ইয়া আল্লাহ! আমার ভিতরকে করুন বাহির থেকে উত্তম। আর বাহিরকেও করুন সুস্থ-সুন্দর। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ঐ সকল উত্তম বস্তু প্রার্থনা করি, যা আপনি মানুষকে দান করে থাকেন। যেমন- সম্পদ, সন্তান, পরিবার। আর আমি যেন না হই গোমরাহ বা গোমরাহকারী।১৯৫
ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার নির্বাচিত বান্দাদের মাঝে শামিল করুন, যাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল এবং যারা হবেন বরণীয় মেহমান। ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছে চাই এমন হৃদয়, যা আপনার মাধ্যমে নিশ্চিন্ত থাকে, যে আপনার সাথে সাক্ষাতের ইয়াকীন রাখে, যে আপনার ইচ্ছায় রাজি থাকে এবং আপনার দানে সন্তুষ্ট থাকে।১৯৬
ইয়া আল্লাহ! আপনারই জন্য স্থায়ী প্রশংসা যেমন আপনি স্থায়ী। আপনারই জন্য চিরন্তন প্রশংসা যেমন আপনি চিরন্তন। আপনারই জন্য ঐ গুণগান, যার বিস্তৃতির সীমা নেই আপনার ইচ্ছার আগে। (অর্থাৎ আপনার ইচ্ছার মতোই বিস্তৃত ও অসীম) আপনারই জন্য ঐ গুণগান যে গুণগানকারীর আর কোনো উদ্দেশ্য নেই আপনার সন্তুষ্টি ছাড়া। আপনারই প্রশংসা প্রতি শ্বাসে, প্রতি পলকে। ইয়া আল্লাহ! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের দিকে ধাবিত করুন এবং নিজ রহমতে আমাদের সর্বদিক থেকে রক্ষা করুন। ইয়া আল্লাহ! আমাকে দৃঢ়পদ রাখুন, যেন পিছলে না যাই। আমাকে হেদায়েত দিন, যেন গোমরাহ না হই।
ইয়া আল্লাহ! যেভাবে আপনি আমার ও আমার অন্তরের মাঝে পর্দা হয়েছেন, সেভাবেই আমার ও শয়তানের মাঝে, তার কর্মের মাঝে পর্দা হয়ে থাকুন।১৯৭ ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহ দান করুন, আমাদেরকে আপনার রিযিক থেকে বঞ্চিত কোরেন না। আর যে রিযিক আমাদের দান করেছেন, তাতে বরকত দিন। আমাদের অন্তরসমূহকে (মানুষের কাছে যা আছে তা থেকে) অমুখাপেক্ষী করুন আর আপনার কাছে যা আছে সে বিষয়ে লালায়িত করুন।১৯৮
ইয়া আল্লাহ! আমাকে ঐসব মানুষের মাঝে শামিল করুন, যারা আপনার উপর ভরসা করেছে আর আপনি তাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছেন; যারা আপনার কাছে হেদায়েত চেয়েছে আর আপনি তাদের হেদায়েত দিয়েছেন; যারা আপনার সাহায্য প্রার্থনা করেছে আর আপনি তাদের সাহায্য করেছেন।১৯৯
ইয়া আল্লাহ! আমার অন্তরের ওয়াসওয়াসা যেন হয় আপনার ভয় ও স্মরণ।২০০ (অর্থাৎ আপনার প্রতি এমন মগ্নতা নসীব করুন যেন মনে কোনো ওয়াসওয়াসা এলে তাও হয় ভয় ও স্মরণের।) আর আমার আকর্ষণ ও আগ্রহ যেন হয় ঐ বিষয়ের, যাতে আপনি রাজী ও খুশী। ইয়া আল্লাহ! সহজতা ও কাঠিন্য যা দ্বারাই আমাকে পরীক্ষা করুন সর্বাবস্থায় সত্য পথ ও ইসলামী শরীয়তের উপর আমাকে অটল রাখুন।২০১
ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছে সকল কিছুর পূর্ণ নেয়ামত প্রার্থনা করি এবং আপনি খুশি হওয়া পর্যন্ত ও খুশি হওয়ার পরও শোকরগোজারির তাওফীক প্রার্থনা করি। আর যেসব বিষয়ে বাছাই হতে পারে সেখানে আমার জন্য বাছাই করুন। আর বাছাই করুন২০২ শুধু সহজ-সহজ বিষয়; কঠিন বিষয় নয় হে দয়াময়!
ইয়া আল্লাহ! যিনি প্রভাতের উন্মেষ ঘটান, যিনি রাতকে করেছেন আরামের সময় এবং চন্দ্র-সূর্যকে করেছেন সময়নির্ধারক! আমাকে আপনার রাহে জিহাদের শক্তি দিন।২০৩
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই স্থায়ী ঈমান ও বিনয়ী হৃদয়। আপনার কাছে চাই উপকারী ইলম, আর আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, সত্য ইয়াকীন (বিশ্বাস)। প্রার্থনা করছি সঠিক দ্বীনদারী। প্রার্থনা করছি সকল বিপদ থেকে মুক্তি। আপনার কাছে চাই সর্বদা সুস্থতা ও নিরাপত্তা। আপনার কাছে চাই সুস্থতা ও নিরাপত্তার উপর শোকরগোজারীর তাওফীক। আর আপনার কাছে চাই মাখলুক থেকে অমুখাপেক্ষিতা।২২০ ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ঐ গুনাহ থেকে ক্ষমা চাই, যা থেকে তাওবা করে পুনরায় তাতে লিপ্ত হয়েছি। ক্ষমা চাই ঐ অঙ্গীকার সম্পর্কে, যা আপনার সাথে করার পর ভঙ্গ করেছি।২২১ ক্ষমা চাই আপনার ঐ সকল নেয়ামতের, যা দ্বারা শক্তি অর্জন করে আপনার নাফরমানীতে লিপ্ত হয়েছি। আর আপনার কাছে ক্ষমা চাই ঐ সকল নেক কাজের বিষয়ে, যা শুধু আপনারই জন্য করতে চাওয়ার পর তাতে অন্যকিছু (যেমন, খ্যাতি ও মর্যাদার লোভ, লৌকিকতা ইত্যাদি।) মিশ্রিত করেছি।২২২ ইয়া আল্লাহ! আমাকে অপদস্থ কোরেন না, নিশ্চয়ই আপনি আমার সম্পর্কে অবগত। আমাকে আঘাত দিয়েন না, নিশ্চয়ই আপনি আমার উপর সর্বদিক থেকে ক্ষমতাবান।২২৩
ইয়া আল্লাহ! সাত আসমানের মালিক! আরশে আযীমের মালিক! ইয়া আল্লাহ, আমার সকল প্রয়োজনে আপনি যথেষ্ট হোন, যেভাবে আপনি চান, যেখান থেকে চান তা পূরণ করুন।২২৪ (আমি পুরোপুরি আপনারই ইচ্ছায় সমর্পিত।) আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট আমার দ্বীনের বিষয়ে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট আমার দুনিয়ার বিষয়ে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট আমার সকল মাথাব্যথায়। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ঐ লোকের ব্যাপারে, যে আমার প্রতি জুলুম করে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ঐ লোকের ব্যাপারে যে আমাকে হিংসা করে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ঐ লোকের ব্যাপারে, যে আমার অনিষ্ট সাধনের চক্রান্ত করে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট মৃত্যুর সময়। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট কবরের সওয়ালের সময়। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট মীযানের (পাল্লার) কাছে। আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট পুলসিরাতে।২২৫ আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তারই উপর আমার ভরসা। আর তিনিই মালিক মহান আরশের।২২৬
ইয়া আল্লাহ! আপনারই প্রশংসা আপনার পরীক্ষা ও আপন সৃষ্টির প্রতি আপনার আচরণে, আপনারই প্রশংসা আপনার পরীক্ষা ও আমাদের ঘরওয়ালাদের প্রতি আপনার আচরণে,২০৪ আপনারই প্রশংসা আপনার পরীক্ষা ও বিশেষভাবে আমাদের প্রাণের বিষয়ে আপনার আচরণে, আপনারই প্রশংসা আমাদের হেদায়েত দেয়ার কারণে, আপনারই প্রশংসা আমাদের সম্মান দেয়ার কারণে, আপনারই প্রশংসা আমাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার কারণে, আপনারই প্রশংসা কুরআনের কারণে, আপনারই প্রশংসা পরিবার ও সম্পদের কারণে,২০৫ আপনারই প্রশংসা ক্ষমার কারণে, আপনারই প্রশংসা আপনি খুশি হওয়া পর্যন্ত, আপনারই প্রশংসা যখন আপনি খুশি হন। হে ঐ সত্তা, যিনি উপযুক্ত ভয় পাওয়ার এবং হে ঐ সত্তা, যিনি একমাত্র ক্ষমাকারী।২০৬
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি কুচক্রী বন্ধু থেকে, যার চোখ আমাকে দেখে আর অন্তর বিমুখ থাকে। গুণ দেখলে তা সমাহিত করে আর দোষ দেখলে প্রচার করে।২০৮ আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি ইবলীস ও তার বাহিনী থেকে । ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি চরম দারিদ্র্য ও অতি মুখাপেক্ষিতা থেকে।২০৯ ইয়া আল্লাহ! আমি আশ্রয় নিচ্ছি নারীদের ফিতনা থেকে।২১০ ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি কিয়ামতের দিন আমার দিক থেকে আপনার মুখ ফিরিয়ে নেয়া হতে। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি লাঞ্ছনাকারী কর্ম থেকে। আপনার কাছে আশ্রয় নিচ্ছি কষ্ট দানকারী সঙ্গী থেকে। আপনার কাছে আশ্রয় নিচ্ছি গাফিলকারী দীর্ঘ আশা হতে, আপনার আশ্রয় নিচ্ছি বিহ্বলকারী দারিদ্র্য থেকে। আপনার আশ্রয় নিচ্ছি উদ্ধতকারী ধনাঢ্যতা থেকে।২১১ ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তার মৃত্যু থেকে। আপনার আশ্রয় নিচ্ছি মনস্তাপের মরণ থেকে।২১২
ইয়া রব! ইয়া রব! ইয়া রব!২১৩ ইয়া আল্লাহ! ইয়া কাবীর (বড়)! ইয়া সামী (সর্বশ্রোতা)! ইয়া বাসীর (সর্বদ্রষ্টা)! হে ঐ সত্তা, যাঁর কোনো শরীক নেই, কোনো পরামর্শদাতা নেই! হে আলোকিত সূর্য ও চন্দ্রের স্রষ্টা! হে ভীত-বিপদগ্রস্ত আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয়! হে ছোট শিশুর রিযিকদাতা।২১৪ হে বিচূর্ণ হাড়ে জোড়াদানকারী! আমি আপনার কাছে আবেদন করছি বিপদগ্রস্ত মুখাপেক্ষীর আবেদন, অস্থির বিপদগ্রস্তের নিবেদন! আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আপনার আরশের উচ্চমর্যাদার গ্রন্থিসমূহের অসিলায় এবং আপনার কিতাবের রহমতের চাবিসমূহের অসিলায় প্রার্থনা করছি, কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত ও বেদনাহারক বানিয়ে দিন।২১৫
হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদেরকে দুনিয়াতে অমুক অমুক বিষয় দান করুন। (অমুক-অমুক বিষয় স্থলে দু‘আ পাঠকারী যেকোনো জায়েয দুনিয়াবী মাকসাদ চিন্তা করবে।)২১৬ হে প্রত্যেক নির্জনের স্বজন; প্রত্যেক নিঃসঙ্গের সঙ্গী! হে নিকটবর্তী, যে দূরে নয়, হে উপস্থিত, যে অনুপস্থিত নয়! হে বিজয়ী, যে পরাজিত নয়!২১৭ হে চিরজীবী, হে রক্ষাকর্তা, হে মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের মালিক! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমির জ্যোতি! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমির শোভা! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমির প্রতাপান্বিত প্রভু! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমি ধারণকারী! হে আকাশমণ্ডলী ও জমির অস্তিত্বদানকারী! হে আকাশমণ্ডলী ও ভূমির অস্তিত্ব রক্ষাকারী! হে মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের অধিকারী! হে ফরিয়াদীদের ফরিয়াদস্থল! শরণার্থীর শেষ আশ্রয়, অস্থিরজনের শান্তিদাতা! চিন্তাগ্রস্তের প্রশান্তিদাতা ও অপারগের প্রার্থনা মঞ্জুরকারী! হে দুর্দশাগ্রস্তের দুর্দশা দূরকারী! হে সর্বজগতের মাবুদ! হে সকল দয়ালুর বড় দয়ালু! আপনারই সমীপে সকল প্রয়োজন।২১৮ (আপনিই তো ছোট-বড় সকল প্রয়োজন পূরণকারী)।
ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি মহিমান্বিত স্রষ্টা। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল, অতি মেহেরবান! মহান আরশের অধিপতি। ইয়া আল্লাহ! আপনি তো মহান, দয়ালু, দাতা, আমাকে ক্ষমা করুন, করুণা করুন। আমাকে ‘আফিয়াত’ (সুস্থতা ও বিপদমুক্তি) দিন, রুযী দিন, আমার দোষ ঢেকে রাখুন, আমার ত্রুটি দূর করুন, আমাকে উচ্চতা দিন, হেদায়েত দিন, আমাকে গোমরাহ কোরেন না। আর হে সকল দয়ালুর বড় দয়ালু! নিজ দয়ায় আমাকে জান্নাতে দাখেল করুন। পরওয়ারদেগার! আমাকে আপন করে নিন। আমার অন্তরে আপনার প্রতি আমাকে নত করুন আর মানুষের চোখে আমাকে আপনি সম্মানিত করুন। আর কুস্বভাব থেকে আমাকে দূরে রাখুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের কাছে ঐ সব আমল চেয়েছেন, যার কোনো সাধ্য আমাদের নেই আপনার তাওফীক ছাড়া। সুতরাং আপনিই আমাদের ঐ সকল কাজের তাওফীক দিন, যা আমাদের প্রতি আপনাকে সন্তুষ্ট করবে।২১৯
দু'আর বিষয়সমূহ
38টি বিষয় পাওয়া গেছে