২৫০৭। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করিয়াছে এবং উহাতে অশ্লীল কথা বলে নাই বা অশ্লীল কার্য করে নাই, সে হজ্জ হইতে (বেগোনাহ হইয়া) ফিরিবে সেই দিনের ন্যায়, যে দিন তাহার মা তাহাকে প্রসব করিয়াছে। মোত্তাঃ

২৫০৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন এক উমরা অপর উমরা পর্যন্ত সময়ের জন্য কাফফারাস্বরূপ এবং কবুল করা হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন কিছুই নহে। মোত্তাঃ

২৫০৯। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন রমযান মাসের উমরা হজ্জের সমান। —মোত্তাঃ

২৫১০। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের পথে রাওহা নামক স্থানে এক উট আরোহী দলের সাক্ষাৎ পাইলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহারা কাহারা ? তাহারা বলিল, আমরা মুসলমান। অতঃপর তাহারা জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কে? তিনি বলিলেন : আমি আল্লাহর রাসুল (মুহাম্মাদ)। ইহা শুনিয়া একটি স্ত্রীলোক একটি শিশুকে উঠাইয়া ধরিল এবং বলিল, হুযূর ইহার কি হজ্জ হইবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তবে সওয়াব তোমার হইবে। -মুসলিম

২৫১১। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একবার খাসআম গোত্রের এক মহিলা জিজ্ঞাসা করিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আল্লাহর পক্ষ হইতে তাঁহার বান্দাদের উপর ফরয করা হজ্জ আমার পিতার প্রতি বর্তাইয়াছে, অথচ তিনি অতি বৃদ্ধ, বাহনের পিঠে বসিয়া থাকার ক্ষমতা তাঁহার নাই। সুতরাং আমি কি তাহার পক্ষ হইতে হজ্জ করিতে পারি? হুযুর বলিলেন হা ইহা বিদায় হজ্জের ঘটনা। —মোত্তাঃ

২৫১২। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া বলিল, হুযূর আমার ভগিনী হজ্জ করিতে মানত করিয়াছিলেন, কিন্তু উহা আদায় করার পূর্বে তিনি মারা গিয়াছেন। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন: তোমার ভগিনীর উপর কাহারও ঋণ থাকিলে তুমি উহা আদায় করিতে কিনা ? সে বলিল, নিশ্চয়ই। হুযুর বলিলেন, তবে আল্লাহর ঋণ আদায় কর। ইহা আদায়ের অধিক উপযোগী। মোত্তাঃ

২৫১৩। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: কোন পুরুষ যেন কখনও কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় না হয় এবং কোন স্ত্রীলোক যেন কখনও আপন কোন মাহরাম ব্যক্তির সাথে ব্যতীত একাকিনী ভ্রমণে বাহির না হয়। তখন এক ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হইয়াছে, আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজ্জে রওয়ানা হইয়াছে। হুযূর বলিলেন যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর। —মোত্তাঃ

২৫১৪। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, তিনি একদা নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জেহাদে যাওয়ার অনুমতি চাহিলেন। হুযুর বলিলেন: তোমাদের জেহাদ হইল হজ্জ। — মোত্তাঃ

২৫১৫। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: কোন স্ত্রীলোক যেন একদিন একরাত্রির পথ ভ্রমণ না করে কোন মাহরামের সাথে ব্যতীত। মোত্তাঃ

২৫১৬। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনাবাসীদের জন্য 'মীকাত' নির্ধারণ করিয়াছেন 'যুলহুলায়ফা'কে, শামবাসীদের জন্য 'জুহুফা' (রাবেগ)-কে, নজদবাসীদের জন্য 'কারনুল মানাযিল'কে এবং ইয়ামনবাসীদের জন্য 'ইয়ালামলাম'কে। এ সকল স্থান-এ সকল স্থানের লোকদের জন্য এবং এ সকল স্থান ব্যতীত অপর স্থানের লোক এই পথ দিয়া যাহারা আসিবে তাহাদের জন্য- যাহারা হজ্জ্ব বা উমরার ইচ্ছা রাখে। যাহারা এ সকল স্থানের (সীমার) ভিতরে হইবে, তাহাদের এতুরামের স্থান তাহাদের ঘর—এইরূপে এইরূপে (যাহারা যত নিকটে হইবে)—এমন কি, মক্কাবাসীরা এহরাম বাঁধিবে মক্কা হইতে। — মোত্তাঃ

২৫১৭। হযরত জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলিয়াছেন মদীনাবাসীদের মীকাত হইল 'ফুল্‌হুলায়ফা', অন্য পথে অর্থাৎ, শামের পথে গমন করিলে 'জুহফা' ইরাকবাসীদের মীকাত হইল 'জাতু-ইরক', নজদবাসীদের মীকাত হইল 'কারনুল মানাযিল' এবং ইয়ামনবাসীদের মীকাত হইল 'ইয়ালামলাম'। -মুসলিম

২৫১৮। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারিটি, উমরা করিয়াছেন, প্রত্যেকটি যিকা'দা মাসে হজ্জের সাথের উমরা ছাড়া। এক উমরা 'হুদায়বিয়া' হইতে যিকা'দা মাসে, এক উমরা পরবর্তী বৎসর ঠিকাদা মাসে, এক উমরা 'জি'রানা' হইতে—যেখানে তিনি হুনাইন যুদ্ধের গনীমত বণ্টন করিয়াছিলেন যিকা'দা মাসে এবং অপর উমরা (দশম হিজরীতে) তাহার হজ্জের সাথে। — মোত্তাঃ

২৫১৯। হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া --সাল্লাম (দশম হিজরীতে) হজ্জ করার পূর্বে যিকা'দা মাসে দুইবার উমরা করিয়াছেন। -বুখারী

২৫২০। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহ্ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করিয়াছেন (সুতরাং তোমরা হজ্জ করিবে। এ সময় হযরত আকরা ইবনে হারেস (রাঃ) দাঁড়াইয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ইহা কি প্রত্যেক বৎসরে? হুযূর বলিলেন, যদি আমি বলিতাম হ্যাঁ, তবে ফরয হইয়া যাইত, আর যদি ফরয হইয়া যাইত তোমরা উহা সম্পাদন করিতে না এবং করিতে পারিতেও না। হজ্জ একবার। যে ইহার অধিক করিল, সে স্বেচ্ছামূলক নফল কাজ করিল। —আহমদ, নাসায়ী ও দারেমী

২৫২১। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্ পৌঁছার পথ খরচের মালিক হইয়াছে, অথচ হজ্জ করে নাই, মরুক সে ইহুদী হইয়া বা নাসারা হইয়া—ইহাতে কিছু আসে যায় না। আর ইহা এই কারণেই যে, আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়াতা'আলা বলেন, “মানুষের প্রতি বায়তুল্লাহর হজ্জ ফরয, যে সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য লাভ করিয়াছে।” – তিরমিযী ইহা বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলিয়াছেন যে, ইহা গরীব এবং ইহার সনদে কথা রহিয়াছে। ইহার এক রাবী হেলাল ইবনে আব্দুল্লাহ্ মাজহুল ; অপর রাবী হারেস যয়ীফ।