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে), তার হিজরত (বাস্তবিকই) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকেই হয়। আর যার হিজরত হয় দুনিয়ার দিকে (অর্থাৎ দুনিয়ার কোনও ভোগ্যবস্তু লাভের উদ্দেশ্যে) বা কোনও মহিলার দিকে, যাকে সে বিবাহ করতে চায়, তার হিজরত (প্রকৃতপক্ষে) সে দিকেই হয়, যেদিকে (অর্থাৎ যা লাভের উদ্দেশ্যে) সে হিজরত করেছে।
বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ১,মুসলিম হাদীস নং ১৯০৭)
উক্ত হাদীসটি আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী এবং আবুল-হুসাইন মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ আল কুশাইরী তাদের কিতাবদ্বয়ে (সহীহাইন) বর্ণনা করেছেন।
সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল:
হাদীছ নং : ১
অর্থ : আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (ইবন নুফায়ল ইবন আব্দুল উযযা ইবন রিয়াহ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন কুরত ইবন রাযাহ ইবন 'আদী ইবন কা'ব ইবন লুআঈ ইবন গালিব কুরাশী আদাভী) রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সমস্ত আমল নিয়তের সংগে সম্পর্কযুক্ত। প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং যার হিজরত হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে (অর্থাৎ তাঁর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে), তার হিজরত (বাস্তবিকই) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকেই হয়। আর যার হিজরত হয় দুনিয়ার দিকে (অর্থাৎ দুনিয়ার কোনও ভোগ্যবস্তু লাভের উদ্দেশ্যে) বা কোনও মহিলার দিকে, যাকে সে বিবাহ করতে চায়, তার হিজরত (প্রকৃতপক্ষে) সে দিকেই হয়, যেদিকে (অর্থাৎ যা লাভের উদ্দেশ্যে) সে হিজরত করেছে।
বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ১,মুসলিম হাদীস নং ১৯০৭)
উক্ত হাদীসটি আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-বুখারী এবং আবুল-হুসাইন মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ আল কুশাইরী তাদের কিতাবদ্বয়ে (সহীহাইন) বর্ণনা করেছেন।
مقدمة الامام النووي
مقدمة المؤَلف الإمَام النوَوي
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمْدُ للهِ الواحدِ القَهَّارِ، العَزيزِ الغَفَّارِ، مُكَوِّرِ اللَّيْلِ على النَّهَارِ، تَذْكِرَةً لأُولي القُلُوبِ والأَبصَارِ، وتَبْصرَةً لِذَوي الأَلبَابِ واَلاعتِبَارِ، الَّذي أَيقَظَ مِنْ خَلْقهِ مَنِ اصطَفاهُ فَزَهَّدَهُمْ في هذهِ الدَّارِ، وشَغَلهُمْ بمُراقبَتِهِ وَإِدَامَةِ الأَفكارِ، ومُلازَمَةِ الاتِّعَاظِ والادِّكَارِ، ووَفَّقَهُمْ للدَّأْبِ في طاعَتِهِ، والتّأهُّبِ لِدَارِ القَرارِ، والْحَذَرِ مِمّا يُسْخِطُهُ ويُوجِبُ دَارَ البَوَارِ، والمُحافَظَةِ على ذلِكَ مَعَ تَغَايُرِ الأَحْوَالِ والأَطْوَارِ، أَحْمَدُهُ أَبلَغَ حمْدٍ وأَزكَاهُ، وَأَشمَلَهُ وأَنْمَاهُ، وأَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللهُ البَرُّ الكَرِيمُ، الرؤُوفُ الرَّحيمُ، وأشهَدُ أَنَّ سَيَّدَنا مُحمّدًا عَبدُهُ ورَسُولُهُ، وحبِيبُهُ وخلِيلُهُ، الهَادِي إلى صِرَاطٍ مُسْتَقيمٍ، والدَّاعِي إِلَى دِينٍ قَويمٍ، صَلَوَاتُ اللهِ وسَلامُهُ عَليهِ، وَعَلَى سَائِرِ النَّبيِّينَ، وَآلِ كُلٍّ، وسَائِرِ الصَّالِحينَ.
أَما بعد، فقد قال اللهُ تعالى: {وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ} [الذاريات: 56 - 57] وَهَذا تَصْريحٌ بِأَنَّهُمْ خُلِقوا لِلعِبَادَةِ، فَحَقَّ عَلَيْهِمُ الاعْتِنَاءُ بِمَا خُلِقُوا لَهُ وَالإعْرَاضُ عَنْ حُظُوظِ الدُّنْيَا بالزَّهَادَةِ، فَإِنَّهَا دَارُ نَفَادٍ لاَ مَحَلُّ إخْلاَدٍ، وَمَرْكَبُ عُبُورٍ لاَ مَنْزِلُ حُبُورٍ، ومَشْرَعُ انْفصَامٍ لاَ مَوْطِنُ دَوَامٍ، فلِهذا كَانَ الأَيْقَاظُ مِنْ أَهْلِهَا هُمُ الْعُبَّادُ، وَأعْقَلُ النَّاسِ فيهَا هُمُ الزُّهّادُ. قالَ اللهُ تعالى: {إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالأَنْعَامُ حَتَّى إِذَا أَخَذَتِ الأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَنْ لَمْ تَغْنَ بِالأَمْسِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الآياتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ} [يونس: 24]. والآيات في هذا المعنى كثيرةٌ.
ولقد أَحْسَنَ القَائِلُ:
إِنَّ للهِ عِبَادًا فُطَنَا ... طَلَّقُوا الدُّنْيَا وخَافُوا الفِتَنَا
نَظَروا فيهَا فَلَمَّا عَلِمُوا ... أَنَّهَا لَيْسَتْ لِحَيٍّ وَطَنَا
جَعَلُوها لُجَّةً واتَّخَذُوا ... صَالِحَ الأَعمالِ فيها سُفُنا
فإذا كَانَ حالُها ما وصَفْتُهُ، وحالُنَا وَمَا خُلِقْنَا لَهُ مَا قَدَّمْتُهُ؛ فَحَقٌّ عَلَى الْمُكلَّفِ أَنْ يَذْهَبَ بنفسِهِ مَذْهَبَ الأَخْيارِ، وَيَسلُكَ مَسْلَكَ أُولي النُّهَى وَالأَبْصَارِ، وَيَتَأهَّبَ لِمَا أشَرْتُ إليهِ، وَيَهْتَمَّ لِمَا نَبَّهتُ عليهِ. وأَصْوَبُ طريقٍ لهُ في ذَلِكَ، وَأَرشَدُ مَا يَسْلُكُهُ مِنَ المسَالِكِ، التَّأَدُّبُ بمَا صَحَّ عَنْ نَبِيِّنَا سَيِّدِ الأَوَّلينَ والآخرينَ، وَأَكْرَمِ السَّابقينَ والَّلاحِقينَ، صَلَواتُ اللهِ وسَلامُهُ عَلَيهِ وَعَلى سَائِرِ النَّبيِّينَ. وقدْ قالَ اللهُ تعالى: {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى} [المائدة:2] وقد صَحَّ عَنْ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - أَنَّهُ قالَ: «واللهُ في عَوْنِ العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَوْنِ أَخِيهِ» ، وَأَنَّهُ قالَ: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أجْرِ فَاعِلِهِ» وأَنَّهُ قالَ: «مَنْ دَعَا إِلى هُدىً كَانَ لَهُ مِنَ الأَجرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيئًا» وأَنَّهُ قالَ لِعَليٍّ - رضي الله عنه: «فَوَاللهِ لأَنْ يَهْدِي اللهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ» فَرَأَيتُ أَنْ أَجْمَعَ مُخْتَصَرًا منَ الأحاديثِ الصَّحيحَةِ، مشْتَمِلًا عَلَى مَا يكُونُ طَرِيقًا لِصَاحبهِ إِلى الآخِرَةِ، ومُحَصِّلًا لآدَابِهِ البَاطِنَةِ وَالظَاهِرَةِ. جَامِعًا للترغيب والترهيب وسائر أنواع آداب السالكين: من أحاديث الزهد ورياضات النُّفُوسِ، وتَهْذِيبِ الأَخْلاقِ، وطَهَارَاتِ القُلوبِ وَعِلاجِهَا، وصِيانَةِ الجَوَارحِ وَإِزَالَةِ
اعْوِجَاجِهَا، وغَيرِ ذلِكَ مِنْ مَقَاصِدِ الْعارفِينَ.
وَأَلتَزِمُ فيهِ أَنْ لا أَذْكُرَ إلاّ حَدِيثًا صَحِيحًا مِنَ الْوَاضِحَاتِ، مُضَافًا إِلى الْكُتُبِ الصَّحِيحَةِ الْمَشْهُوراتِ. وأُصَدِّر الأَبْوَابَ مِنَ الْقُرْآنِ الْعَزِيزِ بِآياتٍ كَرِيماتٍ، وَأَوشِّحَ مَا يَحْتَاجُ إِلى ضَبْطٍ أَوْ شَرْحِ مَعْنىً خَفِيٍّ بِنَفَائِسَ مِنَ التَّنْبِيهاتِ. وإِذا قُلْتُ في آخِرِ حَدِيث: مُتَّفَقٌ عَلَيهِ فمعناه: رواه البخاريُّ ومسلمٌ.
وَأَرجُو إنْ تَمَّ هذَا الْكِتَابُ أَنْ يَكُونَ سَائِقًا للمُعْتَنِي بِهِ إِلى الْخَيْرَاتِ حَاجزًا لَهُ عَنْ أنْواعِ الْقَبَائِحِ والْمُهْلِكَاتِ. وأَنَا سَائِلٌ أخًا انْتَفعَ بِشيءٍ مِنْهُ أَنْ يَدْعُوَ لِي ، وَلِوَالِدَيَّ، وَمَشَايخي، وَسَائِرِ أَحْبَابِنَا، وَالمُسْلِمِينَ أجْمَعِينَ. وعَلَى اللهِ الكَريمِ اعْتِمادي، وَإِلَيْهِ تَفْويضي وَاسْتِنَادي، وَحَسبِيَ اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ.
بسم الله الرحمن الرحيم
1 - باب الإخلاص وإحضار النية في جميع الأعمال والأقوال والأحوال البارزة والخفية
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ} [البينة: 5]، وَقالَ تَعَالَى: {لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلاَ دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ} [الحج: 37]، وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ} [آل عمران: 29].
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمْدُ للهِ الواحدِ القَهَّارِ، العَزيزِ الغَفَّارِ، مُكَوِّرِ اللَّيْلِ على النَّهَارِ، تَذْكِرَةً لأُولي القُلُوبِ والأَبصَارِ، وتَبْصرَةً لِذَوي الأَلبَابِ واَلاعتِبَارِ، الَّذي أَيقَظَ مِنْ خَلْقهِ مَنِ اصطَفاهُ فَزَهَّدَهُمْ في هذهِ الدَّارِ، وشَغَلهُمْ بمُراقبَتِهِ وَإِدَامَةِ الأَفكارِ، ومُلازَمَةِ الاتِّعَاظِ والادِّكَارِ، ووَفَّقَهُمْ للدَّأْبِ في طاعَتِهِ، والتّأهُّبِ لِدَارِ القَرارِ، والْحَذَرِ مِمّا يُسْخِطُهُ ويُوجِبُ دَارَ البَوَارِ، والمُحافَظَةِ على ذلِكَ مَعَ تَغَايُرِ الأَحْوَالِ والأَطْوَارِ، أَحْمَدُهُ أَبلَغَ حمْدٍ وأَزكَاهُ، وَأَشمَلَهُ وأَنْمَاهُ، وأَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللهُ البَرُّ الكَرِيمُ، الرؤُوفُ الرَّحيمُ، وأشهَدُ أَنَّ سَيَّدَنا مُحمّدًا عَبدُهُ ورَسُولُهُ، وحبِيبُهُ وخلِيلُهُ، الهَادِي إلى صِرَاطٍ مُسْتَقيمٍ، والدَّاعِي إِلَى دِينٍ قَويمٍ، صَلَوَاتُ اللهِ وسَلامُهُ عَليهِ، وَعَلَى سَائِرِ النَّبيِّينَ، وَآلِ كُلٍّ، وسَائِرِ الصَّالِحينَ.
أَما بعد، فقد قال اللهُ تعالى: {وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ} [الذاريات: 56 - 57] وَهَذا تَصْريحٌ بِأَنَّهُمْ خُلِقوا لِلعِبَادَةِ، فَحَقَّ عَلَيْهِمُ الاعْتِنَاءُ بِمَا خُلِقُوا لَهُ وَالإعْرَاضُ عَنْ حُظُوظِ الدُّنْيَا بالزَّهَادَةِ، فَإِنَّهَا دَارُ نَفَادٍ لاَ مَحَلُّ إخْلاَدٍ، وَمَرْكَبُ عُبُورٍ لاَ مَنْزِلُ حُبُورٍ، ومَشْرَعُ انْفصَامٍ لاَ مَوْطِنُ دَوَامٍ، فلِهذا كَانَ الأَيْقَاظُ مِنْ أَهْلِهَا هُمُ الْعُبَّادُ، وَأعْقَلُ النَّاسِ فيهَا هُمُ الزُّهّادُ. قالَ اللهُ تعالى: {إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالأَنْعَامُ حَتَّى إِذَا أَخَذَتِ الأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَنْ لَمْ تَغْنَ بِالأَمْسِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الآياتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ} [يونس: 24]. والآيات في هذا المعنى كثيرةٌ.
ولقد أَحْسَنَ القَائِلُ:
إِنَّ للهِ عِبَادًا فُطَنَا ... طَلَّقُوا الدُّنْيَا وخَافُوا الفِتَنَا
نَظَروا فيهَا فَلَمَّا عَلِمُوا ... أَنَّهَا لَيْسَتْ لِحَيٍّ وَطَنَا
جَعَلُوها لُجَّةً واتَّخَذُوا ... صَالِحَ الأَعمالِ فيها سُفُنا
فإذا كَانَ حالُها ما وصَفْتُهُ، وحالُنَا وَمَا خُلِقْنَا لَهُ مَا قَدَّمْتُهُ؛ فَحَقٌّ عَلَى الْمُكلَّفِ أَنْ يَذْهَبَ بنفسِهِ مَذْهَبَ الأَخْيارِ، وَيَسلُكَ مَسْلَكَ أُولي النُّهَى وَالأَبْصَارِ، وَيَتَأهَّبَ لِمَا أشَرْتُ إليهِ، وَيَهْتَمَّ لِمَا نَبَّهتُ عليهِ. وأَصْوَبُ طريقٍ لهُ في ذَلِكَ، وَأَرشَدُ مَا يَسْلُكُهُ مِنَ المسَالِكِ، التَّأَدُّبُ بمَا صَحَّ عَنْ نَبِيِّنَا سَيِّدِ الأَوَّلينَ والآخرينَ، وَأَكْرَمِ السَّابقينَ والَّلاحِقينَ، صَلَواتُ اللهِ وسَلامُهُ عَلَيهِ وَعَلى سَائِرِ النَّبيِّينَ. وقدْ قالَ اللهُ تعالى: {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى} [المائدة:2] وقد صَحَّ عَنْ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - أَنَّهُ قالَ: «واللهُ في عَوْنِ العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَوْنِ أَخِيهِ» ، وَأَنَّهُ قالَ: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أجْرِ فَاعِلِهِ» وأَنَّهُ قالَ: «مَنْ دَعَا إِلى هُدىً كَانَ لَهُ مِنَ الأَجرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيئًا» وأَنَّهُ قالَ لِعَليٍّ - رضي الله عنه: «فَوَاللهِ لأَنْ يَهْدِي اللهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ» فَرَأَيتُ أَنْ أَجْمَعَ مُخْتَصَرًا منَ الأحاديثِ الصَّحيحَةِ، مشْتَمِلًا عَلَى مَا يكُونُ طَرِيقًا لِصَاحبهِ إِلى الآخِرَةِ، ومُحَصِّلًا لآدَابِهِ البَاطِنَةِ وَالظَاهِرَةِ. جَامِعًا للترغيب والترهيب وسائر أنواع آداب السالكين: من أحاديث الزهد ورياضات النُّفُوسِ، وتَهْذِيبِ الأَخْلاقِ، وطَهَارَاتِ القُلوبِ وَعِلاجِهَا، وصِيانَةِ الجَوَارحِ وَإِزَالَةِ
اعْوِجَاجِهَا، وغَيرِ ذلِكَ مِنْ مَقَاصِدِ الْعارفِينَ.
وَأَلتَزِمُ فيهِ أَنْ لا أَذْكُرَ إلاّ حَدِيثًا صَحِيحًا مِنَ الْوَاضِحَاتِ، مُضَافًا إِلى الْكُتُبِ الصَّحِيحَةِ الْمَشْهُوراتِ. وأُصَدِّر الأَبْوَابَ مِنَ الْقُرْآنِ الْعَزِيزِ بِآياتٍ كَرِيماتٍ، وَأَوشِّحَ مَا يَحْتَاجُ إِلى ضَبْطٍ أَوْ شَرْحِ مَعْنىً خَفِيٍّ بِنَفَائِسَ مِنَ التَّنْبِيهاتِ. وإِذا قُلْتُ في آخِرِ حَدِيث: مُتَّفَقٌ عَلَيهِ فمعناه: رواه البخاريُّ ومسلمٌ.
وَأَرجُو إنْ تَمَّ هذَا الْكِتَابُ أَنْ يَكُونَ سَائِقًا للمُعْتَنِي بِهِ إِلى الْخَيْرَاتِ حَاجزًا لَهُ عَنْ أنْواعِ الْقَبَائِحِ والْمُهْلِكَاتِ. وأَنَا سَائِلٌ أخًا انْتَفعَ بِشيءٍ مِنْهُ أَنْ يَدْعُوَ لِي ، وَلِوَالِدَيَّ، وَمَشَايخي، وَسَائِرِ أَحْبَابِنَا، وَالمُسْلِمِينَ أجْمَعِينَ. وعَلَى اللهِ الكَريمِ اعْتِمادي، وَإِلَيْهِ تَفْويضي وَاسْتِنَادي، وَحَسبِيَ اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ.
بسم الله الرحمن الرحيم
1 - باب الإخلاص وإحضار النية في جميع الأعمال والأقوال والأحوال البارزة والخفية
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ} [البينة: 5]، وَقالَ تَعَالَى: {لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلاَ دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ} [الحج: 37]، وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ} [آل عمران: 29].
1 - وعن أمير المؤمِنين أبي حَفْصٍ عمرَ بنِ الخطابِ بنِ نُفَيْلِ بنِ عبدِ العُزّى بن رياحِ بنِ عبدِ اللهِ بن قُرْطِ بن رَزاحِ بنِ عدِي بنِ كعب (1) بنِ لُؤَيِّ بنِ غالبٍ القُرشِيِّ العَدويِّ - رضي الله عنه - قالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يقُولُ: «إنّمَا الأَعْمَالُ بالنِّيّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امرِىءٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هجرته إلى الله ورسوله، فهجرته إلى الله ورسوله، ومن كانت هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصيبُهَا، أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكَحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلى مَا هَاجَرَ إِلَيْه». مُتَّفَقٌ عَلَى صِحَّتِهِ. رَوَاهُ إمَامَا الْمُحَدّثِينَ، أبُو عَبْدِ الله مُحَمَّدُ بْنُ إسْمَاعيلَ بْن إبراهِيمَ بْن المُغيرَةِ بنِ بَرْدِزْبهْ الجُعْفِيُّ البُخَارِيُّ، وَأَبُو الحُسَيْنِ مُسْلمُ بْنُ الحَجَّاجِ بْنِ مُسْلمٍ الْقُشَيريُّ النَّيْسَابُورِيُّ رضي اللهُ عنهما فِي صحيحيهما اللَّذَيْنِ هما أَصَحُّ الكُتبِ المصنفةِ. (2)
হাদীস নং: ২
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
২। মানুষের হাশর হবে আপন-আপন নিয়ত অনুযায়ী:
উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, একটি বাহিনী কা'বায় অভিযান চালাবে। যখন তারা এক মরুভূমিতে পৌঁছাবে, তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিভাবে তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে, অথচ তাদের মধ্যে তাদের বাজারী লোক এবং আরও এমন কিছু লোক থাকবে, যারা তাদের দলের নয়? তিনি বললেন, তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলকেই ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে, অতঃপর তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে তাদের নিয়ত অনুযায়ী। – বুখারী ও মুসলিম, এর ভাষা বুখারীর।
(বুখারী হাদীস নং ২১১৮, মুসলিম হাদীস নং ২৮৮৪)।
উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, একটি বাহিনী কা'বায় অভিযান চালাবে। যখন তারা এক মরুভূমিতে পৌঁছাবে, তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিভাবে তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে, অথচ তাদের মধ্যে তাদের বাজারী লোক এবং আরও এমন কিছু লোক থাকবে, যারা তাদের দলের নয়? তিনি বললেন, তাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলকেই ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে, অতঃপর তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে তাদের নিয়ত অনুযায়ী। – বুখারী ও মুসলিম, এর ভাষা বুখারীর।
(বুখারী হাদীস নং ২১১৮, মুসলিম হাদীস নং ২৮৮৪)।
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
2 - وعن أمِّ المؤمِنينَ أمِّ عبدِ اللهِ عائشةَ رضي الله عنها، قالت: قالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «يغْزُو جَيْشٌ الْكَعْبَةَ فإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الأَرضِ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وآخِرِهِمْ».
قَالَتْ: قلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، كَيْفَ يُخْسَفُ بأوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ وَفِيهمْ أسْوَاقُهُمْ (1) وَمَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ؟! قَالَ: «يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ ثُمَّ يُبْعَثُونَ عَلَى نِيّاتِهمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2) هذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ.
قَالَتْ: قلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، كَيْفَ يُخْسَفُ بأوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ وَفِيهمْ أسْوَاقُهُمْ (1) وَمَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ؟! قَالَ: «يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ ثُمَّ يُبْعَثُونَ عَلَى نِيّاتِهمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2) هذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ.
হাদীস নং: ৩
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৩। জিহাদ ও নিয়ত সর্বদা বলবৎ থাকবে:
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরত নেই, তবে জিহাদ ও (জিহাদের) নিয়ত আছে। যখন তোমাদেরকে (আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য) বের হতে বলা হবে, তখন তোমরা বের হয়ে পড়ো। – বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৩৯০০, মুসলিম হাদীস নং ১৮৬৪)।
হাদীসটির সারমর্ম হলো, মক্কা থেকে এখন আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। কারণ এটি ইসলামের আবাসস্থল হয়ে গিয়েছে।
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরত নেই, তবে জিহাদ ও (জিহাদের) নিয়ত আছে। যখন তোমাদেরকে (আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য) বের হতে বলা হবে, তখন তোমরা বের হয়ে পড়ো। – বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৩৯০০, মুসলিম হাদীস নং ১৮৬৪)।
হাদীসটির সারমর্ম হলো, মক্কা থেকে এখন আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। কারণ এটি ইসলামের আবাসস্থল হয়ে গিয়েছে।
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
3 - وعن عائِشةَ رضيَ اللهُ عنها، قَالَتْ: قَالَ النبي - صلى الله عليه وسلم: «لا هِجْرَةَ بَعْدَ الفَتْحِ، وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ، وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ (1) فانْفِرُوا». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. (2)
وَمَعناهُ: لا هِجْرَةَ مِنْ مَكّةَ لأَنَّهَا صَارَتْ دَارَ إسلاَمٍ.
وَمَعناهُ: لا هِجْرَةَ مِنْ مَكّةَ لأَنَّهَا صَارَتْ دَارَ إسلاَمٍ.
হাদীস নং: ৪
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৪। ওযরের কারণে আমল করতে না পারলেও নিয়তের কারণে আমলের ছওয়াব লাভ হয়:
হযরত জাবির ইবন আব্দুল্লাহ আনসারী রাযি. বলেন, আমরা এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে ছিলাম। এসময় তিনি ইরশাদ করেন, মদীনায় একদল লোক রয়ে গেছে। তোমরা যেকোনও পথেই চল এবং যেকোনও উপত্যকাই অতিক্রম কর, তাতে তারা তোমাদের সংগে আছে। রোগ তাদেরকে আটকে রেখেছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, প্রতিদানে তারা তোমাদের অংশীদার হবে - মুসলিম। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৯১১)
এ হাদীছটি ইমাম বুখারী হযরত আনাস রাযিঃ-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে, তিনি বলেন, আমরা তাবুক যুদ্ধ থেকে নবী (ﷺ)-এর সংগে ফিরছিলাম। তখন তিনি ইরশাদ করেন, মদীনায় একদল লোক আমাদের পেছনে রয়ে গেছে। আমরা যে-কোনও পাহাড়ী পথ ও উপত্যকা অতিক্রম করি না কেন, তাতে তারা আমাদের সংগে আছে। ওযর তাদেরকে আটকে রেখেছে। (বুখারী হাদীস নং ২৮৩৮)
হযরত জাবির ইবন আব্দুল্লাহ আনসারী রাযি. বলেন, আমরা এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে ছিলাম। এসময় তিনি ইরশাদ করেন, মদীনায় একদল লোক রয়ে গেছে। তোমরা যেকোনও পথেই চল এবং যেকোনও উপত্যকাই অতিক্রম কর, তাতে তারা তোমাদের সংগে আছে। রোগ তাদেরকে আটকে রেখেছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, প্রতিদানে তারা তোমাদের অংশীদার হবে - মুসলিম। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৯১১)
এ হাদীছটি ইমাম বুখারী হযরত আনাস রাযিঃ-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে, তিনি বলেন, আমরা তাবুক যুদ্ধ থেকে নবী (ﷺ)-এর সংগে ফিরছিলাম। তখন তিনি ইরশাদ করেন, মদীনায় একদল লোক আমাদের পেছনে রয়ে গেছে। আমরা যে-কোনও পাহাড়ী পথ ও উপত্যকা অতিক্রম করি না কেন, তাতে তারা আমাদের সংগে আছে। ওযর তাদেরকে আটকে রেখেছে। (বুখারী হাদীস নং ২৮৩৮)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
4 - وعن أبي عبدِ اللهِ جابر بن عبدِ اللهِ الأنصاريِّ رَضي اللهُ عنهما، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - في غَزَاةٍ، فَقالَ: «إِنَّ بالمدِينَةِ لَرِجَالًا ما سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِيًا، إلاَّ كَانُوا مَعَكمْ حَبَسَهُمُ الْمَرَضُ». وَفي روَايَة: «إلاَّ شَرَكُوكُمْ في الأجْرِ». رواهُ مسلمٌ. (1)
ورواهُ البخاريُّ عن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: رَجَعْنَا مِنْ غَزْوَةِ تَبُوكَ مَعَ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فقال: «إنَّ أقْوامًا خَلْفَنَا بالْمَدِينَةِ مَا سَلَكْنَا شِعْبًا (2) وَلاَ وَاديًا، إلاّ وَهُمْ مَعَنَا؛ حَبَسَهُمُ العُذْرُ».
ورواهُ البخاريُّ عن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: رَجَعْنَا مِنْ غَزْوَةِ تَبُوكَ مَعَ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فقال: «إنَّ أقْوامًا خَلْفَنَا بالْمَدِينَةِ مَا سَلَكْنَا شِعْبًا (2) وَلاَ وَاديًا، إلاّ وَهُمْ مَعَنَا؛ حَبَسَهُمُ العُذْرُ».
হাদীস নং: ৫
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৫। পিতার দান পুত্রের হাতে পড়লেও ছওয়াব নষ্ট হয় না:
হযরত আবু ইয়াযীদ মা'ন ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আখনাস রাযি. থেকে বর্ণিত। প্রকাশ থাকে যে, হযরত মা'ন, তার পিতা ইয়াযীদ এবং দাদা আখনাস তিনজনই প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। হযরত মা'ন রাযি. বলেন, একদা আমার পিতা ইয়াযীদ সদকা করার জন্য কিছু দীনার বের করলেন এবং তা মসজিদে এক ব্যক্তির কাছে রাখলেন। তারপর আমি মসজিদে আসলাম এবং (সেই ব্যক্তির কাছ থেকে) সেগুলো গ্রহণ করলাম। তারপর তা নিয়ে আমি বাড়িতে পিতার কাছে আসলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তো তোমাকে দেওয়ার ইচ্ছা করিনি। অগত্যা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করলাম। তিনি বললেন, হে ইয়াযীদ, তুমি যা নিয়ত করেছ তা পাবে এবং হে মা'ন, তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমার - বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ১৪২২)
হযরত আবু ইয়াযীদ মা'ন ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আখনাস রাযি. থেকে বর্ণিত। প্রকাশ থাকে যে, হযরত মা'ন, তার পিতা ইয়াযীদ এবং দাদা আখনাস তিনজনই প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। হযরত মা'ন রাযি. বলেন, একদা আমার পিতা ইয়াযীদ সদকা করার জন্য কিছু দীনার বের করলেন এবং তা মসজিদে এক ব্যক্তির কাছে রাখলেন। তারপর আমি মসজিদে আসলাম এবং (সেই ব্যক্তির কাছ থেকে) সেগুলো গ্রহণ করলাম। তারপর তা নিয়ে আমি বাড়িতে পিতার কাছে আসলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তো তোমাকে দেওয়ার ইচ্ছা করিনি। অগত্যা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করলাম। তিনি বললেন, হে ইয়াযীদ, তুমি যা নিয়ত করেছ তা পাবে এবং হে মা'ন, তুমি যা গ্রহণ করেছ তা তোমার - বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ১৪২২)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
5 - وعن أبي يَزيدَ مَعْنِ بنِ يَزيدَ بنِ الأخنسِ - رضي الله عنهم - وهو وأبوه وَجَدُّه صحابيُّون، قَالَ: كَانَ أبي يَزيدُ أخْرَجَ دَنَانِيرَ يَتَصَدَّقُ بِهَا، فَوَضعَهَا عِنْدَ رَجُلٍ في الْمَسْجِدِ، فَجِئْتُ فأَخذْتُها فَأَتَيْتُهُ بِهَا. فقالَ: واللهِ، مَا إيَّاكَ أرَدْتُ، فَخَاصَمْتُهُ إِلى رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - فقَالَ: «لكَ مَا نَوَيْتَ يَا يزيدُ، ولَكَ ما أخَذْتَ يَا مَعْنُ». رواهُ البخاريُّ. (1)

তাহকীক:
 হাদীসের ব্যাখ্যা
হাদীসের ব্যাখ্যাহাদীস নং: ৬
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৬। সহীহ নিয়তে স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দিলেও ছওয়াব পাওয়া যায়:
হযরত সা'দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (মালিক ইবন উহাইব ইবন আব্দি মানাফ ইবন যুহরা ইবন কিলাব ইবন মুররা ইবন কা'ব ইবন লুআঈ কুরাশী) রাযি. থেকে বর্ণিত। উল্লেখ্য, তিনি ওই বিশেষ দশজন সাহাবীর একজন, যাদের সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছিলেন (যাদেরকে "আশারায়ে মুবাশশারা' বলা হয়ে থাকে)। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমি এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার রোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনি দেখছেন। আমি একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। এক কন্যা ছাড়া আমার আর কোনও ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ দান করে দেব? তিনি বললেন, না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ। তবে তিন ভাগের একভাগ? তিনি বললেন, তিন ভাগের একভাগ। তিন ভাগের একভাগও বেশিই বটে। ওয়ারিশদেরকে তোমার ধনী রেখে যাওয়াটা তাদেরকে এমন গরীব রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম যে, তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় যা-কিছুই ব্যয় করো না কেন, তার জন্য তোমাকে প্রতিদান দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা রাখবে তার জন্যও। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার সঙ্গীদের (মৃত্যুর) পর পেছনে থেকে যাব? তিনি বললেন, তোমাকে যদি পেছনে রেখে দেওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তুমি কোনও আমল কর, তবে তা দ্বারা অবশ্যই তোমার মর্যাদা ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। হয়তো তোমাকে পেছনে রেখে দেওয়া হবে, ফলে একদল মানুষ (অর্থাৎ মুমিনগণ) তোমার দ্বারা উপকৃত হবে এবং অপর একদল মানুষ (অর্থাৎ কাফেরগণ) তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবীদের জন্য তাদের হিজরতকে কার্যকর কর। তাদেরকে তাদের পেছনদিকে ফিরিয়ে দিও না। তবে বেচারা সা'দ ইবন খাওলা! (বর্ণনাকারী বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন; যেহেতু তিনি মক্কায় ইন্তিকাল করেন। বুখারী ও মুসলিম।- (বুখারী হাদীস নং ১২৯৫,মুসলিম হাদীস নং ১৬২৮)
হযরত সা'দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (মালিক ইবন উহাইব ইবন আব্দি মানাফ ইবন যুহরা ইবন কিলাব ইবন মুররা ইবন কা'ব ইবন লুআঈ কুরাশী) রাযি. থেকে বর্ণিত। উল্লেখ্য, তিনি ওই বিশেষ দশজন সাহাবীর একজন, যাদের সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছিলেন (যাদেরকে "আশারায়ে মুবাশশারা' বলা হয়ে থাকে)। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমি এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার রোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনি দেখছেন। আমি একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। এক কন্যা ছাড়া আমার আর কোনও ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ দান করে দেব? তিনি বললেন, না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ। তবে তিন ভাগের একভাগ? তিনি বললেন, তিন ভাগের একভাগ। তিন ভাগের একভাগও বেশিই বটে। ওয়ারিশদেরকে তোমার ধনী রেখে যাওয়াটা তাদেরকে এমন গরীব রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম যে, তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় যা-কিছুই ব্যয় করো না কেন, তার জন্য তোমাকে প্রতিদান দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা রাখবে তার জন্যও। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার সঙ্গীদের (মৃত্যুর) পর পেছনে থেকে যাব? তিনি বললেন, তোমাকে যদি পেছনে রেখে দেওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তুমি কোনও আমল কর, তবে তা দ্বারা অবশ্যই তোমার মর্যাদা ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। হয়তো তোমাকে পেছনে রেখে দেওয়া হবে, ফলে একদল মানুষ (অর্থাৎ মুমিনগণ) তোমার দ্বারা উপকৃত হবে এবং অপর একদল মানুষ (অর্থাৎ কাফেরগণ) তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবীদের জন্য তাদের হিজরতকে কার্যকর কর। তাদেরকে তাদের পেছনদিকে ফিরিয়ে দিও না। তবে বেচারা সা'দ ইবন খাওলা! (বর্ণনাকারী বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন; যেহেতু তিনি মক্কায় ইন্তিকাল করেন। বুখারী ও মুসলিম।- (বুখারী হাদীস নং ১২৯৫,মুসলিম হাদীস নং ১৬২৮)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
6 - وعن أبي إسحاقَ سَعدِ بنِ أبي وَقَّاصٍ مالِكِ بنِ أُهَيْب بنِ عبدِ منافِ بنِ زُهرَةَ بنِ كلابِ بنِ مُرَّةَ بنِ كعبِ بنِ لُؤيٍّ القُرشِيِّ الزُّهريِّ - رضي الله عنه - أَحَدِ العَشَرَةِ (2) المشهودِ لهم بالجنةِ - رضي الله عنهم - قَالَ: جاءنِي رسولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَعُودُنِي عَامَ حَجَّةِ الوَدَاعِ مِنْ وَجَعٍ اشْتَدَّ بي، فقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنِّي قَدْ بَلَغَ بي مِنَ الوَجَعِ مَا تَرَى، وَأَنَا ذُو مالٍ وَلا يَرِثُني إلا ابْنَةٌ لي، أفأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِي؟ قَالَ: «لا»، قُلْتُ: فالشَّطْرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فقَالَ: «لا»، قُلْتُ: فالثُّلُثُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «الثُّلُثُ والثُّلُثُ كَثيرٌ - أَوْ كبيرٌ - إنَّكَ إنْ تَذَرْ وَرَثَتَكَ أغنِيَاءَ خيرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً (3) يتكفَّفُونَ النَّاسَ، وَإنَّكَ لَنْ تُنفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغي بِهَا وَجهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ في فِيِّ امْرَأَتِكَ»، قَالَ: فَقُلتُ: يَا رسولَ اللهِ، أُخلَّفُ (4) بعدَ أصْحَابي؟ قَالَ: «إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ فَتَعملَ عَمَلًا تَبتَغي بِهِ وَجْهَ اللهِ إلاَّ ازْدَدتَ بِهِ دَرَجةً ورِفعَةً، وَلَعلَّكَ أَنْ تُخَلَّفَ حَتّى يَنتَفِعَ بِكَ أقْوَامٌ وَيُضَرَّ بِكَ آخرونَ. اللَّهُمَّ أَمْضِ لأصْحَابي هِجْرَتَهُمْ ولاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أعقَابهمْ، لكنِ البَائِسُ سَعدُ بْنُ خَوْلَةَ» يَرْثي لَهُ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - أَنْ ماتَ بمَكَّة. مُتَّفَقٌ عليهِ. (5)
হাদীস নং: ৭
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৭।  আল্লাহ দেখেন মানুষের অন্তর:
হযরত আবু হুরায়রা (আব্দুর রহমান ইবন সাখর) রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের দেহ ও আকৃতির দিকে তাকান না; বরং তিনি তাকান তোমাদের অন্তরের দিকে। - (মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬৪)
হযরত আবু হুরায়রা (আব্দুর রহমান ইবন সাখর) রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা তোমাদের দেহ ও আকৃতির দিকে তাকান না; বরং তিনি তাকান তোমাদের অন্তরের দিকে। - (মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬৪)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
7 - وعنْ أبي هريرةَ عبدِ الرحمانِ بنِ صخرٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الله لا ينْظُرُ إِلى أجْسَامِكُمْ، ولا إِلى صُوَرِكمْ، وَلَكن ينْظُرُ إلى قُلُوبِكمْ وأعمالكم». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ৮
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৮। কোন যুদ্ধকে জিহাদ বলা হবে:
হযরত আবু মুসা ( আব্দুল্লাহ ইবন কায়স ) আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে যুদ্ধ করে বীরত্ব দেখানোর জন্য এবং ওই ব্যক্তি সম্পর্কে, যে যুদ্ধ করে জাত্যভিমানের জন্য এবং ওই ব্যক্তি সম্পর্কে, যে যুদ্ধ করে লোক দেখানোর জন্য। এদের মধ্যে কে যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কালেমা যাতে বুলন্দ হয়ে যায়, এইজন্য যে ব্যক্তি যুদ্ধ করে সেই আল্লাহর পথে (যুদ্ধ করে)। বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ২৮১০, মুসলিম হাদীস নং ৪৭৬৭)
হযরত আবু মুসা ( আব্দুল্লাহ ইবন কায়স ) আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে যুদ্ধ করে বীরত্ব দেখানোর জন্য এবং ওই ব্যক্তি সম্পর্কে, যে যুদ্ধ করে জাত্যভিমানের জন্য এবং ওই ব্যক্তি সম্পর্কে, যে যুদ্ধ করে লোক দেখানোর জন্য। এদের মধ্যে কে যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কালেমা যাতে বুলন্দ হয়ে যায়, এইজন্য যে ব্যক্তি যুদ্ধ করে সেই আল্লাহর পথে (যুদ্ধ করে)। বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ২৮১০, মুসলিম হাদীস নং ৪৭৬৭)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
8 - وعن أبي موسى عبدِ اللهِ بنِ قيسٍ الأشعريِّ - رضي الله عنه - قَالَ: سُئِلَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - عَنِ الرَّجُلِ يُقاتلُ شَجَاعَةً، ويُقَاتِلُ حَمِيَّةً، ويُقَاتِلُ رِيَاءً، أَيُّ ذلِكَ في سبيلِ الله؟ فقال رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ قَاتَلَ لِتَكونَ كَلِمَةُ اللهِ هي العُلْيَا، فَهوَ في سبيلِ اللهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীস নং: ৯
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৯। যখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী হয়:
হযরত আবু বাকরা (নুফায়' ইবনে হারিছ ছাকাফী) রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দুই মুসলিম যখন তরবারি নিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হবে, তখন হত্যাকারী ও নিহত উভয়ই জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ তো হত্যাকারী (কাজেই তার জাহান্নামে যাওয়াটাতো বোধগম্য), কিন্তু নিহতের ব্যাপারটা কি (সে কেন জাহান্নামে যাবে)? তিনি বললেন, সেও তো তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে লালায়িত ছিল - বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ৩১,মুসলিম হাদীস নং ২৮৮৮)
হযরত আবু বাকরা (নুফায়' ইবনে হারিছ ছাকাফী) রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দুই মুসলিম যখন তরবারি নিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হবে, তখন হত্যাকারী ও নিহত উভয়ই জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ তো হত্যাকারী (কাজেই তার জাহান্নামে যাওয়াটাতো বোধগম্য), কিন্তু নিহতের ব্যাপারটা কি (সে কেন জাহান্নামে যাবে)? তিনি বললেন, সেও তো তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে লালায়িত ছিল - বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ৩১,মুসলিম হাদীস নং ২৮৮৮)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
9 - وعن أبي بَكرَةَ نُفيع بنِ الحارثِ الثقفيِّ - رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِذَا التَقَى المُسلِمَان بسَيْفَيهِمَا فالقَاتِلُ وَالمَقْتُولُ في النّارِ». قُلتُ: يا رَسُولَ اللهِ، هذا القَاتِلُ فَمَا بَالُ المقْتُولِ؟ قَالَ: «إنَّهُ كَانَ حَريصًا عَلَى قتلِ صَاحِبهِ». مُتَّفَقٌ عليهِ. (1)
হাদীস নং: ১০
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
১০। জামাআতের নামাযে ছওয়াব কেন বেশিঃ
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জামাতের সাথে ব্যক্তির নামায তার বাজারে ও নিজ ঘরে নামায অপেক্ষা বিশেরও বেশি গুণ মর্যাদা রাখে। এর কারণ তোমাদের কেউ যখন ওযু করে এবং সেই ওযু উত্তমরূপে সম্পন্ন করে, তারপর সে মসজিদে আসে কেবলই নামাযের উদ্দেশ্যে, নামায ছাড়া অন্যকিছু তাকে বের করে না, সে যেকোনও কদম ফেলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার মর্যাদা এক স্তর উঁচু করেন এবং তা দ্বারা তার একটি গুনাহ ক্ষমা করেন, যতক্ষণ না সে মসজিদে প্রবেশ করে। যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত নামায তাকে আটকে রাখে (অর্থাৎ সে নামাযের অপেক্ষায় থাকে), ততক্ষণ সে নামাযেই থাকে। ফিরিশতাগণ তোমাদের একেকজনের প্রতি রহমতের দু'আ করেন, যতক্ষণ সে ওই জায়গায় বসা থাকে যেখানে সে নামায পড়েছে। তারা বলে, হে আল্লাহ, তার প্রতি রহম করুন। হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, তার তাওবা কবুল করুন- যতক্ষণ না সে সেখানে কাউকে কষ্ট দেয় বা ওযু ভঙ্গ করে - বুখারী ও মুসলিম। এটা মুসলিমের বর্ণনা।
(বুখারী হাদীস নং ২১১৯,মুসলিম হাদীস নং ৬৪৯)।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জামাতের সাথে ব্যক্তির নামায তার বাজারে ও নিজ ঘরে নামায অপেক্ষা বিশেরও বেশি গুণ মর্যাদা রাখে। এর কারণ তোমাদের কেউ যখন ওযু করে এবং সেই ওযু উত্তমরূপে সম্পন্ন করে, তারপর সে মসজিদে আসে কেবলই নামাযের উদ্দেশ্যে, নামায ছাড়া অন্যকিছু তাকে বের করে না, সে যেকোনও কদম ফেলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার মর্যাদা এক স্তর উঁচু করেন এবং তা দ্বারা তার একটি গুনাহ ক্ষমা করেন, যতক্ষণ না সে মসজিদে প্রবেশ করে। যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত নামায তাকে আটকে রাখে (অর্থাৎ সে নামাযের অপেক্ষায় থাকে), ততক্ষণ সে নামাযেই থাকে। ফিরিশতাগণ তোমাদের একেকজনের প্রতি রহমতের দু'আ করেন, যতক্ষণ সে ওই জায়গায় বসা থাকে যেখানে সে নামায পড়েছে। তারা বলে, হে আল্লাহ, তার প্রতি রহম করুন। হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, তার তাওবা কবুল করুন- যতক্ষণ না সে সেখানে কাউকে কষ্ট দেয় বা ওযু ভঙ্গ করে - বুখারী ও মুসলিম। এটা মুসলিমের বর্ণনা।
(বুখারী হাদীস নং ২১১৯,মুসলিম হাদীস নং ৬৪৯)।
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
10 - وعن أبي هريرةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «صَلاةُ الرَّجلِ في جمَاعَةٍ تَزيدُ عَلَى صَلاتهِ في سُوقِهِ وبيتهِ بضْعًا (1) وعِشرِينَ دَرَجَةً، وَذَلِكَ أنَّ أَحدَهُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضوءَ، ثُمَّ أَتَى المَسْجِدَ لا يُرِيدُ إلاَّ الصَّلاةَ، لاَ يَنْهَزُهُ إِلاَّ الصَلاةُ: لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلاَّ رُفِعَ لَهُ بِهَا دَرجَةٌ، وَحُطَّ عَنْهُ بها خَطِيئَةٌ حَتَّى يَدْخُلَ المَسْجِدَ، فإِذا دَخَلَ المَسْجِدَ كَانَ في الصَّلاةِ مَا كَانَتِ الصَّلاةُ هِي تَحْبِسُهُ، وَالمَلائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ في مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ، يَقُولُونَ: اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيهِ، مَا لَم يُؤْذِ فيه، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ». مُتَّفَقٌ عليه، (2) وهذا لفظ مسلم.
হাদীস নং: ১১
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
১১। নেক আমলের নিয়তেও ছওয়াব
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা সমস্ত পুণ্য ও পাপকর্ম লিখে রেখেছেন। তারপর তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোনও সৎকর্মের নিয়ত করল কিন্তু তা বাস্তবায়ন করল না, আল্লাহ তাআলা তার কাছে একটি পরিপূর্ণ সৎকর্মরূপে তা লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি সৎকর্মের ইচ্ছা করে এবং তা কার্যেও পরিণত করে, তবে আল্লাহ তাআলা তা লেখেন দশটি সৎকর্ম থেকে সাতশ' গুণ পর্যন্ত এবং তারচেয়েও বহুগুণ বেশি। পক্ষান্তরে যদি কোনও মন্দ কাজের ইচ্ছা করে কিন্তু তা কার্যে পরিণত না করে, তবে আল্লাহ তা'আলা নিজের কাছে একটি পরিপূর্ণ সৎকর্মরূপে তা লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে এবং তা কার্যেও পরিণত করে, তবে আল্লাহ তা'আলা একটি মন্দ কাজরূপেই তা লিপিবদ্ধ করেন - বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ৬৪৯১,মুসলিম হাদীস নং ১৩১)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা সমস্ত পুণ্য ও পাপকর্ম লিখে রেখেছেন। তারপর তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোনও সৎকর্মের নিয়ত করল কিন্তু তা বাস্তবায়ন করল না, আল্লাহ তাআলা তার কাছে একটি পরিপূর্ণ সৎকর্মরূপে তা লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি সৎকর্মের ইচ্ছা করে এবং তা কার্যেও পরিণত করে, তবে আল্লাহ তাআলা তা লেখেন দশটি সৎকর্ম থেকে সাতশ' গুণ পর্যন্ত এবং তারচেয়েও বহুগুণ বেশি। পক্ষান্তরে যদি কোনও মন্দ কাজের ইচ্ছা করে কিন্তু তা কার্যে পরিণত না করে, তবে আল্লাহ তা'আলা নিজের কাছে একটি পরিপূর্ণ সৎকর্মরূপে তা লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে এবং তা কার্যেও পরিণত করে, তবে আল্লাহ তা'আলা একটি মন্দ কাজরূপেই তা লিপিবদ্ধ করেন - বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ৬৪৯১,মুসলিম হাদীস নং ১৩১)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
11 - وعن أبي العبَّاسِ عبدِ اللهِ بنِ عباسِ بنِ عبد المطلب رضِيَ اللهُ عنهما، عن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - فيما يروي عن ربهِ، تباركَ وتعالى، قَالَ: «إنَّ اللهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ والسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذلِكَ، فَمَنْ هَمَّ (1) بحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَها اللهُ تَبَارَكَ وتَعَالى عِنْدَهُ حَسَنَةً كامِلَةً، وَإنْ هَمَّ بهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ عَشْرَ حَسَناتٍ إِلى سَبْعمئةِ ضِعْفٍ إِلى أَضعَافٍ كَثيرةٍ، وإنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ تَعَالَى عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلةً، وَإنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً». مُتَّفَقٌ عليهِ. (2)
হাদীস নং: ১২
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১ 
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
১২। ইখলাসবিশিষ্ট আমলের অছিলায় বিপদ থেকে মুক্তি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের পূর্বকালে তিনজন লোক পথ চলছিল। এক পর্যায়ে তারা রাত যাপনের জন্য একটা পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করল। এ অবস্থায় পাহাড় থেকে একটা পাথর গড়িয়ে পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা পরস্পরে বলল, এই পাথর থেকে তোমাদেরকে কোনও কিছুই মুক্তি দিতে পারবে না। তোমরা তোমাদের কোনও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দু'আ করা ছাড়া আর কোনও উপায়েই এই পাথর থেকে মুক্তি পাবে না। (সেমতে) তাদের এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার অতিশয় বৃদ্ধ বাবা-মা ছিল। আমি তাদের আগে আমার পরিবারবর্গ (স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি) অথবা আমার কোনও সম্পদকে (দাস-দাসীকে) পানাহার করাতাম না। (একদিনকার কথা) গাছের সন্ধানে আমাকে অনেক দূরে যেতে হল। ফলে আমার ফিরে আসতে আসতে তারা ঘুমিয়ে গেল। আমি তাদের পান করানোর জন্য দুধ দোয়ালাম। তারপর তা নিয়ে এসে দেখলাম তারা ঘুমিয়ে আছে। এ অবস্থায় তাদের জাগানো আমার পছন্দ হল না। আবার আমার পরিবারবর্গ ও দাস-দাসীকে তাদের আগে পান করানোও ভালো লাগল না। এভাবে আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম যে, আমার হাতে দুধের পাত্র। কখন তারা জাগবে সেই অপেক্ষা করছি আর শিশুরা আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছে। শেষ পর্যন্ত ফজর হয়ে গেল। অতঃপর তারা জাগল এবং তাদের পানীয় পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এটা তোমার সন্তুষ্টি কামনায় করে থাকি, তবে আমরা এই যে পাথরের নিচে পড়ে আছি, এর থেকে আমাদের পথ খুলে দাও। ফলে পাথরটা একটুখানি সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা সেখান থেকে বের হতে পারছিল না।
দ্বিতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। সে ছিল আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। অপর এক বর্ণনায় আছে, আমি তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতাম,, যেমনটা নারীদের পুরুষগণ ভালোবেসে থাকে। আমি তার কাছে তার নিজেকে কামনা করলাম, কিন্তু সে আমার থেকে আত্মরক্ষা করল। এক পর্যায়ে সে খরাজনিত অভাবে পড়ে গেল। তখন আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসল। আমি তাকে এই শর্তে একশ' বিশ দীনার দিলাম যে, সে তার নিজেকে আমার হাতে ছেড়ে দেবে। সে তাতে সম্মত হল। পরিশেষে যখন তাকে গ্রহণে সক্ষম হলাম, অপর এক বর্ণনায় আছে যখন আমি তার দু পায়ের মাঝে বসলাম, সে বলল, আল্লাহকে ভয় করো। তুমি ন্যায়সঙ্গত অধিকার ছাড়া মোহর ভেঙ্গে ফেলো না (অর্থাৎ সতীত্ব হরণ করো না)। (আমি তার এ কথায় সচেতন হয়ে গেলাম) ফলে তার কাছ থেকে সরে গেলাম। অথচ সে আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। আমি যে সোনা (দীনার) তাকে দিয়েছিলাম, তাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি তা তোমার সন্তুষ্টি কামনায় করে থাকি, তবে আমরা যে অবস্থায় আছি তা থেকে আমাদের মুক্তি দাও। ফলে পাথরটি আরেকটু সরে গেল। কিন্তু তাতেও তারা তা থেকে বের হতে পারছিল না।
তৃতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন শ্রমিক ভাড়া করেছিলাম। তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিকও দিয়েছিলাম, তবে এক ব্যক্তি ছাড়া। তার যা পাওনা ছিল সে রেখে চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিক বিনিয়োগ করতে থাকলাম। ফলে তা বেড়ে প্রচুর সম্পদ হয়ে গেল। কিছুকাল পর সে আমার কাছে আসল এবং বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমার পারিশ্রমিক আমাকে আদায় করে দাও। আমি তাকে বললাম, এই যে উট, গরু, ছাগল ও গোলাম দেখছ, এসবই তোমার সেই পারিশ্রমিক থেকে উৎপন্ন। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা, তুমি আমার সংগে ঠাট্টা করো না। আমি বললাম, তোমার সংগে ঠাট্টা করছি না। সুতরাং সে তা সব গ্রহণ করল এবং তা হাঁকিয়ে নিয়ে গেল। তা থেকে কিছুই রেখে গেল না। হে আল্লাহ! আমি যদি তা তোমার সন্তুষ্টি কামনায় করে থাকি, তবে আমরা যে অবস্থায় আছি তা থেকে তুমি আমাদের মুক্তি দাও। তখন পাথরটি (পুরোপুরি) সরে গেল এবং তারা বের হয়ে চলে গেল - বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ২২৭২,মুসলিম হাদীস নং ২৭৪৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমাদের পূর্বকালে তিনজন লোক পথ চলছিল। এক পর্যায়ে তারা রাত যাপনের জন্য একটা পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করল। এ অবস্থায় পাহাড় থেকে একটা পাথর গড়িয়ে পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা পরস্পরে বলল, এই পাথর থেকে তোমাদেরকে কোনও কিছুই মুক্তি দিতে পারবে না। তোমরা তোমাদের কোনও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দু'আ করা ছাড়া আর কোনও উপায়েই এই পাথর থেকে মুক্তি পাবে না। (সেমতে) তাদের এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার অতিশয় বৃদ্ধ বাবা-মা ছিল। আমি তাদের আগে আমার পরিবারবর্গ (স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি) অথবা আমার কোনও সম্পদকে (দাস-দাসীকে) পানাহার করাতাম না। (একদিনকার কথা) গাছের সন্ধানে আমাকে অনেক দূরে যেতে হল। ফলে আমার ফিরে আসতে আসতে তারা ঘুমিয়ে গেল। আমি তাদের পান করানোর জন্য দুধ দোয়ালাম। তারপর তা নিয়ে এসে দেখলাম তারা ঘুমিয়ে আছে। এ অবস্থায় তাদের জাগানো আমার পছন্দ হল না। আবার আমার পরিবারবর্গ ও দাস-দাসীকে তাদের আগে পান করানোও ভালো লাগল না। এভাবে আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম যে, আমার হাতে দুধের পাত্র। কখন তারা জাগবে সেই অপেক্ষা করছি আর শিশুরা আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছে। শেষ পর্যন্ত ফজর হয়ে গেল। অতঃপর তারা জাগল এবং তাদের পানীয় পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এটা তোমার সন্তুষ্টি কামনায় করে থাকি, তবে আমরা এই যে পাথরের নিচে পড়ে আছি, এর থেকে আমাদের পথ খুলে দাও। ফলে পাথরটা একটুখানি সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা সেখান থেকে বের হতে পারছিল না।
দ্বিতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। সে ছিল আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। অপর এক বর্ণনায় আছে, আমি তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতাম,, যেমনটা নারীদের পুরুষগণ ভালোবেসে থাকে। আমি তার কাছে তার নিজেকে কামনা করলাম, কিন্তু সে আমার থেকে আত্মরক্ষা করল। এক পর্যায়ে সে খরাজনিত অভাবে পড়ে গেল। তখন আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসল। আমি তাকে এই শর্তে একশ' বিশ দীনার দিলাম যে, সে তার নিজেকে আমার হাতে ছেড়ে দেবে। সে তাতে সম্মত হল। পরিশেষে যখন তাকে গ্রহণে সক্ষম হলাম, অপর এক বর্ণনায় আছে যখন আমি তার দু পায়ের মাঝে বসলাম, সে বলল, আল্লাহকে ভয় করো। তুমি ন্যায়সঙ্গত অধিকার ছাড়া মোহর ভেঙ্গে ফেলো না (অর্থাৎ সতীত্ব হরণ করো না)। (আমি তার এ কথায় সচেতন হয়ে গেলাম) ফলে তার কাছ থেকে সরে গেলাম। অথচ সে আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। আমি যে সোনা (দীনার) তাকে দিয়েছিলাম, তাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি তা তোমার সন্তুষ্টি কামনায় করে থাকি, তবে আমরা যে অবস্থায় আছি তা থেকে আমাদের মুক্তি দাও। ফলে পাথরটি আরেকটু সরে গেল। কিন্তু তাতেও তারা তা থেকে বের হতে পারছিল না।
তৃতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন শ্রমিক ভাড়া করেছিলাম। তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিকও দিয়েছিলাম, তবে এক ব্যক্তি ছাড়া। তার যা পাওনা ছিল সে রেখে চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিক বিনিয়োগ করতে থাকলাম। ফলে তা বেড়ে প্রচুর সম্পদ হয়ে গেল। কিছুকাল পর সে আমার কাছে আসল এবং বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমার পারিশ্রমিক আমাকে আদায় করে দাও। আমি তাকে বললাম, এই যে উট, গরু, ছাগল ও গোলাম দেখছ, এসবই তোমার সেই পারিশ্রমিক থেকে উৎপন্ন। সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা, তুমি আমার সংগে ঠাট্টা করো না। আমি বললাম, তোমার সংগে ঠাট্টা করছি না। সুতরাং সে তা সব গ্রহণ করল এবং তা হাঁকিয়ে নিয়ে গেল। তা থেকে কিছুই রেখে গেল না। হে আল্লাহ! আমি যদি তা তোমার সন্তুষ্টি কামনায় করে থাকি, তবে আমরা যে অবস্থায় আছি তা থেকে তুমি আমাদের মুক্তি দাও। তখন পাথরটি (পুরোপুরি) সরে গেল এবং তারা বের হয়ে চলে গেল - বুখারী ও মুসলিম।
(বুখারী হাদীস নং ২২৭২,মুসলিম হাদীস নং ২৭৪৩)
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ 
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
12 - وعن أبي عبد الرحمان عبدِ الله بنِ عمرَ بن الخطابِ رضيَ اللهُ عنهما، قَالَ: سمعتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «انطَلَقَ ثَلاثَةُ نَفَرٍ (1) مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى آوَاهُمُ المَبيتُ إِلى غَارٍ فَدَخلُوهُ، فانْحَدرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الغَارَ، فَقالُوا: إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هذِهِ الصَّخْرَةِ إِلاَّ أَنْ تَدْعُوا اللهَ بصَالِحِ أعْمَالِكُمْ.
قَالَ رجلٌ مِنْهُمْ: اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبَوانِ شَيْخَانِ كبيرانِ، وكُنْتُ لا أغْبِقُ (1) قَبْلَهُمَا أهْلًا ولاَ مالًا، فَنَأَى (2) بِي طَلَب الشَّجَرِ يَوْمًا فلم أَرِحْ عَلَيْهمَا حَتَّى نَامَا، فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا فَوَجَدْتُهُما نَائِمَينِ، فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُمَا وَأَنْ أغْبِقَ قَبْلَهُمَا أهْلًا أو مالًا، فَلَبَثْتُ - والْقَدَحُ عَلَى يَدِي - أنتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُما حَتَّى بَرِقَ الفَجْرُ والصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ (3) عِنْدَ قَدَميَّ، فاسْتَيْقَظَا فَشَرِبا غَبُوقَهُما. اللَّهُمَّ إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاء وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هذِهِ الصَّخْرَةِ، فانْفَرَجَتْ شَيْئًا لا يَسْتَطيعُونَ الخُروجَ مِنْهُ.
قَالَ الآخر: اللَّهُمَّ إنَّهُ كانَتْ لِيَ ابْنَةُ عَمّ، كَانَتْ أَحَبَّ النّاسِ إليَّ - وفي رواية: كُنْتُ أُحِبُّها كأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النساءَ - فأَرَدْتُهَا عَلَى نَفْسِهَا (4) فامْتَنَعَتْ منِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بها سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ فَجَاءتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمئةَ دينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْني وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفعَلَتْ، حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا - وفي رواية: فَلَمَّا قَعَدْتُ بَينَ رِجْلَيْهَا، قالتْ: اتَّقِ اللهَ وَلاَ تَفُضَّ الخَاتَمَ إلاّ بِحَقِّهِ (5)، فَانصَرَفْتُ عَنْهَا وَهيَ أَحَبُّ النَّاسِ إليَّ وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أعْطَيتُها. اللَّهُمَّ إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابْتِغاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فيهِ، فانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ، غَيْرَ أَنَّهُمْ لا يَسْتَطِيعُونَ الخُرُوجَ مِنْهَا.
وَقَالَ الثَّالِثُ: اللَّهُمَّ اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ وأَعْطَيْتُهُمْ أجْرَهُمْ غيرَ رَجُل واحدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهبَ، فَثمَّرْتُ أجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنهُ الأمْوَالُ، فَجَاءنِي بَعدَ حِينٍ، فَقالَ: يَا عبدَ اللهِ، أَدِّ إِلَيَّ أجْرِي، فَقُلْتُ: كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أجْرِكَ: مِنَ الإبلِ وَالبَقَرِ والْغَنَمِ والرَّقيقِ، فقالَ: يَا عبدَ اللهِ، لاَ تَسْتَهْزِىءْ بي! فَقُلْتُ: لاَ أسْتَهْزِئ بِكَ، فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فاسْتَاقَهُ فَلَمْ يتْرُكْ مِنهُ شَيئًا. الَّلهُمَّ إنْ كُنتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنَّا مَا نَحنُ فِيهِ، فانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ». (6) مُتَّفَقٌ عليهِ. (7)
قَالَ رجلٌ مِنْهُمْ: اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبَوانِ شَيْخَانِ كبيرانِ، وكُنْتُ لا أغْبِقُ (1) قَبْلَهُمَا أهْلًا ولاَ مالًا، فَنَأَى (2) بِي طَلَب الشَّجَرِ يَوْمًا فلم أَرِحْ عَلَيْهمَا حَتَّى نَامَا، فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا فَوَجَدْتُهُما نَائِمَينِ، فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُمَا وَأَنْ أغْبِقَ قَبْلَهُمَا أهْلًا أو مالًا، فَلَبَثْتُ - والْقَدَحُ عَلَى يَدِي - أنتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُما حَتَّى بَرِقَ الفَجْرُ والصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ (3) عِنْدَ قَدَميَّ، فاسْتَيْقَظَا فَشَرِبا غَبُوقَهُما. اللَّهُمَّ إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاء وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هذِهِ الصَّخْرَةِ، فانْفَرَجَتْ شَيْئًا لا يَسْتَطيعُونَ الخُروجَ مِنْهُ.
قَالَ الآخر: اللَّهُمَّ إنَّهُ كانَتْ لِيَ ابْنَةُ عَمّ، كَانَتْ أَحَبَّ النّاسِ إليَّ - وفي رواية: كُنْتُ أُحِبُّها كأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النساءَ - فأَرَدْتُهَا عَلَى نَفْسِهَا (4) فامْتَنَعَتْ منِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بها سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ فَجَاءتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمئةَ دينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْني وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفعَلَتْ، حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا - وفي رواية: فَلَمَّا قَعَدْتُ بَينَ رِجْلَيْهَا، قالتْ: اتَّقِ اللهَ وَلاَ تَفُضَّ الخَاتَمَ إلاّ بِحَقِّهِ (5)، فَانصَرَفْتُ عَنْهَا وَهيَ أَحَبُّ النَّاسِ إليَّ وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أعْطَيتُها. اللَّهُمَّ إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابْتِغاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فيهِ، فانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ، غَيْرَ أَنَّهُمْ لا يَسْتَطِيعُونَ الخُرُوجَ مِنْهَا.
وَقَالَ الثَّالِثُ: اللَّهُمَّ اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ وأَعْطَيْتُهُمْ أجْرَهُمْ غيرَ رَجُل واحدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهبَ، فَثمَّرْتُ أجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنهُ الأمْوَالُ، فَجَاءنِي بَعدَ حِينٍ، فَقالَ: يَا عبدَ اللهِ، أَدِّ إِلَيَّ أجْرِي، فَقُلْتُ: كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أجْرِكَ: مِنَ الإبلِ وَالبَقَرِ والْغَنَمِ والرَّقيقِ، فقالَ: يَا عبدَ اللهِ، لاَ تَسْتَهْزِىءْ بي! فَقُلْتُ: لاَ أسْتَهْزِئ بِكَ، فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فاسْتَاقَهُ فَلَمْ يتْرُكْ مِنهُ شَيئًا. الَّلهُمَّ إنْ كُنتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنَّا مَا نَحنُ فِيهِ، فانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ». (6) مُتَّفَقٌ عليهِ. (7)
হাদীস নং: ১৩
ভূমিকা অধ্যায়
তাওবা কাকে বলে
'তাওবা'-এর আভিধানিক অর্থ ফেরা ও অভিমুখী হওয়া। তাওবাকারী ব্যক্তি মন্দ অবস্থা থেকে ভালো অবস্থার দিকে এবং আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে। যখন সে গুনাহ করেছিল, তখন আল্লাহর প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছিল। ফলে তাঁর রহমত থেকে দূরে সরে গিয়েছিল এবং তাঁর সংগে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাওবার মাধ্যমে সে সেই উদাসীনতা ছেড়ে আল্লাহর অভিমুখী হয়। তাঁর রহমতের দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাঁর সংগে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে।
শরীআতের পরিভাষায় পাপকর্ম থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলে। কিংবা বলা যায়, গুনাহের কারণে আল্লাহ হতে দূরে সরে যাওয়ার পর লজ্জা ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে পুনরায় তাঁর নৈকট্যের দিকে ফিরে আসার নাম তাওবা।
পাপের স্তরভেদে তাওবারও বিভিন্ন স্তর রয়েছে। সর্বাপেক্ষা কঠিন গুনাহ হল কুফরীকর্ম, যেমন আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা, আল্লাহর সংগে কাউকে শরীক করা, দীনের কোনও বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা ইত্যাদি। তার পরবর্তী স্তরের গুনাহ এমনসব মহাপাপ, যা কুফরীর স্তরের নয়, যেমন চুরি করা, মিথ্যা বলা, গীবত করা ইত্যাদি। সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে সগীরা গুনাহ। যে সকল কাজ সুন্নতে মুআক্কাদা, তাতে গাফলাত করলে সগীরা গুনাহ হয়, যেমন মিসওয়াক না করা, যোহরের আগের ও পরের সুন্নত না পড়া, সালাম না দেওয়া ইত্যাদি।
প্রকাশ থাকে যে, কোনও সগীরা গুনাহ বার বার করতে থাকলে তা আর সগীরা থাকে না; বরং কবীরা গুনাহে পরিণত হয়ে যায়। এমনিভাবে সগীরা গুনাহকে তাচ্ছিল্য করলে বা ঔদ্ধত্যের সাথে তাতে লিপ্ত হলেও তা কবীরা গুনাহ হয়ে যায়।
গুনাহের এই প্রকারভেদ হিসেবে তাওবার প্রথম স্তর হল, কুফর থেকে তাওবা করে ঈমান আনা। অর্থাৎ কেউ যদি কোনও কুফরী কর্মে লিপ্ত থাকে, অতঃপর বুঝতে পারে যে, তার দ্বারা অমুক কুফরী কাজটি হয়ে গেছে, অথবা আগে থেকেই সে কাফেরদের দলভুক্ত থাকে এবং নাস্তিক, ইহুদী, খৃষ্টান, পৌত্তলিক ইত্যাদি ঘরানার লোক হয়ে থাকে, তবে তার কর্তব্য এই কুফরী অবস্থা পরিত্যাগ করে খাঁটি মনে ঈমান আনা ও মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া।
দ্বিতীয় স্তরের তাওবা হল, কবীরা গুনাহ পরিহার করে শরীআতের বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করা। অর্থাৎ কোনও মুসলিম ব্যক্তির দ্বারা কুফরের নিম্নপর্যায়ের কোনও অবাধ্যতা ও নাফরমানী হয়ে গেলে তার কর্তব্য তৎক্ষণাৎ তা পরিহার করে আল্লাহর অভিমুখী হওয়া ও একজন বাধ্য অনুগত বান্দায় পরিণত হয়ে যাওয়া।
তৃতীয় স্তরের তাওবা হল, সমস্ত সগীরা গুনাহ ছেড়ে দিয়ে সুন্নতসম্মত জীবনযাপন করা। অর্থাৎ শরী'আতের অনুগত কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি সর্বদা তাকওয়ার সাথে চলতে সচেষ্ট থাকে, কখনও কোনও কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হয়, কিন্তু অসতর্কতাবশত কোনও সগীরা গুনাহ তার দ্বারা হয়ে যায়, তবে সে ব্যাপারেও তার উচিত খাঁটি মনে তাওবা করা এবং সেই সগীরা গুনাহ ছেড়ে দিয়ে তাকওয়ার উচ্চতর স্তরে অধিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া।
উলামায়ে কিরাম বলেন, প্রতিটি গুনাহ থেকে তাওবা করা অবশ্যকর্তব্য। গুনাহ যদি আল্লাহর হক সংক্রান্ত হয়, কোনও মানুষের হক তার সংগে সম্পৃক্ত না থাকে, তবে তার জন্য তিনটা শর্ত- (ক) গুনাহের কাজটি ছেড়ে দেওয়া; (খ) তা করে ফেলার পর তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং (গ) আর কখনও তাতে লিপ্ত না হওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। এই তিনটি শর্তের কোনও একটি পূরণ না হলে তাওবা সঠিক হয় না।
গুনাহ যদি বান্দার হক সংক্রান্ত হয়, তবে তার জন্য শর্ত চারটি- উপরের তিনটি আর চতুর্থ শর্ত হল, সেই হকের ব্যাপারে পাওনাদারের পক্ষ হতে দায়মুক্ত হওয়া। দায়মুক্ত হওয়ার উপায় একেক অবস্থায় একেক রকম, যেমন সে হক যদি অর্থ-সম্পদ জাতীয় হয়, তবে তা তাকে ফেরত দেওয়া। যদি কারও প্রতি অপবাদ দিয়ে থাকে, তবে সেই অপবাদের শাস্তি আরোপের সুযোগ করে দেওয়া অথবা তার কাছ থেকে সরাসরি মাফ চেয়ে নেওয়া। যদি গীবত হয়ে থাকে, তবে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া।
সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবা করা জরুরি। যদি সব গুনাহ থেকে তাওবা না করে বিশেষ কোনোটির ব্যাপারে করে থাকে, তবে হকপন্থীদের মতে সেই গুনাহের ব্যাপারে তাওবা সহীহ হবে বটে, কিন্তু অন্যসব গুনাহ তার উপর থেকে যাবে।
তাওবা করা যে অবশ্যকর্তব্য, এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহে প্রচুর দলীল আছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমাও সংঘটিত হয়ে আছে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
قَالَ الله تَعَالَى: {وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [النور: 31]
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর।- নূরঃ ৩১
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ} [هود: 3]
অর্থ : এবং এই (পথনির্দেশ দেয়) যে, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও।- হুদঃ ০৩
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحا} [التحريم: 8]
অর্থ : হে মুমিনগণ! আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা কর।- তাহরীমঃ ০৮
অবশ্য বান্দা যখনই তাওবা করবে, তখন এ গুনাহের স্তরভেদ অনুযায়ী আলাদা আলাদা তাওবা না করে একইসংগে সর্বপ্রকার পাপ থেকে তাওবা করা উচিত।
ব্যাখ্যা: এ তিন আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা মু'মিনদেরকে তাঁর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা ও তাওবা করার হুকুম দিয়েছেন। সুতরাং তাওবা করা প্রত্যেক মু'মিনের জন্য ফরয ও অবশ্যকর্তব্য।
তাওবা কবুলের শর্তসমূহঃ
প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহ ও বান্দার সাথে সম্পর্ক হিসেবে গুনাহ দুই প্রকার- এক. আল্লাহর হক নষ্ট করা সম্পর্কিত গুনাহ, যেমন নামায না পড়া, রোযা না রাখা ইত্যাদি।
দুই. বান্দার হক নষ্ট করা সম্পর্কিত গুনাহ, যেমন কারও সম্পদ আত্মসাৎ করা, কারও গীবত করা, অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি।
ইমাম নববী রহ. প্রথম প্রকারের গুনাহ থেকে তাওবার জন্য তিনটা শর্ত বলেছেন-
ক. গুনাহ পরিত্যাগ করা। এর মানে যেই গুনাহের ব্যাপারে তাওবা করছে, প্রথমে সেই গুনাহটি ছাড়তে হবে, যেমন নামায না পড়ার গুনাহ থেকে তাওবা করতে হলে প্রথমে নামায না পড়ার অপরাধ থেকে ফিরে আসতে হবে অর্থাৎ নামায পড়া শুরু করে দিতে হবে। গুনাহ না ছেড়ে তাওবা করলে সেই তাওবার কোনও সার্থকতা নেই। গুনাহ করতে থাকলাম আবার তাওবাও করলাম, এটা একটা তামাশা। অনেকে আছে মুখে তাওবা তাওবা বলে, তাওবা বলে দুই গালে দুই থাপ্পর মারে, আবার কৃত গুনাহ যথারীতি চালিয়েও যায়। এটা তাওবার নামে তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। বরং এ হিসেবে এটাও এক গুরুতর পাপ। কেননা তাওবা করা মানে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। আল্লাহর দিকে রুজু তো পাপকর্ম ছেড়ে দিয়েই করতে হয়। নয়তো সেই রুজু একটা ধৃষ্টতা। যেন সে পাপকর্মকে প্রকৃতপক্ষে কোনও অপরাধই মনে করে না। এরূপ তাওবার জন্য নতুন করে আবার তাওবা করা উচিত।
খ. তিনি দ্বিতীয় শর্ত বলেছেন, মনে মনে অনুতপ্ত হওয়া। এটা তাওবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ অন্তরে এই ভাব জন্মানো যে, আমার দ্বারা নিতান্তই ভুল হয়ে গেছে। এই কাজ করা আমার পক্ষে কিছুতেই উচিত হয়নি। আল্লাহ ক্ষমা না করলে তো আমাকে এজন্যে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। অন্তরে এই অনুভূতি জন্মালে তবেই সে তাওবা খাঁটি তাওবা হয় এবং প্রমাণ হয় যে, সে ইখলাসের সংগেই তাওবা করেছে। তাওবা তো একটি আমলই বটে। এটা কবুল হওয়ার জন্যও ইখলাস জরুরি। তাওবার ক্ষেত্রে ওই অনুভূতি থাকাটাই ইখলাসের পরিচায়ক। নয়তো এটা একটা লোকদেখানো ভড়ং মাত্র হয়ে যায়, আল্লাহ তা'আলার কাছে যার কোনও মূল্য নেই। এজন্যই এক হাদীছে আছে, الندم التوبة “অনুতাপ-অনুশোচনাই তাওবা”।
গ. তৃতীয় শর্ত ভবিষ্যতে সেই গুনাহে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করা। তাওবা করার সময় যদি মনে এই ধারণা থাকে যে, সুযোগ হলে আবারও সে এই কাজ করবে, তবে তা আদৌ তাওবা বলে বিবেচ্য হবে না এবং আল্লাহর কাছে তা কবুলও হবে না। হ্যাঁ এটা সম্ভব যে, ভবিষ্যতে সেই গুনাহ আর না করার অঙ্গীকারেই সে তাওবা করেছে, পরবর্তীকালে নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে পুনরায় সে একই গুনাহ করে ফেলেছে। এটা তাওবার পরিপন্থী নয়। এরূপ ক্ষেত্রে কর্তব্য আবারও তাওবা করা। এভাবে পুনরায় গুনাহ না করার প্রতিশ্রুতিতে যদি বার বার তাওবা করা হয় এবং প্রতিবারই তাওবার পরে ফের একই গুনাহ হয়ে যায়, তবে এর দ্বারা তার তাওবা নিরর্থক গণ্য হবে না। বরং আন্তরিক অনুশোচনার সংগে বার বার এরকম তাওবা করা তার আল্লাহ অভিমুখিতারই পরিচায়ক সাব্যস্ত হবে।
তাওবা করতে বিলম্ব করা উচিত নয়
প্রকাশ থাকে যে, গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করতে বিলম্ব করা উচিত নয়। তাওবা যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই তা কবুলের পক্ষে সহায়ক হয়। বরং প্রকৃত মুমিনের পরিচয় তো এটাই যে, এক তো সে কোনও গুনাহ পরিকল্পিতভাবে করবে না, বরং তার দ্বারা কোনও গুনাহ হলে তা হবে আকস্মিক দুর্ঘটনাবশত, ঠিক পিচ্ছিল পথে আছড়ে পড়ার মত। কেউ পরিকল্পিতভাবে আছাড় খায় না। অসতর্কতাবশত পড়ে যায় মাত্র। অসতর্কতাবশত যে ব্যক্তি পড়ে যায়, সে যেমন চটজলদি উঠে কাপড়চোপড় পরিষ্কার করে ফেলে, ঠিক তেমনি মু'মিন ব্যক্তি দ্বারা কোনও গুনাহ হয়ে গেলে সেও চটজলদি তাওবা করে সাফসুতরা হয়ে যাবে। এ কথাই কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে যে-
{إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا} [النساء: 17]
অর্থ : আল্লাহ অবশ্যই সেইসব লোকের তাওবা কবুল করেন, যারা অজ্ঞতাবশত কোনও গুনাহ করে ফেলে, তারপর জলদি তাওবা করে নেয়। সুতরাং আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত, প্রজ্ঞাময়।- নিসাঃ ১৭
গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করতে গড়িমসি করা কোনও মু'মিনের পক্ষে শোভনীয় নয়। এটা হল আছাড় খেয়ে পড়ে থাকার মত। কোনও বুদ্ধিমান লোক ওরকম পড়ে থাকেনা। ঠিক তেমনি প্রকৃত কোনও মু'মিন ব্যক্তিও গুনাহ নিয়ে বসে থাকতে পারে না। তার মনে ভয় থাকবে- নাজানি কখন মৃত্যু এসে যায় আর এই গুনাহের ময়লা নিয়েই কবরে চলে যেতে হয়। তা যাতে না হয়, তাই অবিলম্বেই সে তাওবা করে পাকসাফ হয়ে যাবে। তাছাড়া এই ভয়ও তো আছে যে, দেরি করতে করতে একদম মৃত্যুর কাছাকাছি সময় চলে আসবে এবং মালাকুল মাওতের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। যখন মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়, তখন তাওবা করলে সে তাওবা কবুল হয় না। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
{وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا} [النساء: 18]
অর্থ : তাওবা কবুল তাদের প্রাপ্য নয়, যারা অসৎকর্ম করতে থাকে, পরিশেষে তাদের কারও যখন মৃত্যুক্ষণ এসে পড়ে, তখন সে বলে, এখন আমি তাওবা করলাম।- নিসাঃ ১৮
বান্দার পক্ষ থেকে ক্ষমালাভও জরুরি
ইমাম নববী রহ. বান্দার হক সম্পর্কিত গুনাহ থেকে তাওবার জন্য চতুর্থ শর্ত বলেছেন, বান্দার পক্ষ থেকে দায়মুক্ত হওয়া। বস্তুত বান্দার হকের ব্যাপারটি খুবই কঠিন। আল্লাহ তা'আলা তো বেনিয়াজ এবং তিনি অমর, অক্ষয়। একে তো তার কোনও ঠেকা ও অভাব নেই। তিনি চাইলেই যেকোনও গুনাহ মাফ করতে পারেন, এমনকি চাইলে বিনা তাওবায়ও মাফ করতে পারেন। দ্বিতীয়ত যেকোনো সময়ই তার কাছে তাওবা করার সুযোগ আছে। বান্দার যতদিন হায়াত আছে, ততদিন আল্লাহর কাছে তাওবার দুয়ার অবারিত। কিন্তু বান্দার ব্যাপারটা এমন নয়। বান্দা ধনী হোক, তারপরও অভাবগ্রস্ত এবং সে মরণশীলও বটে। কাজেই কারো কোনো হক নষ্ট করলে বান্দা তা মাফ নাও করতে পারে। আবার এমনও হতে পারে মাফ চাওয়ার সুযোগই হল না, তার আগেই সে মারা গেল। এ কারণেই বান্দার হকের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি, যাতে কখনোই তা নষ্ট করা না হয়। কখনও কোনও বান্দার হক নষ্ট করে ফেললে যথাশীঘ্র তা আদায় করে দেওয়া উচিত বা ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত।
ইমাম নববী রহ. বলেছেন, যদি মাল-সম্পদ জাতীয় জিনিস হয়, তবে তাকে তা ফেরত দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাকে যদি না পাওয়া যায় তখন কী করণীয়? যেমন হয়ত মারা গেছে, কিংবা কোথায় আছে তার ঠিকানা জানা নেই, কিংবা পাওনাদারের সংখ্যা অতি বিপুল, যাদের প্রত্যেকের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়, যেমন সরকারি সম্পদে তসরুফ করলে তার পাওনাদার হয়ে যায় গোটা দেশবাসী। এরূপ ক্ষেত্রে উপায় কী?
এর উত্তর হল, পাওনাদার যদি মারা গিয়ে থাকে, তবে তার ওয়ারিশদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। যদি নিরুদ্দেশ হয়ে থাকে এবং তার কোনও ওয়ারিশ না পাওয়া যায়। তবে তার নামে তা সদকা করে দিতে হবে। সরকারি সম্পদ হয়ে থাকলে সরকারের কোনও ফান্ডে তা জমা দিতে হবে। এর বিস্তারিত খুটিনাটি আলেমদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত।
আর যদি মাল-সম্পদ জাতীয় জিনিস না হয়, বরং কারও অন্য কোনও রকমের হক নষ্ট করা হয়ে থাকে, যেমন কাউকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হল। এতে তার জানের হক নষ্ট করা হয়েছে। অথবা কাউকে গাল দেওয়া হয়েছে, তার নামে, অপবাদ ছড়ানো হয়েছে। এর দ্বারা তার ইজ্জতের হক নষ্ট হয়েছে। এরকম ক্ষেত্রে কর্তব্য তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। আর যদি সে মারা গিয়ে থাকে, তবে তার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করা, যেন আল্লাহ তা'আলা তার পাপরাশি মাফ করে দেন। তার প্রতি রহমত করেন, তাকে কবরে শান্তিতে রাখেন, তাকে জান্নাতবাসী করেন ইত্যাদি। এরূপ দু'আ করতে থাকলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ হতে ক্ষমার ব্যবস্থা করে দেবেন।
তারপর ইমাম নববী রহ. বলেন, তাওবা ওয়াজিব হওয়ার সপক্ষে কুরআন ও সুন্নাহে প্রচুর দলীল আছে এবং আছে ইজমা' । তিনি এস্থলে তিনটি আয়াত উল্লেখ করেছেন।
তাওবা সম্পর্কিত কতিপয় আয়াতঃ
এক নং আয়াত
قَالَ الله تَعَالَى: {وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [النور: 31]
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। নূরঃ ৩১
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সকল মু'মিনকে তাওবা করার হুকুম দিয়েছেন। বলাবাহুল্য, নবী-রাসূলগণ ছাড়া আর কোনও মানুষই মা'সুম ও নিষ্পাপ নয়। প্রত্যেকের দ্বারাই ছোট-বড় গুনাহ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। ফলে কারোরই নিজেকে নিষ্পাপ ভাবার সুযোগ নেই। আর বাস্তবিকপক্ষে আমাদের দ্বারা তো হামেশাই নানারকম গুনাহ হয়ে থাকে। অনিচ্ছাকৃত তো বটেই, ইচ্ছাকৃতভাবেও আমরা অনেক গুনাহ করে ফেলি। নবী-রাসূলগণ মাসুম হওয়া সত্ত্বেও তাওবা-ইস্তিগফার করতেন। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- "আমি রোজ একশ বার তাওবা করি"। গুনাহ না থাকা সত্ত্বেও যখন তিনি রোজ একশ বার তাওবা করতেন, তখন আমাদের কী পরিমাণ তাওবা করা উচিত? আমাদের গোটা অস্তিত্বই তো পাপে পঙ্কিল। রাশি-রাশি পাপের বোঝা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের উচিত, উঠতে-বসতে সর্বক্ষণ তাওবা ইস্তিগফারে রত থাকা।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, তাওবা করলে তোমরা সফল হতে পারবে। নিশ্চয়ই মুমিনের সফলতা তাওবার মধ্যেই নিহিত। কেননা তাওবা না করলে বিপুল পাপের বোঝা নিয়ে কবরে যেতে হবে। আর যার পুণ্য অপেক্ষা পাপের ওজন বেশি হবে, তার ঠিকানা জাহান্নাম। জাহান্নামে যাওয়া মানবজীবনের চরম ব্যর্থতা। সফল ও কৃতকার্য কেবল সেই, যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের অধিকারী হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
{فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ} [آل عمران: 185]
অর্থঃ অতঃপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। আলু ইমরানঃ ১৮৫
এই সফলতা লাভের একমাত্র উপায় ইহজীবনে নিজেকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করা। আর সেজন্যই তাওবার ব্যবস্থা।
দুই নং আয়াত
وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ} [هود: 3]
অর্থঃ এবং এই (পথনির্দেশ দেয়) যে, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও।- হুদঃ ০৩
ব্যাখ্যা
এ আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা মু'মিনদেরকে তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তাওবা করার হুকুম দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর 'রব্ব' নামটির উল্লেখ দ্বারা ইশারা করছেন যে, যেই মহান প্রতিপালক তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং জীবন ধারণের যাবতীয় উপকরণ দিয়ে তোমাদের প্রতিপালন করছেন, তোমাদের তো কর্তব্য তাঁর শোকরগুযার ও অনুগত হয়ে থাকা। সর্বক্ষণ তাঁর অসংখ্য নি'আমতের ভেতর ডুবে থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তোমরা তাঁর নাফরমানী করছ? এ তোমাদের চরম অকৃতজ্ঞতা। তোমরা এর থেকে ক্ষান্ত হও। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং সমস্ত পাপাচার ছেড়ে দিয়ে তাঁর অভিমুখী হয়ে যাও। যেই মহান প্রতিপালক এতকিছু নি'আমতের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালন করছেন, তিনি যে অতিশয় দয়ালু তাতে সন্দেহ আছে কি? তোমরা যদি খাঁটি মনে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তবে অবশ্যই তিনি নিজ দয়ায় তোমাদের যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَارَا
অর্থ : নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।- নুহঃ ১০
“অতিশয় ক্ষমাশীল” বলে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করছেন যে, তোমরা যত বড় ও যত বিপুল গুনাহই কর না কেন, হতাশার কোনও কারণ নেই। তিনি সব গুনাহই ক্ষমা করে দেবেন। অন্য এক আয়াতে তিনি সুস্পষ্ট আশ্বাসবাণী শোনান যে-
قُلْ يَاعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থ : হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার উপর সীমালংঘন করেছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।- যুমারঃ ৫৩
তিন নং আয়াত
وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحا} [التحريم: 8]
অর্থ : হে মুমিনগণ! আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা কর। তাহরীমঃ ০৮
“তাওবাতুন নাসূহ” কাকে বলে
এ আয়াতে যে 'তাওবাতুন-নাসূহ' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযি. ও উবাঈ ইবনে কা'ব রাযি. বলেন, "তাওবাতুন-নাসূহ' হল গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং তারপর আর সেদিকে ফিরে না যাওয়া, যেমন দুধ দোয়ানোর পর তা আর ওলানের ভেতর ফিরে যায় না।
হাসান বসরী রহ. বলেন, অতীত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং পুনরায় তাতে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ হওয়াকে তাওবাতুন-নাসূহ বলে।
কালবী রহ. বলেন, মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করা, অন্তরে অনুতপ্ত হওয়া এবং শারীরিকভাবে গুনাহ থেকে নিবৃত্ত হওয়া এই তিনের সমষ্টিই তাওবাতুন-নাসূহ।
ভাষা ভিন্ন হলেও সবগুলো ব্যাখ্যার সারকথা একই। অর্থাৎ খাঁটি মনে তাওবা করা। যে ব্যক্তি খাঁটি মনে তাওবা করবে, সে অবশ্যই পাপের দরুন মনে মনে অনুতপ্ত হবে, মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, গুনাহ পরিহার করবে এবং পুনরায় তাতে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ হবে।
সুতরাং তাওবা করার পর প্রত্যেকের কর্তব্য নিজ সংকল্প রক্ষা করা। অর্থাৎ নিজেকে সংশোধন করে সৎকর্মে লিপ্ত থাকা এবং পুনরায় পাপের পথে ফিরে না যাওয়া। এরূপ করতে পারলে সেটাই হবে তার তাওবাতুন-নাসূহ। হ্যাঁ, এরপরও পদস্খলন ঘটা অসম্ভব নয়। মানবস্বভাব বড়ই দুর্বল। কাজেই যদি কখনও পদস্খলন ঘটেই যায় এবং একই গুনাহ আবারও হয়ে যায়, তখনও কর্তব্য হবে ফের তাওবার আশ্রয় নেওয়া এবং তাতেও তাওবার সবগুলো শর্ত রক্ষা করা। এভাবে যদি বারবার সংকল্প টুটে যায়, তবে বারবারই তাওবা করবে এবং নতুনভাবে সংকল্পবদ্ধ হবে। তাতে আশা করা যায়, গুনাহ মাফ হওয়ার সাথে সাথে এক পর্যায়ে সংকল্প রক্ষারও তাওফীক হয়ে যাবে।
'তাওবা'-এর আভিধানিক অর্থ ফেরা ও অভিমুখী হওয়া। তাওবাকারী ব্যক্তি মন্দ অবস্থা থেকে ভালো অবস্থার দিকে এবং আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে। যখন সে গুনাহ করেছিল, তখন আল্লাহর প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছিল। ফলে তাঁর রহমত থেকে দূরে সরে গিয়েছিল এবং তাঁর সংগে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাওবার মাধ্যমে সে সেই উদাসীনতা ছেড়ে আল্লাহর অভিমুখী হয়। তাঁর রহমতের দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাঁর সংগে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে।
শরীআতের পরিভাষায় পাপকর্ম থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলে। কিংবা বলা যায়, গুনাহের কারণে আল্লাহ হতে দূরে সরে যাওয়ার পর লজ্জা ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে পুনরায় তাঁর নৈকট্যের দিকে ফিরে আসার নাম তাওবা।
পাপের স্তরভেদে তাওবারও বিভিন্ন স্তর রয়েছে। সর্বাপেক্ষা কঠিন গুনাহ হল কুফরীকর্ম, যেমন আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা, আল্লাহর সংগে কাউকে শরীক করা, দীনের কোনও বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা ইত্যাদি। তার পরবর্তী স্তরের গুনাহ এমনসব মহাপাপ, যা কুফরীর স্তরের নয়, যেমন চুরি করা, মিথ্যা বলা, গীবত করা ইত্যাদি। সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে সগীরা গুনাহ। যে সকল কাজ সুন্নতে মুআক্কাদা, তাতে গাফলাত করলে সগীরা গুনাহ হয়, যেমন মিসওয়াক না করা, যোহরের আগের ও পরের সুন্নত না পড়া, সালাম না দেওয়া ইত্যাদি।
প্রকাশ থাকে যে, কোনও সগীরা গুনাহ বার বার করতে থাকলে তা আর সগীরা থাকে না; বরং কবীরা গুনাহে পরিণত হয়ে যায়। এমনিভাবে সগীরা গুনাহকে তাচ্ছিল্য করলে বা ঔদ্ধত্যের সাথে তাতে লিপ্ত হলেও তা কবীরা গুনাহ হয়ে যায়।
গুনাহের এই প্রকারভেদ হিসেবে তাওবার প্রথম স্তর হল, কুফর থেকে তাওবা করে ঈমান আনা। অর্থাৎ কেউ যদি কোনও কুফরী কর্মে লিপ্ত থাকে, অতঃপর বুঝতে পারে যে, তার দ্বারা অমুক কুফরী কাজটি হয়ে গেছে, অথবা আগে থেকেই সে কাফেরদের দলভুক্ত থাকে এবং নাস্তিক, ইহুদী, খৃষ্টান, পৌত্তলিক ইত্যাদি ঘরানার লোক হয়ে থাকে, তবে তার কর্তব্য এই কুফরী অবস্থা পরিত্যাগ করে খাঁটি মনে ঈমান আনা ও মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া।
দ্বিতীয় স্তরের তাওবা হল, কবীরা গুনাহ পরিহার করে শরীআতের বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করা। অর্থাৎ কোনও মুসলিম ব্যক্তির দ্বারা কুফরের নিম্নপর্যায়ের কোনও অবাধ্যতা ও নাফরমানী হয়ে গেলে তার কর্তব্য তৎক্ষণাৎ তা পরিহার করে আল্লাহর অভিমুখী হওয়া ও একজন বাধ্য অনুগত বান্দায় পরিণত হয়ে যাওয়া।
তৃতীয় স্তরের তাওবা হল, সমস্ত সগীরা গুনাহ ছেড়ে দিয়ে সুন্নতসম্মত জীবনযাপন করা। অর্থাৎ শরী'আতের অনুগত কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি সর্বদা তাকওয়ার সাথে চলতে সচেষ্ট থাকে, কখনও কোনও কবীরা গুনাহে লিপ্ত না হয়, কিন্তু অসতর্কতাবশত কোনও সগীরা গুনাহ তার দ্বারা হয়ে যায়, তবে সে ব্যাপারেও তার উচিত খাঁটি মনে তাওবা করা এবং সেই সগীরা গুনাহ ছেড়ে দিয়ে তাকওয়ার উচ্চতর স্তরে অধিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া।
উলামায়ে কিরাম বলেন, প্রতিটি গুনাহ থেকে তাওবা করা অবশ্যকর্তব্য। গুনাহ যদি আল্লাহর হক সংক্রান্ত হয়, কোনও মানুষের হক তার সংগে সম্পৃক্ত না থাকে, তবে তার জন্য তিনটা শর্ত- (ক) গুনাহের কাজটি ছেড়ে দেওয়া; (খ) তা করে ফেলার পর তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং (গ) আর কখনও তাতে লিপ্ত না হওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। এই তিনটি শর্তের কোনও একটি পূরণ না হলে তাওবা সঠিক হয় না।
গুনাহ যদি বান্দার হক সংক্রান্ত হয়, তবে তার জন্য শর্ত চারটি- উপরের তিনটি আর চতুর্থ শর্ত হল, সেই হকের ব্যাপারে পাওনাদারের পক্ষ হতে দায়মুক্ত হওয়া। দায়মুক্ত হওয়ার উপায় একেক অবস্থায় একেক রকম, যেমন সে হক যদি অর্থ-সম্পদ জাতীয় হয়, তবে তা তাকে ফেরত দেওয়া। যদি কারও প্রতি অপবাদ দিয়ে থাকে, তবে সেই অপবাদের শাস্তি আরোপের সুযোগ করে দেওয়া অথবা তার কাছ থেকে সরাসরি মাফ চেয়ে নেওয়া। যদি গীবত হয়ে থাকে, তবে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া।
সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবা করা জরুরি। যদি সব গুনাহ থেকে তাওবা না করে বিশেষ কোনোটির ব্যাপারে করে থাকে, তবে হকপন্থীদের মতে সেই গুনাহের ব্যাপারে তাওবা সহীহ হবে বটে, কিন্তু অন্যসব গুনাহ তার উপর থেকে যাবে।
তাওবা করা যে অবশ্যকর্তব্য, এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহে প্রচুর দলীল আছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমাও সংঘটিত হয়ে আছে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
قَالَ الله تَعَالَى: {وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [النور: 31]
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর।- নূরঃ ৩১
তিনি আরও ইরশাদ করেন-
وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ} [هود: 3]
অর্থ : এবং এই (পথনির্দেশ দেয়) যে, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও।- হুদঃ ০৩
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحا} [التحريم: 8]
অর্থ : হে মুমিনগণ! আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা কর।- তাহরীমঃ ০৮
অবশ্য বান্দা যখনই তাওবা করবে, তখন এ গুনাহের স্তরভেদ অনুযায়ী আলাদা আলাদা তাওবা না করে একইসংগে সর্বপ্রকার পাপ থেকে তাওবা করা উচিত।
ব্যাখ্যা: এ তিন আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা মু'মিনদেরকে তাঁর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা ও তাওবা করার হুকুম দিয়েছেন। সুতরাং তাওবা করা প্রত্যেক মু'মিনের জন্য ফরয ও অবশ্যকর্তব্য।
তাওবা কবুলের শর্তসমূহঃ
প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহ ও বান্দার সাথে সম্পর্ক হিসেবে গুনাহ দুই প্রকার- এক. আল্লাহর হক নষ্ট করা সম্পর্কিত গুনাহ, যেমন নামায না পড়া, রোযা না রাখা ইত্যাদি।
দুই. বান্দার হক নষ্ট করা সম্পর্কিত গুনাহ, যেমন কারও সম্পদ আত্মসাৎ করা, কারও গীবত করা, অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি।
ইমাম নববী রহ. প্রথম প্রকারের গুনাহ থেকে তাওবার জন্য তিনটা শর্ত বলেছেন-
ক. গুনাহ পরিত্যাগ করা। এর মানে যেই গুনাহের ব্যাপারে তাওবা করছে, প্রথমে সেই গুনাহটি ছাড়তে হবে, যেমন নামায না পড়ার গুনাহ থেকে তাওবা করতে হলে প্রথমে নামায না পড়ার অপরাধ থেকে ফিরে আসতে হবে অর্থাৎ নামায পড়া শুরু করে দিতে হবে। গুনাহ না ছেড়ে তাওবা করলে সেই তাওবার কোনও সার্থকতা নেই। গুনাহ করতে থাকলাম আবার তাওবাও করলাম, এটা একটা তামাশা। অনেকে আছে মুখে তাওবা তাওবা বলে, তাওবা বলে দুই গালে দুই থাপ্পর মারে, আবার কৃত গুনাহ যথারীতি চালিয়েও যায়। এটা তাওবার নামে তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। বরং এ হিসেবে এটাও এক গুরুতর পাপ। কেননা তাওবা করা মানে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। আল্লাহর দিকে রুজু তো পাপকর্ম ছেড়ে দিয়েই করতে হয়। নয়তো সেই রুজু একটা ধৃষ্টতা। যেন সে পাপকর্মকে প্রকৃতপক্ষে কোনও অপরাধই মনে করে না। এরূপ তাওবার জন্য নতুন করে আবার তাওবা করা উচিত।
খ. তিনি দ্বিতীয় শর্ত বলেছেন, মনে মনে অনুতপ্ত হওয়া। এটা তাওবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ অন্তরে এই ভাব জন্মানো যে, আমার দ্বারা নিতান্তই ভুল হয়ে গেছে। এই কাজ করা আমার পক্ষে কিছুতেই উচিত হয়নি। আল্লাহ ক্ষমা না করলে তো আমাকে এজন্যে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। অন্তরে এই অনুভূতি জন্মালে তবেই সে তাওবা খাঁটি তাওবা হয় এবং প্রমাণ হয় যে, সে ইখলাসের সংগেই তাওবা করেছে। তাওবা তো একটি আমলই বটে। এটা কবুল হওয়ার জন্যও ইখলাস জরুরি। তাওবার ক্ষেত্রে ওই অনুভূতি থাকাটাই ইখলাসের পরিচায়ক। নয়তো এটা একটা লোকদেখানো ভড়ং মাত্র হয়ে যায়, আল্লাহ তা'আলার কাছে যার কোনও মূল্য নেই। এজন্যই এক হাদীছে আছে, الندم التوبة “অনুতাপ-অনুশোচনাই তাওবা”।
গ. তৃতীয় শর্ত ভবিষ্যতে সেই গুনাহে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করা। তাওবা করার সময় যদি মনে এই ধারণা থাকে যে, সুযোগ হলে আবারও সে এই কাজ করবে, তবে তা আদৌ তাওবা বলে বিবেচ্য হবে না এবং আল্লাহর কাছে তা কবুলও হবে না। হ্যাঁ এটা সম্ভব যে, ভবিষ্যতে সেই গুনাহ আর না করার অঙ্গীকারেই সে তাওবা করেছে, পরবর্তীকালে নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে পুনরায় সে একই গুনাহ করে ফেলেছে। এটা তাওবার পরিপন্থী নয়। এরূপ ক্ষেত্রে কর্তব্য আবারও তাওবা করা। এভাবে পুনরায় গুনাহ না করার প্রতিশ্রুতিতে যদি বার বার তাওবা করা হয় এবং প্রতিবারই তাওবার পরে ফের একই গুনাহ হয়ে যায়, তবে এর দ্বারা তার তাওবা নিরর্থক গণ্য হবে না। বরং আন্তরিক অনুশোচনার সংগে বার বার এরকম তাওবা করা তার আল্লাহ অভিমুখিতারই পরিচায়ক সাব্যস্ত হবে।
তাওবা করতে বিলম্ব করা উচিত নয়
প্রকাশ থাকে যে, গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করতে বিলম্ব করা উচিত নয়। তাওবা যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই তা কবুলের পক্ষে সহায়ক হয়। বরং প্রকৃত মুমিনের পরিচয় তো এটাই যে, এক তো সে কোনও গুনাহ পরিকল্পিতভাবে করবে না, বরং তার দ্বারা কোনও গুনাহ হলে তা হবে আকস্মিক দুর্ঘটনাবশত, ঠিক পিচ্ছিল পথে আছড়ে পড়ার মত। কেউ পরিকল্পিতভাবে আছাড় খায় না। অসতর্কতাবশত পড়ে যায় মাত্র। অসতর্কতাবশত যে ব্যক্তি পড়ে যায়, সে যেমন চটজলদি উঠে কাপড়চোপড় পরিষ্কার করে ফেলে, ঠিক তেমনি মু'মিন ব্যক্তি দ্বারা কোনও গুনাহ হয়ে গেলে সেও চটজলদি তাওবা করে সাফসুতরা হয়ে যাবে। এ কথাই কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে যে-
{إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا} [النساء: 17]
অর্থ : আল্লাহ অবশ্যই সেইসব লোকের তাওবা কবুল করেন, যারা অজ্ঞতাবশত কোনও গুনাহ করে ফেলে, তারপর জলদি তাওবা করে নেয়। সুতরাং আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত, প্রজ্ঞাময়।- নিসাঃ ১৭
গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করতে গড়িমসি করা কোনও মু'মিনের পক্ষে শোভনীয় নয়। এটা হল আছাড় খেয়ে পড়ে থাকার মত। কোনও বুদ্ধিমান লোক ওরকম পড়ে থাকেনা। ঠিক তেমনি প্রকৃত কোনও মু'মিন ব্যক্তিও গুনাহ নিয়ে বসে থাকতে পারে না। তার মনে ভয় থাকবে- নাজানি কখন মৃত্যু এসে যায় আর এই গুনাহের ময়লা নিয়েই কবরে চলে যেতে হয়। তা যাতে না হয়, তাই অবিলম্বেই সে তাওবা করে পাকসাফ হয়ে যাবে। তাছাড়া এই ভয়ও তো আছে যে, দেরি করতে করতে একদম মৃত্যুর কাছাকাছি সময় চলে আসবে এবং মালাকুল মাওতের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। যখন মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়, তখন তাওবা করলে সে তাওবা কবুল হয় না। কুরআন মাজীদে ইরশাদ-
{وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا} [النساء: 18]
অর্থ : তাওবা কবুল তাদের প্রাপ্য নয়, যারা অসৎকর্ম করতে থাকে, পরিশেষে তাদের কারও যখন মৃত্যুক্ষণ এসে পড়ে, তখন সে বলে, এখন আমি তাওবা করলাম।- নিসাঃ ১৮
বান্দার পক্ষ থেকে ক্ষমালাভও জরুরি
ইমাম নববী রহ. বান্দার হক সম্পর্কিত গুনাহ থেকে তাওবার জন্য চতুর্থ শর্ত বলেছেন, বান্দার পক্ষ থেকে দায়মুক্ত হওয়া। বস্তুত বান্দার হকের ব্যাপারটি খুবই কঠিন। আল্লাহ তা'আলা তো বেনিয়াজ এবং তিনি অমর, অক্ষয়। একে তো তার কোনও ঠেকা ও অভাব নেই। তিনি চাইলেই যেকোনও গুনাহ মাফ করতে পারেন, এমনকি চাইলে বিনা তাওবায়ও মাফ করতে পারেন। দ্বিতীয়ত যেকোনো সময়ই তার কাছে তাওবা করার সুযোগ আছে। বান্দার যতদিন হায়াত আছে, ততদিন আল্লাহর কাছে তাওবার দুয়ার অবারিত। কিন্তু বান্দার ব্যাপারটা এমন নয়। বান্দা ধনী হোক, তারপরও অভাবগ্রস্ত এবং সে মরণশীলও বটে। কাজেই কারো কোনো হক নষ্ট করলে বান্দা তা মাফ নাও করতে পারে। আবার এমনও হতে পারে মাফ চাওয়ার সুযোগই হল না, তার আগেই সে মারা গেল। এ কারণেই বান্দার হকের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি, যাতে কখনোই তা নষ্ট করা না হয়। কখনও কোনও বান্দার হক নষ্ট করে ফেললে যথাশীঘ্র তা আদায় করে দেওয়া উচিত বা ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত।
ইমাম নববী রহ. বলেছেন, যদি মাল-সম্পদ জাতীয় জিনিস হয়, তবে তাকে তা ফেরত দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাকে যদি না পাওয়া যায় তখন কী করণীয়? যেমন হয়ত মারা গেছে, কিংবা কোথায় আছে তার ঠিকানা জানা নেই, কিংবা পাওনাদারের সংখ্যা অতি বিপুল, যাদের প্রত্যেকের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়, যেমন সরকারি সম্পদে তসরুফ করলে তার পাওনাদার হয়ে যায় গোটা দেশবাসী। এরূপ ক্ষেত্রে উপায় কী?
এর উত্তর হল, পাওনাদার যদি মারা গিয়ে থাকে, তবে তার ওয়ারিশদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। যদি নিরুদ্দেশ হয়ে থাকে এবং তার কোনও ওয়ারিশ না পাওয়া যায়। তবে তার নামে তা সদকা করে দিতে হবে। সরকারি সম্পদ হয়ে থাকলে সরকারের কোনও ফান্ডে তা জমা দিতে হবে। এর বিস্তারিত খুটিনাটি আলেমদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত।
আর যদি মাল-সম্পদ জাতীয় জিনিস না হয়, বরং কারও অন্য কোনও রকমের হক নষ্ট করা হয়ে থাকে, যেমন কাউকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হল। এতে তার জানের হক নষ্ট করা হয়েছে। অথবা কাউকে গাল দেওয়া হয়েছে, তার নামে, অপবাদ ছড়ানো হয়েছে। এর দ্বারা তার ইজ্জতের হক নষ্ট হয়েছে। এরকম ক্ষেত্রে কর্তব্য তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। আর যদি সে মারা গিয়ে থাকে, তবে তার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করা, যেন আল্লাহ তা'আলা তার পাপরাশি মাফ করে দেন। তার প্রতি রহমত করেন, তাকে কবরে শান্তিতে রাখেন, তাকে জান্নাতবাসী করেন ইত্যাদি। এরূপ দু'আ করতে থাকলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ হতে ক্ষমার ব্যবস্থা করে দেবেন।
তারপর ইমাম নববী রহ. বলেন, তাওবা ওয়াজিব হওয়ার সপক্ষে কুরআন ও সুন্নাহে প্রচুর দলীল আছে এবং আছে ইজমা' । তিনি এস্থলে তিনটি আয়াত উল্লেখ করেছেন।
তাওবা সম্পর্কিত কতিপয় আয়াতঃ
এক নং আয়াত
قَالَ الله تَعَالَى: {وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [النور: 31]
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। নূরঃ ৩১
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সকল মু'মিনকে তাওবা করার হুকুম দিয়েছেন। বলাবাহুল্য, নবী-রাসূলগণ ছাড়া আর কোনও মানুষই মা'সুম ও নিষ্পাপ নয়। প্রত্যেকের দ্বারাই ছোট-বড় গুনাহ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। ফলে কারোরই নিজেকে নিষ্পাপ ভাবার সুযোগ নেই। আর বাস্তবিকপক্ষে আমাদের দ্বারা তো হামেশাই নানারকম গুনাহ হয়ে থাকে। অনিচ্ছাকৃত তো বটেই, ইচ্ছাকৃতভাবেও আমরা অনেক গুনাহ করে ফেলি। নবী-রাসূলগণ মাসুম হওয়া সত্ত্বেও তাওবা-ইস্তিগফার করতেন। আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- "আমি রোজ একশ বার তাওবা করি"। গুনাহ না থাকা সত্ত্বেও যখন তিনি রোজ একশ বার তাওবা করতেন, তখন আমাদের কী পরিমাণ তাওবা করা উচিত? আমাদের গোটা অস্তিত্বই তো পাপে পঙ্কিল। রাশি-রাশি পাপের বোঝা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের উচিত, উঠতে-বসতে সর্বক্ষণ তাওবা ইস্তিগফারে রত থাকা।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, তাওবা করলে তোমরা সফল হতে পারবে। নিশ্চয়ই মুমিনের সফলতা তাওবার মধ্যেই নিহিত। কেননা তাওবা না করলে বিপুল পাপের বোঝা নিয়ে কবরে যেতে হবে। আর যার পুণ্য অপেক্ষা পাপের ওজন বেশি হবে, তার ঠিকানা জাহান্নাম। জাহান্নামে যাওয়া মানবজীবনের চরম ব্যর্থতা। সফল ও কৃতকার্য কেবল সেই, যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতের অধিকারী হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
{فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ} [آل عمران: 185]
অর্থঃ অতঃপর যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। আলু ইমরানঃ ১৮৫
এই সফলতা লাভের একমাত্র উপায় ইহজীবনে নিজেকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করা। আর সেজন্যই তাওবার ব্যবস্থা।
দুই নং আয়াত
وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ} [هود: 3]
অর্থঃ এবং এই (পথনির্দেশ দেয়) যে, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর অভিমুখী হও।- হুদঃ ০৩
ব্যাখ্যা
এ আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা মু'মিনদেরকে তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তাওবা করার হুকুম দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর 'রব্ব' নামটির উল্লেখ দ্বারা ইশারা করছেন যে, যেই মহান প্রতিপালক তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং জীবন ধারণের যাবতীয় উপকরণ দিয়ে তোমাদের প্রতিপালন করছেন, তোমাদের তো কর্তব্য তাঁর শোকরগুযার ও অনুগত হয়ে থাকা। সর্বক্ষণ তাঁর অসংখ্য নি'আমতের ভেতর ডুবে থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তোমরা তাঁর নাফরমানী করছ? এ তোমাদের চরম অকৃতজ্ঞতা। তোমরা এর থেকে ক্ষান্ত হও। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং সমস্ত পাপাচার ছেড়ে দিয়ে তাঁর অভিমুখী হয়ে যাও। যেই মহান প্রতিপালক এতকিছু নি'আমতের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালন করছেন, তিনি যে অতিশয় দয়ালু তাতে সন্দেহ আছে কি? তোমরা যদি খাঁটি মনে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তবে অবশ্যই তিনি নিজ দয়ায় তোমাদের যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَارَا
অর্থ : নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।- নুহঃ ১০
“অতিশয় ক্ষমাশীল” বলে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করছেন যে, তোমরা যত বড় ও যত বিপুল গুনাহই কর না কেন, হতাশার কোনও কারণ নেই। তিনি সব গুনাহই ক্ষমা করে দেবেন। অন্য এক আয়াতে তিনি সুস্পষ্ট আশ্বাসবাণী শোনান যে-
قُلْ يَاعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থ : হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার উপর সীমালংঘন করেছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।- যুমারঃ ৫৩
তিন নং আয়াত
وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحا} [التحريم: 8]
অর্থ : হে মুমিনগণ! আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা কর। তাহরীমঃ ০৮
“তাওবাতুন নাসূহ” কাকে বলে
এ আয়াতে যে 'তাওবাতুন-নাসূহ' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযি. ও উবাঈ ইবনে কা'ব রাযি. বলেন, "তাওবাতুন-নাসূহ' হল গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং তারপর আর সেদিকে ফিরে না যাওয়া, যেমন দুধ দোয়ানোর পর তা আর ওলানের ভেতর ফিরে যায় না।
হাসান বসরী রহ. বলেন, অতীত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং পুনরায় তাতে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ হওয়াকে তাওবাতুন-নাসূহ বলে।
কালবী রহ. বলেন, মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করা, অন্তরে অনুতপ্ত হওয়া এবং শারীরিকভাবে গুনাহ থেকে নিবৃত্ত হওয়া এই তিনের সমষ্টিই তাওবাতুন-নাসূহ।
ভাষা ভিন্ন হলেও সবগুলো ব্যাখ্যার সারকথা একই। অর্থাৎ খাঁটি মনে তাওবা করা। যে ব্যক্তি খাঁটি মনে তাওবা করবে, সে অবশ্যই পাপের দরুন মনে মনে অনুতপ্ত হবে, মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, গুনাহ পরিহার করবে এবং পুনরায় তাতে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ হবে।
সুতরাং তাওবা করার পর প্রত্যেকের কর্তব্য নিজ সংকল্প রক্ষা করা। অর্থাৎ নিজেকে সংশোধন করে সৎকর্মে লিপ্ত থাকা এবং পুনরায় পাপের পথে ফিরে না যাওয়া। এরূপ করতে পারলে সেটাই হবে তার তাওবাতুন-নাসূহ। হ্যাঁ, এরপরও পদস্খলন ঘটা অসম্ভব নয়। মানবস্বভাব বড়ই দুর্বল। কাজেই যদি কখনও পদস্খলন ঘটেই যায় এবং একই গুনাহ আবারও হয়ে যায়, তখনও কর্তব্য হবে ফের তাওবার আশ্রয় নেওয়া এবং তাতেও তাওবার সবগুলো শর্ত রক্ষা করা। এভাবে যদি বারবার সংকল্প টুটে যায়, তবে বারবারই তাওবা করবে এবং নতুনভাবে সংকল্পবদ্ধ হবে। তাতে আশা করা যায়, গুনাহ মাফ হওয়ার সাথে সাথে এক পর্যায়ে সংকল্প রক্ষারও তাওফীক হয়ে যাবে।
১৩। তাওবা সম্পর্কিত হাদীছ; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশি বেশি তাওবাঃ 
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! আমি দৈনিক সত্তর বারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাঁর কাছে তাওবা করি– বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ৬৩০৭)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! আমি দৈনিক সত্তর বারেরও বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাঁর কাছে তাওবা করি– বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ৬৩০৭)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
قَالَ العلماءُ: التَّوْبَةُ وَاجبَةٌ مِنْ كُلِّ ذَنْب، فإنْ كَانتِ المَعْصِيَةُ بَيْنَ العَبْدِ وبَيْنَ اللهِ تَعَالَى لاَ تَتَعلَّقُ بحقّ آدَمِيٍّ فَلَهَا ثَلاثَةُ شُرُوط:
أحَدُها: أَنْ يُقلِعَ عَنِ المَعصِيَةِ.
والثَّانِي: أَنْ يَنْدَمَ عَلَى فِعْلِهَا.
والثَّالثُ: أَنْ يَعْزِمَ أَنْ لا يعُودَ إِلَيْهَا أَبَدًا.
فَإِنْ فُقِدَ أَحَدُ الثَّلاثَةِ لَمْ تَصِحَّ تَوبَتُهُ.
وإنْ كَانَتِ المَعْصِيةُ تَتَعَلقُ بآدَمِيٍّ فَشُرُوطُهَا أرْبَعَةٌ: هذِهِ الثَّلاثَةُ، وأَنْ يَبْرَأَ مِنْ حَقّ صَاحِبِها، فَإِنْ كَانَتْ مالًا أَوْ نَحْوَهُ رَدَّهُ إِلَيْه، وإنْ كَانَت حَدَّ قَذْفٍ ونَحْوَهُ مَكَّنَهُ مِنْهُ أَوْ طَلَبَ عَفْوَهُ، وإنْ كَانْت غِيبَةً استَحَلَّهُ مِنْهَا. ويجِبُ أَنْ يَتُوبَ مِنْ جميعِ الذُّنُوبِ، فَإِنْ تَابَ مِنْ بَعْضِها صَحَّتْ تَوْبَتُهُ عِنْدَ أهْلِ الحَقِّ مِنْ ذلِكَ الذَّنْبِ وبَقِيَ عَلَيهِ البَاقي. وَقَدْ تَظَاهَرَتْ دَلائِلُ الكتَابِ والسُّنَّةِ، وإجْمَاعِ الأُمَّةِ عَلَى وُجوبِ التَّوبةِ.
قَالَ الله تَعَالَى: {وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [النور: 31]، وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ} [هود: 3]، وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحا} [التحريم: 8].
قَالَ العلماءُ: التَّوْبَةُ وَاجبَةٌ مِنْ كُلِّ ذَنْب، فإنْ كَانتِ المَعْصِيَةُ بَيْنَ العَبْدِ وبَيْنَ اللهِ تَعَالَى لاَ تَتَعلَّقُ بحقّ آدَمِيٍّ فَلَهَا ثَلاثَةُ شُرُوط:
أحَدُها: أَنْ يُقلِعَ عَنِ المَعصِيَةِ.
والثَّانِي: أَنْ يَنْدَمَ عَلَى فِعْلِهَا.
والثَّالثُ: أَنْ يَعْزِمَ أَنْ لا يعُودَ إِلَيْهَا أَبَدًا.
فَإِنْ فُقِدَ أَحَدُ الثَّلاثَةِ لَمْ تَصِحَّ تَوبَتُهُ.
وإنْ كَانَتِ المَعْصِيةُ تَتَعَلقُ بآدَمِيٍّ فَشُرُوطُهَا أرْبَعَةٌ: هذِهِ الثَّلاثَةُ، وأَنْ يَبْرَأَ مِنْ حَقّ صَاحِبِها، فَإِنْ كَانَتْ مالًا أَوْ نَحْوَهُ رَدَّهُ إِلَيْه، وإنْ كَانَت حَدَّ قَذْفٍ ونَحْوَهُ مَكَّنَهُ مِنْهُ أَوْ طَلَبَ عَفْوَهُ، وإنْ كَانْت غِيبَةً استَحَلَّهُ مِنْهَا. ويجِبُ أَنْ يَتُوبَ مِنْ جميعِ الذُّنُوبِ، فَإِنْ تَابَ مِنْ بَعْضِها صَحَّتْ تَوْبَتُهُ عِنْدَ أهْلِ الحَقِّ مِنْ ذلِكَ الذَّنْبِ وبَقِيَ عَلَيهِ البَاقي. وَقَدْ تَظَاهَرَتْ دَلائِلُ الكتَابِ والسُّنَّةِ، وإجْمَاعِ الأُمَّةِ عَلَى وُجوبِ التَّوبةِ.
قَالَ الله تَعَالَى: {وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [النور: 31]، وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ} [هود: 3]، وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحا} [التحريم: 8].
13 - وعن أبي هريرةَ - رضي الله عنه - قَالَ: سمعْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «واللهِ إِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللهَ وأَتُوبُ إِلَيْه فِي اليَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً». رواه البخاري. (1)
হাদীস নং: ১৪
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ২ তাওবা।
১৪। তাওবা করা উচিত বারবার 
হযরত আগার ইবনে ইয়াসার মুযানী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি রোজ একশ' বার তাওবা করি- মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ২৭০২)
হযরত আগার ইবনে ইয়াসার মুযানী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি রোজ একশ' বার তাওবা করি- মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ২৭০২)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
14 - وعن الأَغَرِّ بنِ يسار المزنِيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، تُوبُوا إِلى اللهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ، فَإنِّي أتُوبُ فِي اليَوْمِ مِائةَ مَرَّةٍ». رواه مسلم. (1)

তাহকীক:
 হাদীসের ব্যাখ্যা
হাদীসের ব্যাখ্যাহাদীস নং: ১৫
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ২ তাওবা।
১৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায় 
তোমাদের ওই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি আনন্দিত হন, যে ব্যক্তি তার উটটি ফিরে পেয়েছে, যেটিকে কিনা সে হারিয়ে ফেলেছিল মরুভূমিতে - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৬৩০৯,মুসলিম হাদীস নং ২৭৪৭)
সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায়, যখন সে তাঁর কাছে তাওবা করে, তোমাদের ওই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি আনন্দিত হন, যে কোনও মরুভূমিতে তার সওয়ারীর উপর ছিল। সেটি তার কাছ থেকে পালিয়ে গেল, অথচ তার পানাহার সামগ্রী সেটির পিঠে। সে সওয়ারীটির ব্যাপারে হতাশ হয়ে গেল। তারপর একটা গাছের কাছে আসল এবং তার ছায়ায় শুয়ে পড়ল। সে তো তার সওয়ারীর ব্যাপারে হতাশ। এভাবে সে সেখানে পড়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ দেখতে পেল সওয়ারীটি তার কাছে দাঁড়ানো। সে তার লাগাম ধরল। তারপর আনন্দের আতিশয্যে বলে উঠল, হে আল্লাহ! তুমি আমার গোলাম আর আমি তোমার মনিব। আনন্দের আতিশয্যে সে ভুল বলে ফেলল।
তোমাদের ওই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি আনন্দিত হন, যে ব্যক্তি তার উটটি ফিরে পেয়েছে, যেটিকে কিনা সে হারিয়ে ফেলেছিল মরুভূমিতে - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৬৩০৯,মুসলিম হাদীস নং ২৭৪৭)
সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায়, যখন সে তাঁর কাছে তাওবা করে, তোমাদের ওই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি আনন্দিত হন, যে কোনও মরুভূমিতে তার সওয়ারীর উপর ছিল। সেটি তার কাছ থেকে পালিয়ে গেল, অথচ তার পানাহার সামগ্রী সেটির পিঠে। সে সওয়ারীটির ব্যাপারে হতাশ হয়ে গেল। তারপর একটা গাছের কাছে আসল এবং তার ছায়ায় শুয়ে পড়ল। সে তো তার সওয়ারীর ব্যাপারে হতাশ। এভাবে সে সেখানে পড়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ দেখতে পেল সওয়ারীটি তার কাছে দাঁড়ানো। সে তার লাগাম ধরল। তারপর আনন্দের আতিশয্যে বলে উঠল, হে আল্লাহ! তুমি আমার গোলাম আর আমি তোমার মনিব। আনন্দের আতিশয্যে সে ভুল বলে ফেলল।
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
15 - وعن أبي حمزةَ أَنسِ بنِ مالكٍ الأنصاريِّ - خادِمِ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «للهُ أفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرهِ وقد أضلَّهُ في أرضٍ فَلاةٍ (1)». مُتَّفَقٌ عليه. (2) [ص:15]
وفي رواية لمُسْلمٍ: «للهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يتوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتهِ بأرضٍ فَلاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ، وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابهُ فأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتى شَجَرَةً فاضطَجَعَ في ظِلِّهَا وقد أيِسَ مِنْ رَاحلَتهِ، فَبَينَما هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِها قائِمَةً عِندَهُ، فَأَخَذَ بِخِطامِهَا (3)، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ: اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبدِي وأنا رَبُّكَ! أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ».
وفي رواية لمُسْلمٍ: «للهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يتوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتهِ بأرضٍ فَلاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ، وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابهُ فأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتى شَجَرَةً فاضطَجَعَ في ظِلِّهَا وقد أيِسَ مِنْ رَاحلَتهِ، فَبَينَما هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِها قائِمَةً عِندَهُ، فَأَخَذَ بِخِطامِهَا (3)، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ: اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبدِي وأنا رَبُّكَ! أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ».
হাদীস নং: ১৬
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ২ তাওবা।
১৬। আল্লাহ তাওবা কবুল করেন দিবারাত্র সর্বক্ষণ
হযরত আবু মুসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁর হাত রাতের বেলা প্রসারিত করেন, যাতে দিনের অপরাধী তাওবা করে (অথবা এর অর্থ- আল্লাহ তা'আলা দিনের অপরাধীকে ক্ষমা করার জন্যে/তার তাওবা কবুল করার জন্যে রাতের বেলা হাত প্রসারিত করেন) এবং দিনের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতের অপরাধী তাওবা করে (অথবা এর অর্থ- আল্লাহ তা'আলা রাতের অপরাধীকে ক্ষমা করার জন্যে/তার তাওবা কবুল করার জন্যে দিনের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন), যে যাবত না পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হয় - মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ২৭৫৯)
হযরত আবু মুসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁর হাত রাতের বেলা প্রসারিত করেন, যাতে দিনের অপরাধী তাওবা করে (অথবা এর অর্থ- আল্লাহ তা'আলা দিনের অপরাধীকে ক্ষমা করার জন্যে/তার তাওবা কবুল করার জন্যে রাতের বেলা হাত প্রসারিত করেন) এবং দিনের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতের অপরাধী তাওবা করে (অথবা এর অর্থ- আল্লাহ তা'আলা রাতের অপরাধীকে ক্ষমা করার জন্যে/তার তাওবা কবুল করার জন্যে দিনের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করেন), যে যাবত না পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হয় - মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ২৭৫৯)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
16 - وعن أبي موسَى عبدِ اللهِ بنِ قَيسٍ الأشْعريِّ - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنَّ الله تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بالليلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ، ويَبْسُطُ يَدَهُ بالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِها». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ১৭
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ২ তাওবা।
১৭। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগে তাওবা করবে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন- মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ২৭০৩)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
17 - وعن أبي هُريرةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِها تَابَ اللهُ عَلَيهِ». رواه مسلم. (1)
হাদীস নং: ১৮
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ২ তাওবা।
১৮। যখন তাওবা কবুল হয় নাঃ 
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না তার প্রাণ কণ্ঠাগত হয় - তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি 'হাসান হাদীছ'। (তিরমিযী হাদীস নং ৩৫৩৭)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না তার প্রাণ কণ্ঠাগত হয় - তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি 'হাসান হাদীছ'। (তিরমিযী হাদীস নং ৩৫৩৭)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
18 - وعن أبي عبد الرحمان عبد الله بنِ عمَرَ بنِ الخطابِ رضيَ اللهُ عنهما، عن النَّبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إِنَّ الله - عز وجل - يَقْبَلُ تَوبَةَ العَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ (1)». رواه الترمذي، (2) وَقالَ: «حديث حسن».
হাদীস নং: ১৯
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ২ তাওবা।
১৯। তাওবার দরজা প্রসঙ্গ
যির ইবনে হুবায়শ রাহঃ বলেন, আমি সাফওয়ান ইবনে আস্সাল রাযি.-এর কাছে মোজার উপর মাসাহ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে আসলাম। তিনি বললেন, হে যির, তুমি কি জন্য এসেছ? আমি বললাম, ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে। তিনি বললেন, ফিরিশতাগণ তালিবে ইলমের জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেয়, সে যা সন্ধান করে তার প্রতি সন্তুষ্টিতে। আমি বললাম, মলমূত্র ত্যাগের পর (ওযুকালে) মোজার উপর মাসাহ করা সম্পর্কে আমার অন্তরে খটকা দেখা দিয়েছে। আপনি তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের একজন। তাই আপনার কাছে জিজ্ঞেস করতে এসেছি। আপনি কি তাঁকে এ বিষয়ে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি আমাদেরকে হুকুম করতেন, যখন সফরে থাকি বা মুসাফির অবস্থায় থাকি, তখন যেন মলমূত্র ত্যাগ বা ঘুমানোর পর (ওযু করার সময়) আমাদের মোজা তিন দিন তিন রাত না খুলি। অবশ্য জানাবাতের কথা ভিন্ন।
তারপর আমি বললাম, আপনি কি তাঁকে মহব্বত সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে এক সফরে ছিলাম। একটা সময় আমরা তাঁর কাছে ছিলাম, এ অবস্থায় এক বেদুঈন তাঁকে উচ্চস্বরে ডাক দিল- হে মুহাম্মাদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মত আওয়াজেই তাকে সাড়া দিলেন- হুম। আমি তাকে তিরস্কার করে বললাম, তুমি তোমার আওয়াজ সংযত কর। তুমি তো নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আছ। আর তাঁর কাছে এরকম আওয়াজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি আওয়াজ নিচু করব না। তারপর সে বেদুঈন বলল, কোনও ব্যক্তি কোনও সম্প্রদায়কে ভালোবাসে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে তাদের সংগে মিলিত হয়নি (তার সম্পর্কে আপনি কী বলেন?) । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের দিন ব্যক্তি তার সংগেই থাকবে, যাকে সে ভালোবাসে। অতঃপর তিনি আমাদের হাদীছ শোনাতে থাকলেন। একপর্যায়ে তিনি পশ্চিম দিকে একটি দরজার কথা উল্লেখ করলেন, যার প্রস্থ কোনও আরোহীর চল্লিশ বা সত্তর বছর চলা পরিমাণ। অথবা বললেন, যার প্রস্থে একজন আরোহী চল্লিশ বা সত্তর বছর (একটানা) চলতে পারে। হাদীছটির এক বর্ণনাকারী সুফয়ান (ইবন উয়াইনা) বলেন, (দরজাটি) শামের দিকে। আল্লাহ তাআলা সেটি উন্মুক্তরূপে সৃষ্টি করেছেন ওইদিন, যেদিন তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সেটি বন্ধ করা হবে না, যাবত না পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হয়।
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী ও অন্যান্যগন। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীস। (তিরমিযী হাদীস নং ৩৫৩৫)
যির ইবনে হুবায়শ রাহঃ বলেন, আমি সাফওয়ান ইবনে আস্সাল রাযি.-এর কাছে মোজার উপর মাসাহ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে আসলাম। তিনি বললেন, হে যির, তুমি কি জন্য এসেছ? আমি বললাম, ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে। তিনি বললেন, ফিরিশতাগণ তালিবে ইলমের জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেয়, সে যা সন্ধান করে তার প্রতি সন্তুষ্টিতে। আমি বললাম, মলমূত্র ত্যাগের পর (ওযুকালে) মোজার উপর মাসাহ করা সম্পর্কে আমার অন্তরে খটকা দেখা দিয়েছে। আপনি তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের একজন। তাই আপনার কাছে জিজ্ঞেস করতে এসেছি। আপনি কি তাঁকে এ বিষয়ে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি আমাদেরকে হুকুম করতেন, যখন সফরে থাকি বা মুসাফির অবস্থায় থাকি, তখন যেন মলমূত্র ত্যাগ বা ঘুমানোর পর (ওযু করার সময়) আমাদের মোজা তিন দিন তিন রাত না খুলি। অবশ্য জানাবাতের কথা ভিন্ন।
তারপর আমি বললাম, আপনি কি তাঁকে মহব্বত সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে এক সফরে ছিলাম। একটা সময় আমরা তাঁর কাছে ছিলাম, এ অবস্থায় এক বেদুঈন তাঁকে উচ্চস্বরে ডাক দিল- হে মুহাম্মাদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মত আওয়াজেই তাকে সাড়া দিলেন- হুম। আমি তাকে তিরস্কার করে বললাম, তুমি তোমার আওয়াজ সংযত কর। তুমি তো নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আছ। আর তাঁর কাছে এরকম আওয়াজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি আওয়াজ নিচু করব না। তারপর সে বেদুঈন বলল, কোনও ব্যক্তি কোনও সম্প্রদায়কে ভালোবাসে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে তাদের সংগে মিলিত হয়নি (তার সম্পর্কে আপনি কী বলেন?) । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের দিন ব্যক্তি তার সংগেই থাকবে, যাকে সে ভালোবাসে। অতঃপর তিনি আমাদের হাদীছ শোনাতে থাকলেন। একপর্যায়ে তিনি পশ্চিম দিকে একটি দরজার কথা উল্লেখ করলেন, যার প্রস্থ কোনও আরোহীর চল্লিশ বা সত্তর বছর চলা পরিমাণ। অথবা বললেন, যার প্রস্থে একজন আরোহী চল্লিশ বা সত্তর বছর (একটানা) চলতে পারে। হাদীছটির এক বর্ণনাকারী সুফয়ান (ইবন উয়াইনা) বলেন, (দরজাটি) শামের দিকে। আল্লাহ তাআলা সেটি উন্মুক্তরূপে সৃষ্টি করেছেন ওইদিন, যেদিন তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সেটি বন্ধ করা হবে না, যাবত না পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হয়।
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী ও অন্যান্যগন। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীস। (তিরমিযী হাদীস নং ৩৫৩৫)
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
19 - وعن زِرِّ بن حُبَيْشٍ، قَالَ: أَتَيْتُ صَفْوَانَ بْنَ عَسَّالٍ - رضي الله عنه - أسْألُهُ عَن الْمَسْحِ عَلَى الخُفَّيْنِ، فَقالَ: ما جاءَ بكَ يَا زِرُّ؟ فقُلْتُ: ابتِغَاء العِلْمِ، فقالَ: إنَّ المَلائكَةَ تَضَعُ أجْنِحَتَهَا لطَالبِ العِلْمِ رِضىً بِمَا يطْلُبُ. فقلتُ: إنَّهُ قَدْ حَكَّ في صَدْري المَسْحُ عَلَى الخُفَّينِ بَعْدَ الغَائِطِ والبَولِ، وكُنْتَ امْرَءًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَجئتُ أَسْأَلُكَ هَلْ سَمِعْتَهُ يَذكُرُ في ذلِكَ شَيئًا؟ قَالَ: نَعَمْ، كَانَ يَأْمُرُنا إِذَا كُنَّا سَفرًا - أَوْ مُسَافِرينَ - أَنْ لا نَنْزعَ خِفَافَنَا ثَلاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيالِيهنَّ إلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ، لكنْ مِنْ غَائطٍ وَبَولٍ ونَوْمٍ. فقُلْتُ: هَلْ سَمِعْتَهُ يَذْكرُ في الهَوَى شَيئًا؟ قَالَ: نَعَمْ، كُنّا مَعَ رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - في سَفَرٍ، فبَيْنَا نَحْنُ عِندَهُ إِذْ نَادَاه أَعرابيٌّ بصَوْتٍ لَهُ جَهْوَرِيٍّ (1): يَا مُحَمَّدُ، فأجابهُ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - نَحْوًا مِنْ صَوْتِه: «هَاؤُمْ (2)» فقُلْتُ لَهُ: وَيْحَكَ (3)! اغْضُضْ مِنْ صَوتِكَ فَإِنَّكَ عِنْدَ النَّبي - صلى الله عليه وسلم - وَقَدْ نُهِيتَ عَنْ هذَا! فقالَ: والله لاَ أغْضُضُ. قَالَ الأعرَابيُّ: المَرْءُ يُحِبُّ القَوْمَ وَلَمَّا يلْحَقْ بِهِمْ؟ قَالَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ يَومَ القِيَامَةِ». فَمَا زَالَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى ذَكَرَ بَابًا مِنَ المَغْرِبِ مَسيرَةُ عَرْضِهِ أَوْ يَسِيرُ الرَّاكبُ في عَرْضِهِ أرْبَعينَ أَوْ سَبعينَ عامًا - قَالَ سُفْيانُ أَحدُ الرُّواةِ: قِبَلَ الشَّامِ - خَلَقَهُ الله تَعَالَى يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاواتِ والأَرْضَ مَفْتوحًا للتَّوْبَةِ لا يُغْلَقُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْهُ. رواه الترمذي وغيره، (4) وَقالَ: «حديث حسن صحيح».

তাহকীক:
 হাদীসের ব্যাখ্যা
হাদীসের ব্যাখ্যাহাদীস নং: ২০
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ২ তাওবা।
২০। যতবড় পাপীই হোক, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন
হযরত আবু সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের পূর্বকালীন লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছিল। তারপরে সে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তাকে জনৈক রাহিব (খৃষ্টান সন্ন্যাসী)-এর খোঁজ দেওয়া হল। সে তার কাছে আসল এবং বলল যে, সে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছে তার কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে? রাহিব বললঃ না, তখন সে তাকেও হত্যা করল এবং তার দ্বারা একশ সংখ্যা পূর্ণ করল। তারপর পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় আলেম কে জানতে চাইল। তাকে জনৈক আলেমের সন্ধান দেওয়া হল। সে তার কাছে গিয়ে বলল যে, সে একশ জন লোককে হত্যা করেছে। তার কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কে বান্দা ও তাওবার মাঝখানে অন্তরায় সৃষ্টি করে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করে। তুমি তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদতে রত থাক। তুমি নিজ ভূমিতে ফিরে যেও না। কেননা সেটি একটি মন্দ জায়গা।
সুতরাং লোকটি রওয়ানা হয়ে গেল। যখন পথের মাঝখানে পৌঁছল, তার মৃত্যু এসে গেল। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতাদের মধ্যে বিবাদ লেগে গেল। রহমতের ফিরিশতাগণ বললেন, সে তাওবা করে এবং আন্তরিকভাবে আল্লাহর অভিমুখী হয়ে এসেছে। আর আযাবের ফিরিশতাগণ বললেন, সে কখনও কোনও ভালো কাজ করেনি। এ অবস্থায় তাদের কাছে এক ফিরিশতা মানুষের বেশে আসলেন। তাঁরা তাঁকে তাদের মধ্যে বিচারক বানালেন। তিনি বললেন, উভয় দিকের জমি পরিমাপ করে দেখ, সে কোন দিকের বেশি কাছে ছিল। সে সেই দিকেরই গণ্য হবে। তারা পরিমাপ করল। দেখতে পেল যেই স্থানে যেতে চেয়েছিল, সে তারই বেশি নিকটবর্তী । সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তাকে গ্রহণ করল- বুখারী ও মুসলিম।” (বুখারী হাদীস নং ৩৪৭০,মুসলিম হাদীস নং ২৭৬৬)
সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সে এক বিঘত পরিমাণ উৎকৃষ্ট জনপদটির নিকটবর্তী ছিল। সুতরাং তাকে সেই জনপদেরই একজন ধরা হল।
সহীহ বুখারীর অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা এই জমিকে হুকুম দিলেন- দূরবর্তী হও। আর ওই ভূমিকে হুকুম দিলেন- নিকটবর্তী হও। এবং বললেন, উভয়ের মধ্যে পরিমাপ কর। তারা তাকে এক বিঘত পরিমাণ ওই ভূমির নিকটবর্তী পেল। সুতরাং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।
অপর এক বর্ণনায় আছে, সে তার বুক ঠেলে ওই দিকে সরে গেল।
হযরত আবু সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের পূর্বকালীন লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছিল। তারপরে সে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তাকে জনৈক রাহিব (খৃষ্টান সন্ন্যাসী)-এর খোঁজ দেওয়া হল। সে তার কাছে আসল এবং বলল যে, সে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছে তার কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে? রাহিব বললঃ না, তখন সে তাকেও হত্যা করল এবং তার দ্বারা একশ সংখ্যা পূর্ণ করল। তারপর পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় আলেম কে জানতে চাইল। তাকে জনৈক আলেমের সন্ধান দেওয়া হল। সে তার কাছে গিয়ে বলল যে, সে একশ জন লোককে হত্যা করেছে। তার কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কে বান্দা ও তাওবার মাঝখানে অন্তরায় সৃষ্টি করে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করে। তুমি তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদতে রত থাক। তুমি নিজ ভূমিতে ফিরে যেও না। কেননা সেটি একটি মন্দ জায়গা।
সুতরাং লোকটি রওয়ানা হয়ে গেল। যখন পথের মাঝখানে পৌঁছল, তার মৃত্যু এসে গেল। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতাদের মধ্যে বিবাদ লেগে গেল। রহমতের ফিরিশতাগণ বললেন, সে তাওবা করে এবং আন্তরিকভাবে আল্লাহর অভিমুখী হয়ে এসেছে। আর আযাবের ফিরিশতাগণ বললেন, সে কখনও কোনও ভালো কাজ করেনি। এ অবস্থায় তাদের কাছে এক ফিরিশতা মানুষের বেশে আসলেন। তাঁরা তাঁকে তাদের মধ্যে বিচারক বানালেন। তিনি বললেন, উভয় দিকের জমি পরিমাপ করে দেখ, সে কোন দিকের বেশি কাছে ছিল। সে সেই দিকেরই গণ্য হবে। তারা পরিমাপ করল। দেখতে পেল যেই স্থানে যেতে চেয়েছিল, সে তারই বেশি নিকটবর্তী । সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তাকে গ্রহণ করল- বুখারী ও মুসলিম।” (বুখারী হাদীস নং ৩৪৭০,মুসলিম হাদীস নং ২৭৬৬)
সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সে এক বিঘত পরিমাণ উৎকৃষ্ট জনপদটির নিকটবর্তী ছিল। সুতরাং তাকে সেই জনপদেরই একজন ধরা হল।
সহীহ বুখারীর অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা এই জমিকে হুকুম দিলেন- দূরবর্তী হও। আর ওই ভূমিকে হুকুম দিলেন- নিকটবর্তী হও। এবং বললেন, উভয়ের মধ্যে পরিমাপ কর। তারা তাকে এক বিঘত পরিমাণ ওই ভূমির নিকটবর্তী পেল। সুতরাং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।
অপর এক বর্ণনায় আছে, সে তার বুক ঠেলে ওই দিকে সরে গেল।
مقدمة الامام النووي
2 - باب التوبة
20 - وعن أبي سَعيد سَعْدِ بنِ مالكِ بنِ سِنَانٍ الخدريِّ - رضي الله عنه: أنّ نَبِيَّ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكمْ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وتِسْعينَ نَفْسًا، فَسَأَلَ عَنْ أعْلَمِ أَهْلِ الأرضِ، فَدُلَّ عَلَى رَاهِبٍ، فَأَتَاهُ. فقال: إنَّهُ قَتَلَ تِسعَةً وتِسْعِينَ نَفْسًا فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوبَةٍ؟ فقالَ: لا، فَقَتَلهُ فَكَمَّلَ بهِ مئَةً، ثُمَّ سَأَلَ عَنْ أَعْلَمِ أَهْلِ الأَرضِ، فَدُلَّ عَلَى رَجُلٍ عَالِمٍ. فقَالَ: إِنَّهُ قَتَلَ مِائَةَ نَفْسٍ فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوْبَةٍ؟ فقالَ: نَعَمْ، ومَنْ يَحُولُ بَيْنَهُ وبَيْنَ التَّوْبَةِ؟ انْطَلِقْ إِلى أرضِ كَذَا وكَذَا فإِنَّ بِهَا أُناسًا يَعْبُدُونَ الله تَعَالَى فاعْبُدِ الله مَعَهُمْ، ولاَ تَرْجِعْ إِلى أَرْضِكَ فَإِنَّهَا أرضُ سُوءٍ، فانْطَلَقَ حَتَّى إِذَا نَصَفَ الطَّرِيقَ أَتَاهُ الْمَوْتُ، فاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ ومَلائِكَةُ العَذَابِ. فَقَالتْ مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ: جَاءَ تَائِبًا، مُقْبِلًا بِقَلبِهِ إِلى اللهِ تَعَالَى، وقالتْ مَلائِكَةُ العَذَابِ: إنَّهُ لمْ يَعْمَلْ خَيرًا قَطُّ، فَأَتَاهُمْ مَلَكٌ في صورَةِ آدَمِيٍّ فَجَعَلُوهُ بَيْنَهُمْ - أيْ حَكَمًا - فقالَ: قِيسُوا ما بينَ الأرضَينِ فَإلَى أيّتهما كَانَ أدنَى فَهُوَ لَهُ. فَقَاسُوا فَوَجَدُوهُ أدْنى إِلى الأرْضِ التي أرَادَ، فَقَبَضَتْهُ مَلائِكَةُ الرَّحمةِ». مُتَّفَقٌ عليه. (1) [ص:17]
وفي رواية في الصحيح: «فَكَانَ إلى القَريَةِ الصَّالِحَةِ أقْرَبَ بِشِبْرٍ فَجُعِلَ مِنْ أهلِهَا».
وفي رواية في الصحيح: «فَأَوحَى الله تَعَالَى إِلى هذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وإِلَى هذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي، وقَالَ: قِيسُوا مَا بيْنَهُما، فَوَجَدُوهُ إِلى هذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَهُ». وفي رواية: «فَنَأى بصَدْرِهِ نَحْوَهَا».
وفي رواية في الصحيح: «فَكَانَ إلى القَريَةِ الصَّالِحَةِ أقْرَبَ بِشِبْرٍ فَجُعِلَ مِنْ أهلِهَا».
وفي رواية في الصحيح: «فَأَوحَى الله تَعَالَى إِلى هذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وإِلَى هذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي، وقَالَ: قِيسُوا مَا بيْنَهُما، فَوَجَدُوهُ إِلى هذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَهُ». وفي رواية: «فَنَأى بصَدْرِهِ نَحْوَهَا».
