মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
১৯- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৯ টি
হাদীস নং: ৩৬৯৩
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৬৯৩। হযরত আবু বাকরা (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সংবাদ পাইলেন যে, পারস্যবাসীরা (পরলোকগত) কিার কন্যাকে তাহাদের শাসক (সম্রাজ্ঞী) নির্বাচিত করিয়াছে, তখন তিনি বলিলেনঃ সেই জাতি কখনও সফলতা অর্জন করিতে পারে না, যাহারা দেশ (রাষ্ট্র) পরিচালনার দায়িত্ব কোন মহিলার হাতে সোপর্দ করে। —বুখারী
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: لَمَّا بَلَغَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ قَدْ مَلَّكُوا عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى قَالَ: «لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمُ امْرَأَةً» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬৯৪
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৬৯৪। হযরত হারেস আশআরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ আমি তোমাদিগকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ করিতেছি। (১) মুসলমানদের জামাআত ও সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িত রাখ। (২) শাসকের আদেশ-নিষেধ মানিয়া চল । (৩) তাহার আনুগত্য কর (যাবৎ তাহার আদেশ শরীআতের বিধান মোতাবেক হয়)। (৪) হিজরত কর। (৫) আল্লাহর পথে জেহাদ কর। বস্তুতঃ যেই ব্যক্তি মুসলমানের দল হইতে এক বিঘত পরিমাণ বাহির হইয়া গেল, সে অবশ্যই নিজের গর্দান হইতে ইসলামের রশিটি খুলিয়া ফেলিল, যেই পর্যন্ত না সে ফিরিয়া আসে এবং পুনরায় উক্ত জামাআতের সাথে জড়িত হয়। আর যেই ব্যক্তি মানুষদিগকে জাহিলী যুগের (অমুসলিম) সংস্কৃতির দিকে আহ্বান করে, সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত, যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলিয়া ধারণাও করে। —আহমদ ও তিরমিযী
كتاب الإمارة والقضاء
الْفَصْل الثَّانِي
عَن الحارِثِ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ: بِالْجَمَاعَةِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَالْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ الْجَمَاعَةِ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَّا أَنْ يُرَاجِعَ وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثَى جَهَنَّمَ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬৯৫
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৬৯৫। হযরত যিয়াদ ইবনে কুসাইব আদভী বলেন, একদা আমি আবু বাকরা (রাঃ) -এর সাথে ইবনে আমেরের মিম্বরের নীচে বসা ছিলাম। তিনি ভাষণ দিতেছিলেন ; আর তাঁহার পরনে ছিল একখানা চিকন ও মিহিন কাপড়। ইহা দেখিয়া আবু বেলাল বলিল, তোমরা আমাদের আমীরের দিকে একটু তাকাইয়া দেখ, তিনি ফাসেকদের পোশাক পরিধান করিয়াছেন। এই কথা শুনিয়া আবু বাকরা (রাঃ) বাধা দিয়া বলিলেন, চুপ কর, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি ঐ বাদশাহকে অপমান ও তিরস্কার করে, যাহাকে আল্লাহ্ এই যমীনের বাদশাহ্ বানাইয়াছেন, আল্লাহ্ ও তাহাকে (অপমানকারীকে) অপমান করিবেন। —তিরমিযী এবং তিরমিযী বলিয়াছেন, এই হাদীসটি হাসান ও গরীব।
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَن زِيادِ بنِ كُسَيبٍ العَدَوِيِّ قَالَ: كُنْتُ مَعَ أَبِي بَكْرَةَ تَحْتَ مِنْبَرِ ابْنِ عَامِرٍ وَهُوَ يَخْطُبُ وَعَلَيْهِ ثِيَابٌ رِقَاقٌ فَقَالَ أَبُو بِلَال: انْظُرُوا إِلَى أَمِير نايلبس ثِيَابَ الْفُسَّاقِ. فَقَالَ أَبُو بَكْرَةَ: اسْكُتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «مَنْ أَهَانَ سُلْطَانَ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ أَهَانَهُ اللَّهُ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৬৯৬
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৩৬৯৬। হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীর মধ্যে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নাই। —শরহে সুন্নাহ্
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سِمْعَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ» . رَوَاهُ فِي شَرْحِ السّنة
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৭১৪
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১৪। হযরত আবু উমামা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি দশ বা ততোধিক লোকের অভিভাবক নিযুক্ত হইয়াছে, কিয়ামতের দিন সে গলায় শিকল পরা অবস্থায় উত্থিত হইবে। তাহার হাত তাহার নিজের গর্দানের সহিত বাঁধা অবস্থায় থাকিবে। তাহাকে এই অবস্থা হইতে একমাত্র তাহার নেক আমলই (ইন্সাফ ও ন্যায়নীতিই) মুক্ত করিতে পারিবে। অথবা তাহার কৃত গুনাহ্ (অপরাধ) তাহাকে ধ্বংস করিবে। নেতৃত্বের প্রথম অবস্থায় নিন্দা ও তিরস্কার, মধ্যম অবস্থায় লজ্জা এবং পরিশেষে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা ও অপমান ভোগ করিতে হয়।
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَا مِنْ رَجُلٍ يَلِي أَمْرَ عَشَرَةٍ فَمَا فَوْقَ ذَلِكَ إِلَّا أتاهُ اللَّهُ عزَّ وجلَّ مغلولاً يومَ القيامةِ يَدُهُ إِلَى عُنُقِهِ فَكَّهُ بِرُّهُ أَوْ أَوْبَقَهُ إِثْمُهُ أَوَّلُهَا مَلَامَةٌ وَأَوْسَطُهَا نَدَامَةٌ وَآخِرُهَا خِزْيٌ يومَ القيامةِ»
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৭১৫
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১৫। হযরত মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হযরত মুআবিয়াকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ হে মুআবিয়া। যদি তুমি কোন দিন শাসক পদে নিযুক্ত হও, তবে আল্লাহকে ভয় করিবে এবং শাসন পরিচালনায় ইন্সাফ (অর্থাৎ, ন্যায়নিষ্ঠা) রক্ষা করিয়া চলিবে। মুআবিয়া বলেন, হুযুরের এই উক্তির কারণে সেই দিন হইতে সর্বদা আমার এই ধারণা বদ্ধমূল হইয়াছিল যে, একদিন আমি নিশ্চয়ই এই দায়িত্বে নিয়োজিত হইব। শেষ পর্যন্ত এই পরীক্ষায় উপনীত হইলাম। (অর্থাৎ, শাসনভার গ্রহণ করিতে হইল।)
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَنْ مُعَاوِيَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مُعَاوِيَةُ إِنْ وُلِّيتَ أَمْرًا فَاتَّقِ اللَّهَ وَاعْدِلْ» . قَالَ: فَمَا زِلْتُ أَظُنُّ أَنِّي مُبْتَلًى بِعَمَلٍ لِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم حَتَّى ابْتليت
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৭১৬
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১৬। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ সত্তর সালের গোড়ার যুগ (-এর ফেতনা) হইতে এবং বাচ্চাদের নেতৃত্ব হইতে আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাও। উপরে বর্ণিত এই হাদীস ছয়টি ইমাম আহমদ তাঁহার মুসনাদে বর্ণনা করিয়াছেন। আর হযরত মুআবিয়ার বর্ণিত হাদীসটি বায়হাকী দালায়েলে নবুওত গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন।
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِينَ وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ» . رَوَى الْأَحَادِيثَ السِّتَّةَ أَحْمَدُ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ فِي «دَلَائِلِ النُّبُوَّة»
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৭১৭
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১৭। ইয়াহইয়া ইবনে হাশেম হইতে বর্ণিত, তিনি ইউনুস ইবনে আবু ইসহাক হইতে, তিনি তাঁহার পিতা হইতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ তোমরা যেই চরিত্রের হইবে, অনুরূপ চরিত্রের শাসক তোমাদের উপর নিয়োগ করা হইবে।
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَنْ يَحْيَى بْنِ هَاشِمٍ عَنْ يُونُسَ بْنِ أَبِي إِسْحَاقَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَمَا تَكُونُونَ كَذَلِك يُؤمر عَلَيْكُم»
তাহকীক:
হাদীস নং: ৩৭১৮
- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৭১৮। হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ নিশ্চয়ই বাদশাহ্ হইলেন যমীনে আল্লাহ্ তা'আলার ছায়াবিশেষ। নির্যাতিত মযলুম বান্দাগণ তাহার নিকট আশ্রয় কামনা করে; সুতরাং যদি তিনি ন্যায় নীতি অবলম্বন করেন, তবে তাহার জন্য রহিয়াছে পুরস্কার। আর প্রজাবৃন্দের কর্তব্য হইল, তাহার শোকর ও কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আর যদি তিনি যুলম ও নির্যাতনমূলক নীতি অবলম্বন করেন, তাহা হইলে গুনাহর বোঝা চাপাইবে তাহার মাথায় এবং প্রজাবৃন্দের উচিত তখন ধৈর্য ধারণ করা।
كتاب الإمارة والقضاء
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ السُّلْطَانَ ظِلُّ اللَّهِ فِي الْأَرْضِ يَأْوِي إِلَيْهِ كُلُّ مَظْلُومٍ مِنْ عِبَادِهِ فَإِذَا عَدَلَ كَانَ لَهُ الْأَجْرُ وَعَلَى الرَّعِيَّةِ الشُّكْرُ وَإِذَا جَارَ كَانَ عَلَيْهِ الْإِصْرُ وعَلى الرّعية الصَّبْر»
তাহকীক: